৮ কিলোমিটার সড়কে বদলে যাবে
একটি ইউনিয়নের অর্থনৈতিক চিত্র
ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম : আট কিলোমিটারের একটি বেড়িবাঁধ সড়কের কারণে বদলে যাবে একটি ইউনিয়নের অর্থনৈতিক অবস্থা, লাঘব হবে ওই ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী আরো দুই ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ। দীর্ঘকাল ধরে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসা মানুষের সেই ভোগান্তির অবসান ঘটতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের অদূরে আনোয়ারা উপজেলার ৩ নং রায়পুর ইউনিয়নে। বিশেষ করে ইউনিয়নের গহিরা উপকূলীয় ৮ কিলোমিটার এলাকার বঙ্গোপসাগরের পার্শ্ববর্তী মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সমাজকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝরের পর রেড়িবাঁধ নির্মাণ হলেও বর্ষা মৌসুমে সেই বেড়িবাঁধ দিয়ে হাঁটাচলা করা যেত না। অথচ উপকূলীয় এলাকা হওয়ার কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম মাছের ঘাট হওয়ায় এলাকার মৎস্যজীবীদের আহরিত মাছ বিপননের ক্ষেত্রে এই যোগাযোগ ব্যবস্থাই বড় বাধা হয়ে ছিল। রায়পুর ইউনিয়নের ৬০ হাজার অধিবাসীদের মধ্যে অধিকাংশই সাগরে মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। ইলিশ মৌসুমের কোন কোন সময অতিরিক্ত মাছ ধরা পড়লে জেলেরা তা বিপনন করতে গিয়ে লাভের চেয়ে ওল্টো লোকসানের সম্মুখীন হন এই অপ্রতুল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে। ফলে দীর্ঘদিন এই ভোগান্তি থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করলেও কোনো উপায় ছিল না সাধারণ মানুষের। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা নিজেদের অর্থে বেড়িবাঁধের উপর ইট বসানোর উদ্যোগ নিয়ে কিছুদূর করার পর তাও ভেস্তে যায়। ফলে কাঁচা বেড়িবাঁধ দিয়ে মাছ ও জেলেদের সরঞ্জাম পরিবহনের কোনো সুযোগ ছিল না। এতে বছরের পর বছর তাদের চরম ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
অবশেষে ২০১৮ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত, পাথরের ব্লক ও ৮ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধের উপরে ডাবল বা জোড়া ইটের সলিং প্রকল্প বাস্তবায়নে টেণ্ডার আহবান করে। আনোয়ারা প্রজেক্ট নামের এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বরাদ্দ হয় ৩৮০ কোটি টাকা। কিন্তু টেণ্ডার খোলার পর যেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজের জন্য চূড়ান্ত করা হয়, তারা ২ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু না করায় এলাকার মানুষের সেই দুর্ভোগ আরও দীর্ঘায়িত হয়।
প্রকল্পের একাশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রহমান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক গোলাম মাওলা রতন জুমবাংলাকে বলেন, কোভিট পরিস্থিতিসহ নানা কারণে প্রজেক্টের কাজ শুরু করা না গেলেও এখন পুরোদমে কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত করা হলেও ব্যয় বাড়ানো হয়নি। দিন দিন নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে এবার মেয়াদের আগেই বাকি কাজ শেষ হয়ে আসবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিন শরীফ জুমবাংলাকে বলেন, বেড়িবাঁধের উপর ইট বসানোর কারণে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আসবে, তার প্রভাব স্থানীয় অর্থনীতিতেও পড়বে। শুধু ৩ নম্বর রায়পুর ইউনিয়ন নয়, এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পার্শ্ববর্তী ২ নম্বর বারশত ইউনিয়ন ও ৪ নম্বর বটতলী ইউনিয়নেও। ফলে দীর্ঘদিন পরে হলেও গহিরা উপকূলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও বেড়িবাঁধ সড়কে ইটের সংযুক্ত সড়ক নির্মাণ হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতি আরো মজবুত হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
গহিরা উঠান্যার ঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত লাখ লাখ টন ইলিশ মাছ এই ঘাট থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এছাড়া সারাবছর অন্যান্য মাছও এখান থেকে আহরণ করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে ইলিশের মৌসুমে বৃষ্টিপাত হলেই বেড়িবাঁধ দিয়ে কোনো গাড়ি চলাচল করে না। সেক্ষেত্রে মাছের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে হয় জেলেদের। বেড়িবাঁধের সংস্কার ও বাঁধের উপরে ইট বসানোর ফলে আগামী মৌসুম থেকে এলাকার সাধারণ মানুষ ও মৎস্যজীবীদের ভোগান্তি কমে যাবে। এতে মাছের দামও বাড়তি পাবেন শিকারীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।