জুমবাংলা ডেস্ক : ভোলায় মাত্র তিন কিলোমিটার সড়কের পাশের গাছের ডালপালার কারণে চালু করা যাচ্ছে না প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক স্ট্যান্ডার্ড বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। এক বছর আগে এ সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও বর্তমানে অলস পড়ে আছে।
অন্যদিকে ১৯৮৪ সালে নির্মিত ৪০ বছরের পুরাতন লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ ও গ্রাহকদের। সামান্য বৃষ্টি-বাদলেই পুরাতন লাইনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্বল লাইনের কারণে প্রয়োজনীয় লোড নিতে না পারায় দিতে হচ্ছে লোডশেডিং। চলমান বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে গ্রাহকদের মুক্তির জন্য অলস পড়ে থাকা নতুন লাইনটি জরুরি ভিত্তিতে সচল করার দাবি গ্রাহকদের।
ভোলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল থেকে মাদরাসা বাজার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তারগুলো গাছের ডালপালার সঙ্গে সাপের মতো পেঁচিয়ে রয়েছে। অনেক স্থানে বিদ্যুতের খাম্বাগুলো ঢেকে গেছে রাস্তার পাশের গাছে।
ভোলার বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এক বছর আগে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩ কেবির ধারণ ক্ষমতার ৪২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত করে বিদ্যুৎ বিভাগ। অত্যাধুনিক স্ট্যান্ডার্ড লাইনে ৪০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোড নিতে পারবে। বর্তমানে এ লাইনের প্রায় ৩৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহের উপযোগী অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু জেলা সদরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল থেকে মাদরাসা বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের তার গাছের ডালপালায় জড়িয়ে থাকায় লাইনটি চালু করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ৪০ বছরের পুরনো লাইনে বোরহানউদ্দিন থেকে বিদ্যুৎ আনতে হচ্ছে।
আলী নগর মাদরাসা বাজার এলাকার গ্রাহক শামসুদ্দিন বলেন, সামান্য বাতাস হলে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে তারে। এই সুযোগে তখন বিদ্যুৎ নিয়ে যায়। এতে ঘরে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। আমরা দিনের পর দিন বিদ্যুৎ বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা আশাকরি দ্রুত গাছগুলো অপসারণ করে বিদ্যুতের সমস্যার নিরসন করবে বন বিভাগ।
গ্রাহক মাইনুল এহসান বলেন, আমাদের দ্বীপ, আমাদের গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, সেই বিদ্যুৎ প্রথম দিকে ভালো সেবা পেয়েছি। আজকে এক বছর ধরে আমারা বিদ্যুতের নানা সমস্যায় রয়েছি। সামান্য বাতাস হলে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। বিদ্যুতের লাইনগুলো গাছের ভিতর দিয়ে যাওয়ার কারণে সামান্য বাতাস হলে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেয়। এতে করে আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাই না। তাই দ্রুত বিদ্যুৎ লাইনের সমস্যা সমাধানের জন্য গাছগুলো দ্রুত অপসারণের দাবি জানাই।
এদিকে অত্যাধুনিক এ সঞ্চালন লাইনটি চালু না হওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। আকাশে মেঘ জমলে বা সামান্য বিজলি চমকালেই পুরনো লাইনটি অচল হয়ে জেলা সদর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুরনো লাইনে নেয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় লোডও। এতে বেড়েছে লোডশেডিং ও আর বিদ্যুতের যাওয়া আসা অতিষ্ঠ জেলা সদরের অর্ধ-লক্ষাধিক গ্রাহক।
চলমান তাপদাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বয়স্ক রোগী ও শিশুদের। বিদ্যুতের এমন দুরবস্থার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহক। লোকসান গুনতে হচ্ছে বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর। তাই দুর্ভোগ লাগবে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এসব গ্রাহকরা।
বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ওজোপাডিকো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ জানিয়েছেন, আমাদের রেন্টাল ৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্যান্ট বন্ধ হওয়ার কারণে বোরহানউদ্দিন থেকে বিদ্যুৎ নিচ্ছি। তবে লাইন পুরনো হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই নতুন একটি লাইন টানা হয়েছে। সেই লাইনটি বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাস টার্মিনাল থেকে মাদরাসা বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বন বিভাগের গাছের কারণে চালু করতে পারছি না। এই গাছগুলো দ্রুত অপসারণ করা গেলে ভোলা শহরে বিদ্যুৎ সমস্যা কিছুটা হলেও লাগব করা যাবে।
এ বিষয়ে ভোলার উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, বন বিভাগ ওই গাছগুলো অপসারণের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রির সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত গাছগুলো অপসারণের জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জেলা সদরের সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টটি বিকল হওয়ার পর ৪২ কিলোমিটার দূরের বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।