জুমবাংলা ডেস্ক : নানান কারণে বহুল আলোচিত বছর ছিল ২০১৯। তবে ফেনীর নুসারত, বরগুনার রিফাত শরীফ ও বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডে যে বর্বরতার নজির সৃষ্টি হয়েছে- তা সব মানুষের হৃদয়ে ঘটিয়েছে তীব্র রক্তক্ষরণ। গত ২৬ জুন রিফাত শরীফকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়।
যে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা সেই বরগুনা সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত রিফাতের ছোট বোন মৌ। ভাই হারানোর শোক নিয়ে মা-বাবার সেবা যত্ন আর সংসার দেখাশোনা করে সময় চলে তার। কলেজ যাওয়া হয় না আর।
সংসারে আয়ের কোনো উৎস নেই, রিফাত হত্যার পর খরচা হয়েছে সহায় সম্বল যা ছিল সব। এর ওপর এখন নিজের ও স্ত্রীর ওষুধের বাড়তি খরচা। এ অবস্থায় চরম দুর্দিন এখন রিফাতের পরিবারে।
এদিক, রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ হার্টের রোগী, রিঙ বসানো তার। একমাত্র ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর পর মা ডেইজি বেগমও অসুস্থ। রোগে শোকে তিনি এখন শয্যাশায়ী।
মঙ্গলবার বিকেলে রিফাতের বাবা বলেন, আমি সত্যি অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। মামলা ও পরিবার সামলাতে আমার হিমশিম খেতে হয়। আমি হার্টের রোগী, যা টুকটাক ব্যবসা বাণিজ্য ছিল, রিফাতের মৃত্যু পর সব শেষ। এখন আয়ের কোনো উৎস নেই। উপরন্ত প্রায় দু লাখ টাকারও বেশি ঋণের বোঝা মাথায়। ভরণ-পোষণই চলে না এমন অবস্থা আমাদের। আমার অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা চলে না, মেয়েটার কলেজে যাওয়া বন্ধ। আমার একমাত্র ছেলে রিফাত, ওকে নিয়েই আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা ছিল।’
এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমি চেয়েছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব, আমার অসহায়ত্বর কথা জানাব তাকে। কিন্তু সেরকম কোনো সুযোগ হয়নি। আমার মেয়েটার যদি একটা চাকরির ব্যবস্থা হতো তবে আমাদের তিনজনের সংসার অন্তত চলে যেত।
নিহত রিফাতের বোন ইসরাত জাহান মৌ বলেন, ভাইয়ার মৃত্যুর পর থেকে আমার কলেজে যাওয়া প্রায় বন্ধ। ভাইয়ার শোকে মা এখন আর বিছানা থেকেই উঠতে পারেন না। বাবা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় আমাদের চরম দুর্দিনে দিন কাটাতে হয়। আমার পড়াশোনা নিয়ে শঙ্কায় আছি। সংসারই চলে না, পড়ার খরচা কে দেবে? আমাদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে এলো না, এটা দুঃখজনক। অথচ খুনিদের কেউ কেউ ফ্রি আইনগত সহায়তা পায়। তাদের পাশে দাঁড়ায় মানবিক সংস্থা। আমার যদি একটা চাকরি হয় তবে আমি মা-বাবাকে নিয়ে খেয়ে পরে অন্তত বেঁচে থাকতে পারতাম।’
রিফাতের কথা তুলতেই কান্না জড়িত কণ্ঠে মা ডেইজী বেগম জানান, ছেলে হত্যার বিচার দেখে মরতে চাই। আমার এখন চিকিৎসা চলে না, খুব কষ্ট হয় আমাদের চলতে।
উল্লেখ্য, আলোচিত রিফাত হত্যাকাণ্ডের প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। ২০১৯ সালে দেশের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড ছিল বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা। ২৬ জুন সকালে বরগুনা কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড-রিফাত ফরায়েজী বাহিনী। ওই দিন বিকেলে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।