সুলতান মাহমুদ, বাসস: নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানার পানিপাড়া গ্রামে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়া উঠা অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব এখন অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। পর্যটকরা অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবকে পাখি মেলাস্থল হিসেবে অভিহিত করেছেন।
রিসোর্টে অবস্থিত সবুজ গাছ-গাছালিতে সারা বছরই বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি বসতে দেখা যায়। শীতকালে বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির অগনিত পাখির আগমন ঘটে এখানে। শীত মওসুমের বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ রিসোর্টের গাছে পাখি পড়ার দৃশ্য ও পাখির কিচির মিচির শব্দ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত দর্শকদের মোহিত করে।
রিসের্টের বিশাল আয়তনের পুকুরের মাঝখানে নির্মিত বোট আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে পাখিপ্রেমীরা বিভিন্ন দিক থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখির দৃশ্য উপভোগ করে থাকেন। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অতিথি পাখির কোলাহল থাকে এখানে। প্রায় প্রত্যেক দিন ঢাকা, খুলনা,ফরিদপুর, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসেন। মাঝেমধ্যে বিদেশী পর্যটকরা এখানে আসেন বলে জানালেন অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান খবির উদ্দিন আহমেদ। প্রাকৃতিক রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারির কারণে পাখি শিকার বা পাখিদের প্রতি বিরুপ আচরণ বন্ধ থাকায় এ রিসোর্টের গাছপালা এখন পাখিদের দখলে। খাদ্যের সন্ধানে সকালে বেরিয়ে পড়া পাখিগুলো বিকেল ৫টা থেকে ডানা মেলে এখানে আসতে থাকে। আকাশে ডানা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ছুটে এসে রিসোর্টের ভিতরকার গাছপালার ডালে বসা দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। সন্ধ্যা লাগার আগ মূহুর্তে গাছের ডালে পাখি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।
পাখি ও প্রকৃতি প্রেমিক অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সদস্য খবির উদ্দিন আহমেদ জানান,পর্যটকদের মনের খোরাক মেটাতে ও নির্মল আনন্দদানে প্রায় ৫০ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ রিসোর্ট ও গলফ ক্লাবটি।শহরের অধিবাসী তথা কর্মব্যস্ত মানুষ বিশেষ করে মহিলা ও শিশুরা এখানে ঘুরতে এসে প্রাকৃতিক পরিবেশের সবটুকু আনন্দ পেয়ে থাকেন।এ রিসোর্টে রয়েছে বড় বড় কয়েকটি পুকুর।পুকুর ভরা রয়েছে দেশী প্রজাতির মাছ।পুকুর বা জলাশয়ে ভেসে থাকা বিশাল আকৃতির মাছগুলোও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।পরিবারের সদস্য কিংবা স্বজনদের নিয়ে দীঘি আকৃতির পুকুরের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর জন্য জন্য রয়েছে সাম্পানের ন্যায় তৈরি নৌকা। রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মৎস্য শিকারীরা মাঝে-মধ্যে মাছ শিকার করে থাকেন এখানকার পুকুরে। রয়েছে সুইমিং পুল ও ঝুলন্ত সেতু। পর্যটকদের ক্লান্তি দূর করতে নৈসর্গিক রিসোর্টের বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের গাছ ও ফলদ বৃক্ষ।গোলাপ,বেলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফলের সুরভিত ঘ্রাণ রিসোর্টের পরিমন্ডল ছাড়িয়ে আশপাশের গ্রামে প্রত্যহ প্রবেশ করছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আপন মনে ঘুরাঘুরি করে থাকে।আমাদের দেশের মানুষের মতো পাখিরাও অতিথি পরায়ন। শীতের শুরুতে বিদেশী পাখিরা রিসোর্টে আসতে শুরু করলে দেশী প্রজাতির পাখিরা তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দেয়। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ট্যুরিজমের উপযোগী করা হলে এদেশে বিদেশী পর্যটকদের আগমন আরো বাড়বে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে মুজিব বাংলাদেশ ব্রান্ডিং ট্যুরিজমের জন্য মাইলফলক বলে তিনি জানান।
দূর-দূরান্তের পর্যটকদের জন্য রয়েছে রিসোর্ট অভ্যন্তরে খাওয়া ও রাতে আবাসনের ব্যবস্থা। দিনরাত সার্বক্ষণিক রয়েছে জোরদার নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা।সরকারি দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও সব শ্রেণী পেশার মানুষকে আনন্দ-বিনোদন দিতে শহুরে জীবন ছেড়ে অধিকাংশ সময় এখানে কাটান তিনি।তার রিসোর্ট ও গলফ ক্লাবে এসে মানুষ আনন্দ পেলে তিনিও আনন্দ পান বলে জানান সদা হাস্যোজ্জ্বল অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের কর্ণধার খবির উদ্দিন আহমেদ।
খুলনা থেকে অরুনিমা রিসোর্টে ঘুরতে এসেছেন সরকারি বিএল কলেজের দর্শন শেষ বর্ষের ছাত্রী খাদিজা খাতুন তন্বী জানান, প্রকৃতির মাঝে আনন্দ উপভোগের অন্যতম স্থান হচ্ছে অরুনিমা রিসোর্ট।প্রকৃতির সৌন্দর্য্যরে সবকিছুই এখানে আছে।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মুজাহিদ শুভ জানান, অরুনিমা রিসোর্ট হচ্ছে একের ভিতর শত অনুসঙ্গের সমাহার। পাখির টানে তিনি এখানে রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন। এটি তার দ্বিতীয়বার আসা।এখানকার প্রাকৃতিক অপরুপ দৃশ্য দেখার মতো। বিকেলে গাছ-গাছালির ডাল-পালায় সারিবদ্ধভাবে পাখি পড়ার দৃশ্য তাকে বারবার আকর্ষণ করে বলে তিনি জানান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতোকোত্তর ডিগ্রি নেয়া নাইম আবীর বলেন, ভিডিও এবং ফটোগ্রাফি আমার শখ। অরুনিমার যেখানে দাঁড়াই সেখানেই ছবিতোলার ফ্রেম হয়ে যায়।এ রিসোর্টে কাছ থেকে পাখি দেখা সত্যিই আনন্দের বিষয়।
অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান আহমেদ জানান, এখানকার এসএম সুলতান লাউন্স রুম ও চিত্রা কনভেনশন হল রুমে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের সভা,সেমিনার ও পার্টি আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের মধ্যে একমাত্র বেসরকারিভাবে স্থাপিত অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবে গলফ খেলারও সুব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।