শাহেদ আলী ইরশাদ : অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় মানুষের হাতে রেকর্ড পরিমাণ নগদ টাকা রয়েছে। ব্যাংক খাতে সৃষ্ট অজ্ঞাত এক আতঙ্কের কারণে মানুষের হাতে নগদ টাকার মজুদ বাড়ে। তবে হাতে থাকা বাড়তি এসব টাকা ব্যাংকে জমা রাখতে শুরু করেছেন অনেকেই। জুলাই মাসে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কিছুটা হলেও কাটছে।
ব্যাংকাররা বলেছেন, ২০২২ সালের নভেম্বরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ঋণ কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশের পর আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ফলে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা তুলে নিয়েছেন। এ ছাড়াও অর্থনীতিতে নানা রকম সংকট আমানতকারীদের আকর্ষণীয় বিনিয়োগের উৎসগুলোকে সীমিত করেছে। কিন্তু আমানতকারীরা কিছুটা সময় নিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নগদ টাকার নিরাপত্তার জন্য আবার ধীরে ধীরে ব্যাংকে ফিরছেন। আবার কিছু ব্যাংক আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে, যা আমানতকারীদের ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে উৎসাহী করেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক একটি গণমাধ্যমকে বলেন, মানুষের হাতে অনেক টাকা রয়েছে। আবার কিছু টাকা ব্যাংকে জমা হচ্ছে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের ব্যাংকে টাকা জমানো কমে গেছে। এছাড়াও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মানুষ নগদ টাকা ঘরে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার রেকর্ড গড়ে জুন মাসে। চলতি বছরের জুন শেষে মানুষের হাতে ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। ধীরে ধীরে মানুষ আবার টাকা ব্যাংকে জমা রাখা শুরু করেছেন। ফলে জুলাই মাসে কিছুটা কমে ২ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে মানুষের হাতের টাকা। এদিকে আমানতকারীদের ব্যাংকমুখী করতে চলতি বছরের ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় হাতের টাকা ব্যাংকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। জানা গেছে, ২০২২ সালের জুন মাসে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ২০২৩ সালের জুন মাসে ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছিল। ব্যাংকগুলোতে তীব্র ডলার সংকটের কারণে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। যার ফলে আর্থিক খাতে তারল্য হ্রাস পায়।
তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকা ছাপানো বৃদ্ধি এবং হুন্ডি তৎপরতার কারণে মানুষের মধ্যে হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক আমানত ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বেড়ে ১৬ লাখ ৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুলাই মাসে জমার পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। মেয়াদি আমানত বৃদ্ধি পেয়ে জুলাই মাসে ১৪ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। জুন মাসে ছিল ১৩ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়ী হিসাবে আমানত কিছুটা কমে জুলাই মাসে ১ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। জুন মাসে ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক আমানত ১৪ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে। যা ২০২২ সালের অক্টোবরে ১৪ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ছিল। ২০২২ সালের নভেম্বরেও ব্যাংক খাতে আমানত ছিল ১৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ২৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৫৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৯৮ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা এবং দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ২৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।