জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে আমরা যদি মহাবিশ্বের অতীতের ছবি দেখতে পাই, তাহলে ভবিষ্যতের ছবি কেন দেখা যাবে না? মনে করুন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস শুরুর আগে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি একেবারে সামনে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে তাদের ছবি তুলছি। একদম সামনে যে শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে, ধরো আমার থেকে ৩ মিটার দূরে, তার থেকে আলো আমার ক্যামেরায় আসতে ১০ ন্যানোসেকেন্ড (১ ন্যানোসেকেন্ড ১ সেকেন্ডের ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ভাগের ১ ভাগ) সময় লাগবে। তার মানে সেই শিক্ষার্থীকে আমি ১০ ন্যানোসেকেন্ড অতীতে দেখছি।
লাইনের একদম পেছনে যে শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে, হয়তো আমার থেকে ১০ মিটার দূরে, তার থেকে আলো আসতে সময় নিচ্ছে ৩৩ ন্যানোসেকেন্ড। কাজেই সেই শিক্ষার্থীকে আমি আরও অতীতে দেখছি। একই ছবিতে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন অতীতে দেখছি। ন্যানোসেকেন্ড সময়ের খুব অল্প অংশ, তাই আমরা এই ব্যাপারটা অগ্রাহ্য করে বলি ক্যামেরায় যে ছবি উঠেছে, তাতে সব শিক্ষার্থীকে একই সময়ে ধরা আছে।
কিন্তু কার্যত তো তা নয়, ওই ছবিতে শিক্ষার্থীদের অতীত ধরা আছে, শিক্ষার্থীরা যত দূরে আছে, তত অতীতে রয়েছে তারা।একইভাবে চাঁদ থেকে আলো আসতে এক সেকেন্ডের একটু বেশি সময় নেয়, চাঁদ এক সেকেন্ড আগে কী রকম দেখতে ছিল, সেটাই আমরা দেখি।
একইভাবে সূর্য থেকে আলো আসতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় নেয়, তাই আমরা সূর্যকেও তার অতীতে দেখছি। এ মুহূর্তে সূর্য কেমন দেখতে, সেটার জন্য আমাকে আরও ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় অপেক্ষা করতে হবে। কাজেই অতীত দেখার ব্যাপারটা শুধু যে জেমস ওয়েব দুরবিন করছে এমন নয়, এটি আমরাই সারাক্ষণ করে যাচ্ছি।
জেমস ওয়েব বহুদূরের গ্যালাক্সি দেখছে, যেখান থেকে আলো আসতে ১৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর লাগছে, অর্থাৎ সেই গ্যালাক্সি ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে কেমন দেখতে ছিল, তা–ই দেখছে। এই গ্যালাক্সি এখন কেমন দেখতে, তা আমরা জানি না (সেটা কোনো দিন জানাও যাবে না)।
এই অর্থে অতীত দেখা সম্ভব, ভবিষ্যৎ দেখা সম্ভব নয়—আমাদের রেফারেন্স বা নির্দেশ ফ্রেমে সেটি এখনো সংঘটিত হয়নি। সাধারণ আপেক্ষিকতা ব্যবহার করে মহাবিশ্বের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে একটি সূত্রে হয়তো গাঁথা সম্ভব, তবে আমাদের এই আলোচনার জন্য সেটি প্রয়োজনীয় নয়।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel