আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একটা গোটা শহর… চারদিকে কেবল বিড়াল আর বিড়াল। মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশের একটি শহরকে বলা হয়ে থাকে বিড়ালের শহর। কুচিং নামের এ শহরটি বিড়ালের শহর হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠার কারণ হলো পুরো শহরটিই বিড়ালে পরিপূর্ণ। শহরের রাস্তা, ফুটপাত, বাড়ির ছাদ, ট্রাফিক সিগন্যাল এবং পার্কগুলো সবখানেই শুধু বিড়াল আর বিড়াল। কিন্তু এ বিড়ালগুলো জীবন্ত নয়। বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা থেকে শহরের অধিবাসীরা তৈরি করেছেন এসব বিড়ালের ভাস্কর্য।
ধারণা করা হয়, শহরটির নাম ‘কুচিং’ শব্দটি এসেছে মালয়েশীয় শব্দ ‘কুইটিং’ থেকে, যার অর্থ ‘বিড়াল’। একইভাবে এটিও ধারণা করা হয়, এটি সম্ভবত চীনা শব্দ ‘কোচিন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘বন্দর’। অবশ্য স্থানীয় ইতিহাস অনুসারে শহরটির নামকরণ করা হয়েছে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ‘সুঙ্গাই কুচিং’ নামে একটি ছোট্ট নদীর নামানুসারে, ইংরেজিতে যেটি বিড়ালের নদী নামে পরিচিত। নদীটি বহুদিন আগেই ভরাট করা হয়ে গেছে এবং এর ওপর স্থাপনাও নির্মিত হয়েছে।
প্রায় ২০০ বছর আগে সারাওয়াক প্রদেশটি ব্রুনাইয়ের সালতানাতের একটি অংশ ছিল। কিন্তু পরে বিদ্রোহ দমনের ক্ষেত্রে সাহায্য করার পুরস্কারস্বরূপ ব্রিটিশ অভিযাত্রী জেমস ব্রুককে রাজ্যটি দিয়ে দেয়া হয়। ব্রুক এটিকে তার ব্যক্তিগত রাজ্য হিসেবে জাপানের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগ পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। একটি বহুল প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, যখন জেমস ব্রুক প্রথম কুচিংয়ে আসেন, তখন তিনি তার স্থানীয় গাইডকে শহরের নাম জিজ্ঞেস করেন। গাইড ধারণা করেছিলেন যে, জেমস ব্রুক বিড়ালের প্রতিই ইঙ্গিত করছেন। সে চিন্তা থেকেই তিনি ‘কুচিং’ নামটি বলেন। ১৮৪১ সালে ব্রুকের আগমনের সময় থেকেই শহরটির নাম হিসেবে ‘কুচিং’ নামটি ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
বিড়াল নিয়ে কুচিংয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনাটি হচ্ছে ক্যাট জাদুঘর, যার মধ্যে রয়েছে ৪ হাজারটি নিদর্শন এবং বিড়ালের স্মৃতিচিহ্ন। এখানে প্রাচীন মিশরের একটি বিড়াল এবং বোর্নেওতে প্রাপ্ত পাঁচ প্রজাতির বন্যবিড়ালও রয়েছে।
কুচিং এর একটি কলেজ এর নাম আই-ক্যাটস (ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব অ্যাডভান্সড টেকনোলজি সারওয়াক) এবং একটি স্থানীয় রেডিও স্টেশন ‘ক্যাটস এফএম’ রয়েছে। বিড়াল নিয়ে কুচিংয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনাটি হচ্ছে ক্যাট জাদুঘর, যার মধ্যে রয়েছে চার হাজার নিদর্শন এবং বিড়ালের স্মৃতিচিহ্ন। প্রদর্শনীটিতে প্রাচীন মিশরের একটি বিড়াল এবং বোর্নেওতে প্রাপ্ত পাঁচটি প্রজাতির বন্য বিড়ালও রয়েছে।
অন্য একটি প্রচলিত কাহিনি থেকে জানা যায়, ১৯৫০ সালে একবার বার্নোতে মানুষ ম্যালেরিয়ায় মারা যাচ্ছিল। তাই কর্তৃপক্ষ প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ডিডিটি (গৃহস্থালী পরিষ্কারকরণে ব্যবহৃত রাসায়নিক) ছড়িয়ে দেয়। যদিও এতে ম্যালেরিয়া বহনকারী মশাগুলো ধ্বংস হচ্ছিল কিন্তু এতে দ্বীপটির বিপুল সংখ্যক বিড়ালও মারা পড়েছিল। এর ফলে বিড়ালের সংখ্যা কমে যায় এবং শহরের মধ্যে মহামারী আকারে প্লেগও ছড়িয়ে পড়ে। প্লেগ সমস্যা সমাধানে, যুক্তরাজ্যের রয়েল এয়ার ফোর্স ‘অপারেশন ক্যাট ড্রপ’ নামে পরিচিত একটি মিশনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বোরেনোতে ১৪ হাজার বিড়াল আকাশ থেকে ভূমিতে ছেড়ে দেয়। যদিও এ গল্পের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু এই গল্পটি অনেক বার প্রকাশিত হয়েছিল এবং মনে করা হয়, ১৯৭২ সালে মার্কিন সিনেটে ডিডিটি নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।