প্রকৃতির সবখানেই রসায়ন। আমাদের দেহের কথাই বলি বা চারপাশ ঘিরে থাকা বাতাস, ফুলের ঘ্রাণ—সবকিছুতেই আছে রসায়ন। এর মূল কথাগুলো কি সহজে জানা সম্ভব? মহাবিশ্বের মতো বিপুল রসায়নের জগতের মূল বিষয়গুলো সহজ ভাষায় তুলে আনার সেই চেষ্টা করেছেন লেভ ভ্লাসভ ও দ্মিত্রিই ত্রিফোনভ।
বর্ণ ছাড়া শব্দ নেই, বাক্যও নেই শব্দ বিনা। ভাষা শেখার শুরু বর্ণ পরিচয়ে। আবার বর্ণমালার অক্ষর দুই জাতের, স্বর ও ব্যঞ্জন। যেকোনো একটি বাদ দিলে আমাদের কথ্য ভাষার রফা শেষ। একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর লেখক অজ্ঞাত কোন এক গ্রহবাসীদের মুখের কথা কেবল ব্যঞ্জনবর্ণেই ব্যক্ত করেছেন। কল্পকাহিনীর লেখকরা কি-ই না উদ্ভাবন করে!
প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে কথা বলে রাসায়নিক যৌগের ভাষায়। এই ভাষার প্রতিটি শব্দ রাসায়নিক বর্ণ বা পার্থিব মৌলের এক ধরনের সমাবন্ধন। এর শব্দসংখ্যা ত্রিশ লক্ষাধিক। কিন্তু রাসায়নিক বর্ণমালার অক্ষর সংখ্যা শ’খানেক। এই বর্ণমালায়ও ‘স্বর’ আছে, ‘ব্যঞ্জন’ আছে। বহুযুগ থেকেই রাসায়নিক মৌলরা দ্বিধাবিভক্ত: অধাতু ও ধাতু।
অধাতু ধাতুর চেয়ে সংখ্যায় অনেক কম। তাদের অনুপাত অনেকটা বাস্কেটবল খেলায় গোল সংখ্যার মতো, ২১:৮৫। মানুষের কথার সঙ্গে মিল খুব স্পষ্ট। আমাদের স্বরবর্ণের সংখ্যা ব্যঞ্জনবর্ণের চেয়ে অনেক কম। কেবল স্বরবর্ণ সমন্বয়ে অর্থবহ কোনো কথাই বলা যায় না। এতে যা হয় তা অর্থহীন হল্লামাত্র।
কিন্তু রাসায়নিক ভাষায় ‘স্বর’ সমাবন্ধন (অধাতু) সহজলভ্য। অধাতু যৌগ না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের পাত্তা মিলত না। কার্বন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন—এই চারটি প্রধান অধাতুকে বিজ্ঞানীরা বৃথাই জীবনদাত্রী বলেন না। এতে ফসফরাস আর গন্ধক যোগ করলে, প্রকৃতির প্রোটিন, শর্করা, স্নেহ ও ভিটামিন—এক কথায় সকল প্রাণদ যৌগ তৈরির প্রায় পুরো তালিকাটি এই ছয় ‘ইষ্টকে’ পাওয়া যাবে।
অক্সিজেন ও সিলিকন এই দুটি অধাতু (রাসায়নিক বর্ণমালার দুটি স্বরবর্ণ) মিলে যে পদার্থটি তৈরি হয়, রাসায়নিক ভাষায় তার লেখ্য ও কথ্য নাম: SiO2—সিলিকন ডাইঅক্সাইড। উক্ত পদার্থটি ভূত্বকের কাঠিন্যের উৎস। এরই সিমেন্টে আটকে থাকে খনিজ ও শিলারাশি।
রাসায়নিক বর্ণমালার স্বরবর্ণগুলোর তালিকা আর তেমন দীর্ঘ নয়। বাকি কেবল হ্যালোজেন, শূন্য দলের দুষ্প্রাপ্য গ্যাস (হিলিয়াম ও তার ভ্রাতৃবর্গ) ও অপেক্ষাকৃত কম চেনা তিনটি মৌল—বোরন, সেলেনিয়াম ও টেলুরিয়াম।
যা হোক, পৃথিবীর জীবজগৎ যে কেবলমাত্র অধাতুতেই তৈরি তা পুরোপুরি সত্য নয়। বিজ্ঞানীরা মানুষের দেহে ৭০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মৌলের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। সব অধাতু ও বহু ধাতু—লৌহ থেকে আরম্ভ করে ইউরেনিয়াম সহ তেজস্ক্রিয় মৌল পর্যন্ত।
মনুষ্য ভাষায় স্বরবর্ণের তুলনায় ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যাধিক্যের কারণ নিয়ে ভাষাবিদদের বিতর্ক বহুদিনের। রাসায়নিকরাও পর্যায়বৃত্তে অধাতু ও ধাতু—এই দুটি শ্রেণীর অস্তিত্বের কারণ জানতে আগ্রহী। দুই দলের অন্তর্গত মৌলসমূহ পরস্পর থেকে অনেকটা পৃথক। কিন্তু এগুলোর কিছু কিছু সাদৃশ্যও তো উপেক্ষণীয় নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।