জুমবাংলা ডেস্ক : অনলাইনের সঠিক ব্যবহার জীবনকে সহজ, তথ্যবহুল ও উপকারী করে তুলছে। এর অপব্যবহার আবার ব্যক্তি ও সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমানে অনলাইনের অপব্যবহার লক্ষণীয় হারে বাড়ছে। নিত্যনতুন পাপের পথ আবিষ্কার হচ্ছে। হুমড়ি খেয়ে পাপের পথে ছুটে চলছে বেশির ভাগ মানুষ, বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অনলাইন ব্যবহার করা উচিত।
সময় ও অর্থ অপচয়
অনলাইনে সবচেয়ে বেশি হয় সময়ের অপচয়। সময়ের অপচয় মানেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। আমল থেকে বঞ্চিত হওয়া।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে।’ (সুরা : আসর, আয়াত : ১-২)।
অনলাইনে অনেক টাকা অনর্থক কাজে ব্যয় হয়। ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে হুলুস্থুল কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়। বিচার দিবসে এসব অনর্থক ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছ থেকে আদম সন্তানের পা সরবে না। সেগুলোর অন্যতম হলো—বনি আদমের সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোথা থেকে সে তা অর্জন করেছে আর কী কাজে সে তা ব্যয় করেছে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)।
সুপার এডিটের কারসাজি
ইসলাম মিথ্যা, অপবাদ ও মানুষের সম্মানহানিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে কিংবা প্রতিশোধ নিতে কারো পিকচার সংগ্রহ করে সুপার এডিটের দ্বারা নগ্ন বানিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে প্রকাশ করা এবং মানুষকে দেখানো কবিরা গুনাহ। এডিটের দক্ষতা দেখাতে গিয়ে কারো ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার চালানো, চরিত্রহনন করাও গুনাহের কাজ। কিয়ামতের দিন শরিয়তবিরোধী কাজকর্ম করার জন্য সেই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হবে।
আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই কান, চক্ষু ও অন্তর—এসবের প্রতিটির জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)।
অশ্লীলতার জয়জয়কার
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীলতা ছড়ানো যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ স্বেচ্ছায় এসব কনটেন্ট শেয়ার, লাইক ও কমেন্টের মাধ্যমে অশ্লীলতা প্রচারে সহযোগিতা করছে। অথচ এগুলো ইসলামে গুরুতর অপরাধ। তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত আছে।
কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)।
যারা আগে এসব কাজে লিপ্ত হয়েছে তাদের উচিত দ্রুত তাওবা করা, এসব কনটেন্ট ডিলেট করা এবং অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিবাচক, নৈতিক ও ইসলামী কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভালো কাজের প্রতি আহ্বান জানায় তার জন্য সে পথের অনুসারীদের সওয়াবের অনুরূপ সওয়াব রয়েছে। এতে তাদের সওয়াব থেকে কিছুমাত্র ঘাটতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান জানাবে তার ওপর তার অনুসারীদের গুনাহের অনুরূপ গুনাহ বর্তাবে। এতে তাদের গুনাহ থেকে কিছুমাত্র কম হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬০)।
ব্ল্যাকমেইল প্রবণতা বৃদ্ধি
মিডিয়ায় হ্যাকিং, ব্ল্যাকমেইলিং বা অন্য কোনো প্রতারণার খবর নিয়মিত শিরোনাম হচ্ছে। অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের প্রবণতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারো গোপন তথ্যের পেছনে পড়া এবং স্ক্যান্ডাল ভিডিও ফাঁস করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা অধিক অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কিছু অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান কোরো না।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)।
সাইবার আক্রমণ চালিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকিং করে ব্ল্যাকমেইল করার মাধ্যমে যেকোনো মানুষের সম্পদ আত্মসাত্ করা মহাপাপ। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার অনেক ব্যক্তি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ সময় এতটাই হতাশাগ্রস্ত হয় যে তারা আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর পথও বেছে নেয়। ব্ল্যাকমেইল করার আগে সাইবার যোদ্ধারা সাবধান।
কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)।
অনলাইনে ব্যবসায় প্রতারণা করা
অনলাইনে সুন্দরী নারীর মাধ্যমে লাইভ করা, বিজ্ঞাপনের চটকদার স্লোগান, ডিসকাউন্ট এবং বিশেষ অফারের নামে মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অনলাইন মার্কেটে বেশির ভাগ সময় কাস্টমারের অর্ডার করা পণ্য পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। পণ্যে ভেজাল মিশিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো গুনাহের কাজ।
ধোঁকাবাজ ও প্রতারকদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হীন ঠকবাজরা ধ্বংস হোক! যারা লোকদের থেকে গ্রহণ করার সময় পুরোপুরি গ্রহণ করে; কিন্তু অন্যকে মেপে ও ওজন করে দেওয়ার সময় কম দেয়।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১৩)।
ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতা আবশ্যক করেছে। সততা অবলম্বনের সুফল ও অসততার কুফল বর্ণিত হয়েছে।
অশ্লীল কনটেন্ট বানানো
অশ্লীল ভিডিও কনটেন্ট কিংবা যৌন সুড়সুড়ি মূলক অশ্লীল কাব্য, গল্প-উপন্যাস ইত্যাদি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে ইনকাম করা সম্পূর্ণ হারাম। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে কিছু পথভ্রষ্টা নারীর শরীর দেখিয়ে অর্থোপার্জন করছে। ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামে গ্রুপিং করে অবৈধ পথে ইনভায়েট করছে। এসব নোংরামি স্পষ্ট হারাম। এগুলো পতিতাবৃত্তির নবরূপ। ওদের খপ্পর থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৬৮)।
ইসলাম পরিশ্রম করে উপার্জন করাকে গুরুত্ব দিয়েছে। সফলতার রাজপথ দেখিয়ে দিয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (হালাল উপার্জনের জন্য) ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : আয়াত ১০)।
সব গুনাহ থেকে বাঁচুন
অনলাইনের সব পাপ এড়ানো আজকের যুগে চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখতে না চাইলেও অনেক অবৈধ কিছু সামনে চলে আসে। এখানে কে কতটা মুত্তাকি নিজেই ভালো বুঝতে পারে। কেউ যদি শয়তানের প্ররোচনায় অশ্লীল কিছু দেখে বা অজ্ঞতাবশত মন্দ কিছু করে, এতে অবশ্যই গুনাহগার হবে। পাপী ব্যক্তি যদি খালেস দিলে তাওবা করে এবং কারো কাছে গুনাহ প্রকাশ না করে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম করে, অতঃপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে নেয় তাহলে তো তিনি ক্ষমাপরায়ণ, দয়াশীল।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৪)।
মহান আল্লাহ আমাদের পাপমুক্ত জীবন দান করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।