জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) দেশের নাগরিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ব্যক্তির জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়। তবে এনআইডিতে তথ্যগত ভুল থাকলে নাগরিককে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ২০০৮ সালে এনআইডি চালু হওয়ার পর প্রথমদিকে ব্যক্তির তথ্যগত নানা ভুলভ্রান্তি ছিল। ওই সময় জনসাধারণের অসচেতনতা ও দেশে প্রথমবারের মতো এটি চালু হওয়ায় ভুলভ্রান্তির পরিমাণ বেশিই হতো। এ কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রথমে বিনামূল্যে ও পরে নির্ধারিত ফি নিয়ে এনআইডির ভুল সংশোধন করে দিয়েছিল।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ তাদের এনআইডিতে থাকা ভুল সংশোধন করেছেন। তবে এরপরও এখনও অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল রয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন প্রথমে ম্যানুয়ালি এবং পরে অনলাইনে আবেদন করে পরিচয়পত্র সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে। বর্তমানে এ দুটি উপায়ে সংশোধনের সুযোগ থাকলেও নাগরিকরা অনলাইনে অবেদন করে সংশোধনের সুযোগ বেশি নিচ্ছেন।
নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে এনআইডি সংশোধনের সুযোগ চালু হওয়ার পর প্রথমে সরকারি চালান ও ব্যাংকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফি প্রদানের সুযোগ ছিল। এ সুবিধার পাশাপাশি বর্তমানে বিকাশ, রকেটসহ কয়েকটি ব্যাংকের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (মোবাইল ব্যাংকিং) মাধ্যমে ফি দেওয়ার পদ্ধতি চালু হয়েছে। ফি প্রদানের পরিধি আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।
এখন যে কেউ সংশ্লিষ্ট উপজেলায় নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করার পাশাপাশি ঘরে বসে অনলাইনে এনআইডিতে থাকা ভুল তথ্য পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারছেন। অনলাইনে আবেদন করতে হলে কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়।
এক্ষেত্রে শুরুতেই এনআইডি পোর্টালে (https://services.nidw.gov.bd/) ঢুকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। সেখানে এনআইডি নম্বরটি দরকার হবে। অ্যাকাউন্টে ঢুকলে সেখানে লিংক পাবেন অনলাইনে অর্থ পরিশোধের।
ওকে ওয়ালেট, বিকাশ ও রকেট ইত্যাদি মাধ্যমে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করা যায়। সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমেও ফি পরিশোধ করতে পারেন।
১. এনআইডি কার্ডের সামনে ও পেছনের পৃষ্ঠায় যেসব তথ্য প্রদর্শন করা থাকে, যেগুলো নিবন্ধনের সময় নাগরিকরা ফরম-২ এর মাধ্যমে প্রদান করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে সামনের পৃষ্ঠে বাংলা ও ইংরেজিতে জাতীয় পরিচয়পত্রধারীর নাম, বাংলায় পিতা ও মাতার নাম, ইংরেজিতে জন্ম তারিখ ও এনআইডি নম্বর, সই এবং পেছনে বাংলায় ঠিকানা, ইংরেজিতে রক্তের গ্রুপ ও জন্মস্থান অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর মধ্যে যেকোনও তথ্য পরিবর্তন করতে হলে প্রথমবার আবেদনের জন্য ২০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং পরবর্তী যতবার আবেদন করবেন ৪০০ করে টাকা ফি দিতে হবে।
২. নিবন্ধনের সময় নাগরিকরা ফরম-২ এর মাধ্যমে কিছু তথ্য প্রদান করেন, যেগুলো এনআইডি কার্ডে প্রদর্শন করা থাকে না। কিন্তু ইসিতে নাগরিকের ডাটাবেজে তা সংরক্ষিত থাকে। সেগুলোও সংশোধন করা যায়। যেমন- প্রার্থীর পেশা, পাসপোর্ট ও মোবাইল নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে প্রথমবার ১০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩০০ টাকা এবং পরে প্রতিবার ৩০০ টাকা করে ফি দিতে হবে। সব ধরনের সংশোধনীর নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। অবশ্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আবেদন ফি প্রদান করলে নির্ধারিত ভ্যাটের টাকা আপনাআপনি যুক্ত হয়ে যায়।
ফি পরিশোধ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এডিট করার লিংকে তথ্য চলে যাবে। এরপর আপনি তথ্য সংশোধন অপশনে যেতে পারবেন। সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট কিছু কাগজের কপি আপলোড করতে হবে। কোন ধরনের সংশোধনে কী কী কাগজ লাগবে সেটি ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে।
এক নজরে অনলাইয়ে আইডি সংশোধন পদ্ধতি
ক. এনআইডি নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা
খ. মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংশোধন ফি জমা দিতে হবে।
গ. প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র আপলোডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোর সম্পাদন।
এই পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনের নির্ধারিত কার্যদিবসের পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধের সময় যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল, তাতে সংশোধন অনুমোদনের বার্তা আসবে। সেই সঙ্গে সংশোধিত এনআইডি কার্ডটিও ওয়েবসাইটে দেখা হবে। সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা যাবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও ওই এসএমএস দেখিয়ে এনআইডি প্রিন্ট করা যাবে।
উল্লেখ্য যে, সংশোধনের আবেদনের সময় প্রদত্ত দলিলাদি যৌক্তিক না হলে নির্বাচন কমিশন তা অনুমোদন করে না। এক্ষেত্রে আবেদিত ব্যক্তির জমা দেওয়া দলিলাদির পাশাপাশি নতুন করে আরও দলিল/ডকুমেন্ট ইসি চাইতে পারে।
সংশোধনের পর যে কার্ডটি পাওয়া যাবে, সেটি হবে পেপার লেমিনেটেড। উন্নত চিপস সংযুক্ত যে স্মার্ট কার্ড ইসি প্রদান করছে, সংশোধনের পর সেটি পাওয়া যাবে না। তবে স্মার্ট কার্ড হোক আর লেমিনেটেড হোক, সব ধরনের কার্ডেই এখন থেকে ১০ ডিজিটের ইউনিক আইডি নম্বর থাকবে।
সংশোধনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
এনআইডি সংশোধনের জন্য অ্যাকাউন্ট তৈরি ও ফি পরিশোধের পরপরই আসবে তথ্য সম্পাদনের স্ক্রিন। এ অংশে প্রত্যাশিত সংশোধন বা পরিবর্তনে তথ্য সংযুক্ত করার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র আপলোড করতে হয়।
প্রার্থীর নাম অথবা জন্ম তারিখ সংশোধন করতে হলে প্রার্থীর যে কাগজগুলো সংযুক্ত করতে হয় সেগুলো হলো—
১. জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র।
২. কমপক্ষে মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষার সনদপত্র।
শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক বা সমমানের নিচে হলে এবং প্রার্থী সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, অথবা সংবিধিবদ্ধ কোনও সংস্থায় কর্মরত হলে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চাকরির বই বা মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট বা ট্রেড লাইসেন্সের কপি লাগবে।
৩. বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী বা স্বামীর এনআইডি কার্ড এবং কাবিননামার সত্যায়িত কপি লাগবে।
বিবাহ সংক্রান্ত কোনও কারণে নারীদের নামের পরিবর্তন করতে চাইলে, স্পাউজের নাম যুক্ত করতে বা বাদ দিতে চাইলে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কাবিননামা বা তালাকনামা বা স্বামীর মৃত্যু সনদ, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে প্রাপ্ত হলফনামা বা বিবাহ বিচ্ছেদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
৪. ধর্ম পরিবর্তন অথবা অন্য কোনও কারণে পুরো নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে প্রাপ্ত হলোফনামা, জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি, ওয়ারিশ সনদপত্র, ইউনিয়ন বা পৌর বা সিটি করপোরেশন থেকে প্রার্থীর নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র বা চাকরির বই বা এমপিও বা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হবে।
পিতা বা মায়ের নাম সংশোধনের সময়, যদি পিতা বা মাতার নাম উল্লেখ থাকে, তবে প্রার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের সনদপত্র, প্রার্থীর পিতা, মাতা, ভাই ও বোনের এনআইডির সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। প্রার্থীর সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে— শিক্ষাগত যোগ্যতা সংশোধন করার জন্য। রক্তের গ্রুপ সংশোধনের জন্য প্রয়োজন হবে ডায়াগনিস্টের সনদপত্র।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।