রুকনুজ্জামান অঞ্জন : অনলাইনে পণ্য বিক্রির ওপর সরকারের নজরদারি বাড়ানোর পর এখন ই-কমার্সের নামে ভয়ংকর অনলাইন জুয়ার ফাঁদ পেতে বসেছে প্রতারক চক্র। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর এক প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে, ১০০-এর বেশি অ্যাপস ও ওয়েবসাইট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সারা দেশে অবৈধ অনলাইন জুয়া কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে দেশি কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানও রয়েছে, যারা পণ্য বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা ছেড়ে এখন অবৈধ জুয়ায় নেমেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ এমএলএম ব্যবসাও পরিচালনা করছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাপস ও ওয়েবসাইট বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অনলাইন জুয়ার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের টেকনিক্যাল কমিটি চলতি মাসের শুরুর দিকে একটি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব সাইটে জুয়া পরিচালনা করা হয় তার বেশির ভাগই দেশের বাইরে থেকে নিবন্ধিত ও বিদেশি ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত। ফলে এসব অ্যাপস বা সাইট বন্ধ করাও এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, সিআইডির রিপোর্টের পর তাঁরা দেশি ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল করেছেন, অনলাইনে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-কে চিঠিও দিয়েছেন।
তবে বিদেশি সাইটগুলোর বিরুদ্ধে তাঁরা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এসব সাইট বন্ধে বিটিআরসির সক্ষমতার বিষয়টি নিয়েও টেকনিক্যাল কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। হাফিজুর রহমান বলেন, দেশি-বিদেশি কিছু সাইট আছে যেগুলো ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সোশ্যাল সাইট ব্যবহার করে ডলারসহ বিদেশি কারেনসির মাধ্যমে জুয়া খেলতে প্ররোচিত করে গ্রাহকদের। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ২০০ ডলারের জন্য টাকা জমা দিলে ৫০০ ডলার ফেরত দেওয়ার লোভ দেখায়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এ দেশে স্থানীয় এজেন্ট নিয়োগ করে। ওই এজেন্টরা জুয়ায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ভার্চুয়াল চিপস সরবরাহ করে। সেই চিপস দিয়ে জুয়া খেলা হয়। কোনো কোনো এজেন্ট আবার স্থানীয় মুদ্রা টাকা গ্রহণ করে বিদেশে থাকা ব্যক্তির মাধ্যমে ডলার সাবমিট করে। এর মাধ্যমে দেশ থেকে কৌশলে অর্থ পাচার ছাড়াও দেশের সম্পদ নষ্ট করা হচ্ছে বলেও জানান কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের প্রধান সমন্বয়ক।
তিনি বলেন, সিআইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ১০০-এর বেশি অনলাইন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নিষিদ্ধ জুয়ায় জড়িত। এর মধ্যে দেশি ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, অনলাইন জুয়া ও নিষিদ্ধ এমএলএম ব্যবসার কারণে যে ছয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- থলে ডট কম, গ্লিটার্স আরএসটি ওয়ার্ল্ড, অ্যানেক্স ওয়ার্ল্ডওয়াইড লিমিটেড, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড এগ্রোফুড অ্যান্ড কনজুমার লি., আলিফ ওয়ার্ল্ড ও গ্রিনবাংলা ই-কমার্স লিমিটেড।
মন্ত্রণালয়সূত্র জানান, অনলাইন জুয়ার বিষয়টি এখন সরকারের কাছে ভয়ংকর শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় শঙ্কা হচ্ছে, এর মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। ডলারসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রার প্রলোভন দেখিয়ে দেশের তরুণ প্রজন্মকে এ জুয়ায় টেনে আনা হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ঘরে বসে যে কেউ এ জুয়ায় অংশ নিতে পারছে। কৌতূহলবশত জুয়ার সাইটগুলোয় ক্লিক করেই তরুণ প্রজন্ম প্রলোভনে পড়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব সাইটে ক্লিক করতে বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন ধরনের অভিনব কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সম্প্রতি দেশের একজন তারকা খেলোয়াড়কেও এ ধরনের বিজ্ঞাপনে অংশ নিতে দেখা যায়।
কর্মকর্তারা জানান, নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া বন্ধে একটি সমন্বিত উদ্যোগের বিষয়ে কৌশল নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। দেশে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট রয়েছে; ই-কমার্স নীতিমালায়ও জুয়া নিষিদ্ধ। যেসব সাইটে জুয়া পরিচালিত হয় সেগুলো কীভাবে দেশে প্রদর্শন বন্ধ করা যায় সে বিষয়েও বিটিআরসিকে উদ্যোগ নিতে হবে। আবার জুয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ফলে অনলাইন জুয়া বন্ধে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে শিগগিরই আন্তমন্ত্রণালয় সভা করা হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।