জুমবাংলা ডেস্ক : বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেছেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের তিন-চতুর্থাংশের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এ সময়কালের মধ্যেই সরকারের যেসব এজেন্ডা অর্থাৎ সংস্কার কাজ রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন করতে পারবে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এ সদস্য আরও বলেছেন, অনির্বাচিত সরকারের কোনো জনভিত্তি থাকে না। জনভিত্তি ছাড়া দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা কঠিন।
অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। গতকাল এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন। কালের কণ্ঠ থেকে সেই সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত-
প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে চার মাসে আপনার প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি সম্পর্কে বলুন।
কাজল : দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার জাঁতাকল থেকে মুক্ত হয়ে দেশের মানুষ মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীনতা ব্যতীত ব্যাপক চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতির যে উৎসব বিগত সরকারের আমলে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে গত চার মাসে এগুলো আমরা লক্ষ্য করিনি। অন্তর্বর্তী সরকার অনেকটাই গণতান্ত্রিক। রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে।
এর মধ্য দিয়ে জনগণের পালস বা মনোভাব তারা কিছুটা বুঝতে পারছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অনির্বাচিত সরকার। অনির্বাচিত সরকারের কোনো জনভিত্তি থাকে না। জনভিত্তি ছাড়া দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা কঠিন। দীর্ঘদিন অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ ওঠেনি। তবে যে তরুণ প্রজন্মের সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্টের বিজয় এসেছে সেসব ছাত্রনেতা বা ছাত্র উপদেষ্টাদের কারও বিরুদ্ধে যদি কখনো এমন কোনো অভিযোগ আসে তাহলে এটি হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক এবং কলঙ্কজনক। সুতরাং, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সরকার এবং জনগণ উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক হবে। সরকার যেসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেগুলো চূড়ান্ত করে পরবর্তীতে বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত সরকারের কাছেই ছেড়ে দিতে হবে।
প্রশ্ন : ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কীভাবে দেখেন? আর এ আন্দোলনে বিএনপির অবদানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
কাজল : জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিল ছাত্র-জনতা। আন্দোলনের মোমেন্টামও তারাই গ্রহণ করেছে। তবে এই আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করেছে বিএনপি। হাসিনার শাসনামলের শুরু থেকেই বিএনপি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নানাবিধ অপকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এতে করে দলীয়ভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে বিএনপি। ইলিয়াস আলীর মতো একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ গুম হয়েছেন। বর্তমান সরকারের চার মাস পেরিয়ে গেলেও তার পরিবার এখনো জানে না ইলিয়াস আলীর ভাগ্যে কী ঘটেছে। হাজারখানেক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন, ৫০ লক্ষাধিক মানুষ মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন। এদের সিংহভাগই বিএনপির।
বিগত সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে এসেছে। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরও বিএনপি থেমে যায়নি। গত বছর ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরও বিএনপি নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। ওইদিন সমাবেশ ব্যর্থ হওয়ার পরদিন বিএনপি হরতাল ডেকেছিল। আওয়ামী সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা, খুনের মাধ্যমে দেশে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। আমি একমাত্র ব্যক্তি যে সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইনজীবীদের মিছিল রাজপথে নিয়ে গেছি। সাংগঠনিক চেইন অব কমান্ডের বদৌলতে বিএনপি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলমান রাখতে পেরেছে। আমি নিজেও আইনজীবী হিসেবে গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছি।
৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে বিএনপি মহাসচিব প্রথমে দলের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন, ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন আছে। পরবর্তীতে তিনি বলেছেন, সর্বশক্তি দিয়ে আমরা এ আন্দোলনের সঙ্গে আছি। আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যারা ভূমিকা রেখেছে তারা মূলত রাজনৈতিক কর্মী। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির রাজনৈতিক কর্মীরাই আন্দোলনটাকে চূড়ান্ত মোমেন্টামে তুলে এনেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের দীর্ঘ দিনের চালানো খুন, গুম, নির্যাতন-নিপীড়ন এবং অধিকার হরণের বিপরীতে মানুষের যে ক্ষোভ তার গণ বিস্ফোরণের সমষ্টিগত ফল হলো ৫ আগস্টের বিপ্লব। সুতরাং এ বিপ্লব কোনো একক ব্যক্তির কিংবা একক গোষ্ঠীর নয়।
প্রশ্ন : সরকারের সংস্কার কার্যক্রমকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? বিএনপি কোন কোন সংস্কারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে?
কাজল : বিএনপি যেসব বিষয়ে সংস্কার করতে চায় তার মধ্যে প্রধান হলো- সংবিধান সংস্কার। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই সংবিধান সংস্কার কমিটি গঠিত হয়েছে। সাত সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির আমি একজন সদস্য ছিলাম। এ কমিটি ৬৭টি সংস্কারের কথা বলেছে। বিগত আমলগুলোতে প্রধানমন্ত্রী তার একচ্ছত্র ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাই বিএনপি চায়, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হোক। দ্বিতীয়ত, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিক্ষাবিদ, চিকিৎসকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিদগ্ধ ব্যক্তিদের রাষ্ট্রপরিচালনায় অংশ নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ জন্য বিএনপি, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছে। তৃতীয়ত, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একই ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। চতুর্থত, বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য সংস্কারের কথা বলছে।
সর্বোপরি, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবও অত্যন্ত যুগোপযোগী। এ প্রস্তাবগুলোকে সামনে রেখে আগামী দিনে দেশের সব সেক্টরকে দুর্নীতিমুক্ত এবং নিরপেক্ষভাবে ঢেলে সাজানো সম্ভব।
প্রশ্ন : নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
কাজল : অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এ সরকারের কাছ থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপের প্রত্যাশা করছে। সরকারের যাত্রা শুরু থেকেই বিএনপি বলে আসছে, কিছু সংস্কারের জন্য তারা সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চায়। যৌক্তিক সময় একেক সময় একেক রকম হয়। উদাহরণস্বরূপ, এক-এগারো সরকারের প্রতি প্রথম দিকে জনগণের যেরকম আস্থা ছিল, দুই বছর থাকার কারণে সেই আস্থায় ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। সেই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকেই নানাবিধ দুর্নীতি এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আশঙ্কা প্রকাশ করছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে সরকার সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্ষমতাস্পৃহা তৈরি হতে পারে। অনেকের মধ্যে দুর্নীতি ঢুকতে পারে। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব যেসব সংস্কার প্রস্তাব এসেছে সেগুলো ঘষা-মাজার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা উচিত।
অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক কোনো সংস্কার করতে পারবে না। তারা সংবিধানের পাশ দিয়ে হেঁটে চলছে। সরকারের একমাত্র সাংবিধানিক ভিত্তি হচ্ছে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ। যেখানে সুপ্রিম কোর্টের উপদেশমূলক পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্টের উপদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া এই সরকারের আইনগত আর কোনো ভিত্তি নেই। তাই অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুত নির্বাচনের দিকে হাঁটবে তত দ্রুত জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।
প্রশ্ন : বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো এখন কোন পর্যায়ে আছে?
কাজল : এই দুজন ছাড়াও হাসিনার আমলে বিএনপির প্রায় ৫০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। গ্রাম থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও মিথ্যা মামলার খড়গ থেকে বাঁচতে পারেননি। বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ছিলেন শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিপক্ষ। এখন একের পর এক এসব মামলা থেকে তারা খালাস পাচ্ছেন। এতে প্রমাণ হয় যে, সবকটি মামলাই ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
প্রশ্ন : রাজনৈতিক অঙ্গনে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘মাইনাস টু’র আলোচনা চলছে।
কাজল : এক-এগারোর অনির্বাচিত সরকারের সময়কার অগণতান্ত্রিক এবং বিরাজনীতিমূলক ‘মাইনাস টু’ এর স্মৃতি জনগণের মনে এখনো জাগরূক রয়েছে। অসাংবিধানিক, কূটকৌশলপূর্ণ এমন কোনো পরিকল্পনা এখনো যদি কারও মধ্যে তৈরি হয় তবে জনগণ তা বাস্তবায়িত হতে দেবে না।
প্রশ্ন : তারেক রহমান বারবার বলছেন, আগামী নির্বাচন হবে বিএনপির জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। চ্যালেঞ্জের জায়গাগুলো কী কী?
কাজল : বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। মানুষ মনে করে, এখন নির্বাচন হলে বিএনপি একচ্ছত্রভাবে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবে। বিএনপির এ রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যাদের কাছে আশঙ্কার কারণ কিংবা বিএনপির এ সাফল্যে যারা ভাগ বসাতে চায় তারা স্বাভাবিকভাবেই বিএনপির এ গতিধারাকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করবে। এ জন্য তারেক রহমান তার নেতা-কর্মীদের সতর্ক করার জন্য চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন।
প্রশ্ন : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপির প্রস্তুতি কেমন?
কাজল : বিএনপি জনমানুষ এবং গণমানুষের রাজনৈতিক দল। বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। বিএনপির রাজনৈতিক শক্তির বাইরে সবচেয়ে বড় শক্তি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা, তার ও বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা এবং তারেক রহমানের প্রতি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর আস্থা। তাদের প্রতি দলের এবং দেশের মানুষের আস্থায় বলীয়ান বিএনপি যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। যদি প্রস্তুতি না থাকত তবে বিএনপি প্রতিনিয়ত নির্বাচনের কথা বলত না। যে কোনো সময় গণতান্ত্রিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির প্রতি দেশের জনগণ ভোটবিপ্লবের মাধ্যমে তাদের আস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।
প্রশ্ন : গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
কাজল : শেখ হাসিনাসহ বিগত সরকারের যারা জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবি সর্বজনীন। সর্বজনীন বিচারের প্রক্রিয়া ধরে আসামি বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতের সামনে রেখে বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনার বিচারের ক্ষেত্রেও এ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটবে না। আমরা জানতাম বেগম খালেদা জিয়া কোনো এতিমের টাকা চুরি করেননি। কিন্তু তারপরও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় দিনের পর দিন বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকবেন এটাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন : স্বাধীন বিচার বিভাগ কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
কাজল : মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে জরুরি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। স্বাধীন বিচার বিভাগ আমাদের সাংবিধানিক ভিত্তি। সংবিধানে বলা থাকলেও এতকাল এটি কেউ কার্যকর করেনি। যতটুকু কার্যকর করা হয়েছিল সেটাও বেগম খালেদা জিয়ার আমলে। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত মাজদার হোসেন মামলা বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শাসনকালের শেষ দিকে শুরু হয়েছিল। বর্তমান সরকারের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আইন মন্ত্রণালয়ও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। বিচার প্রশাসনকে তারা সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনার জন্য কাজ শুরু করেছে।
প্রশ্ন : বর্তমান সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী?
কাজল : বাংলাদেশের মানুষ তাদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অচলায়তন, অব্যবস্থাপনা ও দুঃশাসন থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি চায়। সরকার বেশ কিছু সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। যত দ্রুত সম্ভব দেশের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে ঘষা-মাজার মাধ্যমে চূড়ান্ত করে সেগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের বাস্তবায়নের জন্য রেখে দিতে হবে। কারণ সংস্কারকে সাংবিধানিকভাবে আইনগত কাঠামো দেওয়ার ক্ষমতা ও যৌক্তিকতা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।
কমিশনগুলোর প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার ডেটলাইন শেষ হয়ে আসছে। আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবনায় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাদের কাজ হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচন করা। দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাদের কাজ হবে, হাসিনা এবং তার সরকারের দোসরদের অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করা। এক্ষেত্রে আমার প্রস্তাবনা হলো, প্রয়োজনে একটা সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে বড় বড় দুর্নীতিগুলোর বিচার করা।
আইসিটিতে হাসিনাসহ তার দোসরদের এবং ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিচারগুলো সম্পন্ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। তা না হলে ৫ আগস্টের চেতনাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। আমি মনে করি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই কাজগুলো সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের তিন-চতুর্থাংশ সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।
প্রশ্ন : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
কাজল : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
সাড়ে ১৫ বছর তারা দেশকে না সাজিয়ে নিজেদের সাজিয়েছে : জামায়াত আমির
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।