জোরপূর্বক ভারতে ফেরত পাঠানো বা ‘পুশ-ইন’ হওয়ার পর বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি এক ভারতীয় অন্তঃসত্ত্বা নারীর অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীর নাম সোনালি খাতুন। তিনি এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কারাগারে আটক রয়েছেন। যদি তার সন্তান বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে, তাহলে সেই নবজাতকের নাগরিকত্ব কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ওই সংগঠন। সোনালি খাতুনসহ মোট ছয়জনকে দিল্লি থেকে আটক করে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে সীমান্ত দিয়ে পুশ-আউট করা হয়েছিল। যদিও পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা পুলিশ বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করে দিল্লি পুলিশের কাছে পাঠিয়েছিল, যেখানে দেখা যায় যে সোনালি খাতুনসহ এই ছয়জনই ভারতের নাগরিক।
খাদ্য সংকটে জাপানের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোখাদ্য সংকটে জাপানের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো
বর্তমানে সোনালি খাতুনসহ বাকি পাঁচজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে আটক আছেন বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যেদিন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, সেদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করেছিলাম যে যদি ভারতে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আমরা এদের আদালতে তুলি এবং সেখান থেকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার সময়েই আমরা জানতাম যে ওই নারী গর্ভবতী।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের জেলার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ওই গর্ভবতী নারীর শরীর-স্বাস্থ্যের ওপর কারা কর্তৃপক্ষের ডাক্তাররাই সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তার কথায়, ‘আমাদের জেলের কোনো হাসপাতাল নেই। আমাদের যে ডাক্তার আছেন, তিনিই রেগুলার ট্রিটমেন্ট দেন। এর বাইরে প্রয়োজন হলে তাকে বাইরের হাসপাতালে নিতে হবে। এখনও পর্যন্ত তিনি ভালই আছেন।’
তিনি আরও জানান, কারা কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে।
নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের প্রতি তারেক রহমানের কড়া বার্তানির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের প্রতি তারেক রহমানের কড়া বার্তা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুল ওদুদ বলেন, আটকদের মধ্যে একজনের মামলা শিশু আদালতে এবং বাকিদের নিয়মিত আদালতে তোলা হয়। সকলের জামিনের আবেদন একবার নাকচ হয়ে গেছে এবং এ মাসের শেষে আবারও শুনানি হবে।
সোনালি খাতুনের পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম। দুদিন আগে তিনি তাদের বাড়িতে গিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করেন যে, তাদের মেয়েকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনা হবে।
সামিরুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সোনালি খাতুনসহ ছয়জনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানে সুইটি বিবি নামের এক নারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পোস্ট করে সামিরুল ইসলাম জানান, আইনগত কিছু জটিলতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তার জন্যই দেরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রথম দিন থেকে আমরা পাশে আছি। চিন্তা করবেন না কিছু। আইনগত জটিলতা তৈরি হয়েছিল ওই দিল্লির মামলাটা হয়ে যাওয়ার ফলে। কিন্তু এখন আইনের জটিলতাটা কাটছে।”
জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ চিহ্নিত করতে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছিল। সেই সময় বাংলা ভাষাভাষী হওয়ায় অনেক ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে পুশ-আউট করা হয়। পরে এদের মধ্যে অনেককে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারত ফিরিয়ে নেয়।
নরসিংদীতে আ.লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ, নিহত ১নরসিংদীতে আ.লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ, নিহত ১
তাহলে সোনালি খাতুনসহ এই ছয়জনকে কেন ফিরিয়ে আনা গেল না—এই প্রশ্ন তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ। সংগঠনটির মুখ্য উপদেষ্টা অর্ণব পাল বলেন, ‘সোনালি খাতুন শুধু যে সন্তানসম্ভবা তা নন, তিনি আসন্ন-প্রসবা। প্রসবের সময়ে এসে গেছে। আমাদের একটা উদ্বেগের বিষয় হল তার সন্তান যদি বাংলাদেশেই ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে শিশুটির নাগরিকত্ব নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হবে, তার দায় কে নেবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘দিল্লির এফআরআরও-র নির্দেশে এদের পুশ-আউট করার পরে অন্তত দুমাস তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। সেই সময়ের মধ্যে কেন কূটনৈতিক স্তরে কথাবার্তা বলে এদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হলো না? এর আগে যতগুলো ঘটনায় পুশ-ব্যাক হওয়া মানুষদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে, প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমেই তো তাদের ফেরত আনা হয়েছে।’
বীরভূম পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে আটকরা ভারতীয় নাগরিক। তাদের কাছে সোনালি খাতুন, তার স্বামী দানেশ শেখ ও তাদের ছেলে সাবির শেখের নাগরিকত্বের প্রমাণ রয়েছে। একইভাবে, বীরভূমের আরেকটি পরিবার—সুইটি বিবি ও তার দুই ছেলে কুরবান শেখ ও ইমাম শেখ—যারাও এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারে, তারাও ভারতীয় নাগরিক বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
দিল্লির ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার প্রথমে তাদের বাংলাদেশি বলে রায় দিলেও, এখন কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে তাদের ব্যাপারে মামলা চলছে। এর আগে দিল্লি হাইকোর্টেও একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।