জুমবাংলা ডেস্ক : রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংহতির অভাবই সংস্কারের পথে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি।
নাহিদ বলেন, একসময় যে ঐক্য ছিল, তা ক্ষীণ হয়ে গেছে। এই সংহতির অভাব সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, যদিও অভ্যুত্থান সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার সাথে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিল, তবে অনেকেই জাতীয় কল্যাণের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থের পেছনে ছুটতে শুরু করেছিল। এই বিভক্তির কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ঐক্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
সংস্কার বনাম নির্বাচনের ইস্যুটিও একটি বিতর্কিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। সরকার সংস্কার এবং নির্বাচনকে পারস্পরিক একচেটিয়া হিসাবে দেখে না, বরং পরিপূরক উদ্দেশ্য হিসাবে দেখে।
নাহিদ বলেন, আমি বিশ্বাস করি না যে ঐক্য সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে। আমরা মতবিরোধ নিরসনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন নির্বাচনী ও শাসন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে কাজ করছে। নির্বাচনের আগে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায়, অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি হবে।
সাক্ষাৎকারে অর্থনৈতিক সংগ্রাম এবং একটি সদা বিকশিত রাজনৈতিক পরিবেশসহ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন মো. নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, স্থিতিশীলতা ও ঐক্য বজায় রাখা এবং চাপ মোকাবিলায় নিরন্তর প্রচেষ্টার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সর্বদা বিকশিত জাতীয় দৃশ্যপটের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে এ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠে দেশের জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে, এমন একটি ভবিষ্যৎ গঠনে অবিচল রয়েছি আমরা।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, গত ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ষড়যন্ত্র, শতাধিক আন্দোলন, অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপসহ বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে সরকার। এতসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমার বিশ্বাস, জাতি যে পরিবর্তন চেয়েছিল, গত বছরের ৮ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ছয় মাস বয়সী সরকার অব্যাহত সংলাপ, সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে তা অর্জন করতে পারবে।
তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের ওপর দেশের মানুষ বিপুল প্রত্যাশা। আমরা যখন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন বিশৃঙ্খলা ছিল। আমলাতন্ত্র ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল এবং আমাদেরকে সেখান থেকে তাদের পুনর্গঠন করতে হয়েছিল। এটা সহজ কাজ ছিল না। আগের প্রশাসনের চর্চা, বিশেষ করে ব্যাপক চাঁদাবাজি এবং দুর্নীতি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তৈরি করেছিল যা রাতারাতি দূর করা যাবে না।
নাহিদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক বিষয়গুলো সরকার পরিচালনায় জনসাধারণের উদ্বেগের প্রধান ক্ষেত্র। সামনের রাস্তাটি এত মসৃণ হবে না, তবে সঠিক সমর্থনসহ দেশের জন্য আরও স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপনের আশা করে অন্তর্বর্তী সরকার।
উপদেষ্টা বলেন, অর্থবহ সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারের সাফল্যের মাধ্যমে ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষমতার প্রকৃত পরীক্ষা আসবে। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সংস্কারের ইস্যুতে আমরা কতটা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। আগামী মাসগুলি দেখাবে আমরা কতটা অগ্রগতি করতে পারি।’
নাহিদ জোর দিয়ে বলেন, যেকোনো অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, রাজনৈতিক দল এবং জনগণ উভয়ই পদ্ধতিগত সমস্যাগুলো দূর করতে একসাথে কাজ করবে। সহযোগিতা ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা কঠিন হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার স্বাধীনভাবে তার নীতির সমালোচনা করার গণমাধ্যমের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেনি। এখন পর্যন্ত সরকারের সমালোচনা করার জন্য গণমাধ্যমের ওপর কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। আমরা যৌক্তিক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই এবং আমরা আমাদের নীতিতে সামঞ্জস্য বজায় রাখবো।
আ.লীগ কর্মীদের বিশেষ ট্রেনিং, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ফোনালাপ ফাঁস!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।