জুমবাংলা ডেস্ক : রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় বক্তাদের মুখে মুখে উঠে এসেছে নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয়। ৫ আগস্টের পর কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে বক্তারা বলেছেন, ‘আগামীতে অন্য কোনো ফ্যাসিস্টও যেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় না আসতে পারে। এ জন্য ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি, রাজশাহী।
‘রাজশাহী রাইজিং’ নামের এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজশাহীর শহিদ সাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মনিরা শারমিন। তিনি বলেন, আমরা সে সিস্টেমটা ভাঙতে চাই, যে সিস্টেমে যে কেউ, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও যেন আমাকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার একটা দানব না বানিয়ে ফেলে। এই পরিবারতন্ত্রের জন্য তো সাকিব আনজুম জীবন দেয়নি। আমরা দেখছি যে, ৫ তারিখের পর থেকে শুধু মনে হচ্ছে যে হাতবদল। কিছু কিছু গোষ্ঠী নিজেদের নির্বাচিত মনে করছে। মানসিকভাবে মনে করছে যে ক্ষমতায় চলে গিয়েছে। পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একজন কৃষকের ছেলে কেন মনে করবে না যে সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবে। কেন কিছু ধান্দাবাজ-চাঁদাবাজের হাতে রাজনীতি থাকবে? আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের তরুণরা সকল সেক্টরে নেতৃত্ব দেবে, সেই স্বপ্ন আমরা দেখতে চাই। চব্বিশের অভ্যুত্থানে আমরা পেরেছি, কারণ আমাদের মধ্যে কোন বিভক্তি ছিল না। সেভাবেই কাজ করতে হবে।
মনিরা শারমিন বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো খুবই ধূর্ত। তারা মানুষকে রাজনীতি সচেতন করতে চায়নি। তারা একটা বিরিয়ানির প্যাকেট কিংবা মার্কা দেখিয়ে ভোট নিতে চেয়েছে। তারা রাজনৈতিকভাবে মানুষকে অশিক্ষিতই রেখেছে। তারা আর কারো হাতে ক্ষমতা দিতে চায়নি।
সভায় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এসএম সাইফ মুস্তাফিজ বলেন, বর্তমানে ইলেকশনের একটা তাড়া দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, তাদের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস আছে আমরা সেই জায়গাটা ফিল করি। কিন্তু এখনই যদি নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা পুরনো ফ্যাসিবাদের জায়গায় ফিরে যাব। আমরা সেই জায়গাটাই আসলে ফিরে যেতে চাই না।
সভায় উপস্থিত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি চান, জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকেও ব্যালটের রাজনীতি হবে। আপনাদেরকে নিয়েই হবে। আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী, এমপি, মন্ত্রী আপনারাই হবেন। আপনাদের মধ্য থেকেই হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় সহ-মুখপাত্র তাহসিন রিয়াজ বলেন, আমাদের কথা ছিল ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ। কিন্তু দুর্নীতি আছে? ঘাট দখল আছে? আমলাতন্ত্র আছে না? এটা কি নতুন বাংলাদেশ? এই বাংলাদেশের জন্য আবু সাঈদ রক্ত দিয়েছিল? আমরা সেই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপের কথা বলছি, যে আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনা স্বৈরাচার হয়ে উঠেছিল। ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে গোড়া থেকে যেন আর কেউ স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে।
কেন্দ্রীয় সংগঠক সাকিব মাহাদী বলেন, আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাচ্ছিলাম। এই জন্য বিপ্লব করেছি। কিন্তু আমরা কি সেটা পেয়েছি? পাইনি। আমরা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে চেয়েছিলাম, পেরেছি? পারিনি। আমাদের বাজার-ঘাট সবকিছু দখল হয়ে যেতে দেখেছি। এই জন্য সংস্কার দরকার। আমরা রাজনীতি করব, আমরা ভোট করব। আমাদের শত্রু আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল। তার বাইরে সবাই বন্ধু। আগামীতে নৌকা প্রতীক যেন ব্যালটে না থাকে। কিন্তু চাইলেই এটা হবে না। এটা করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
জেলা সংগঠক মোবাশ্বির আলিম বলেন, সবাই বলে ফ্যাসিবাদ ছিল ১৫ বছর। আমি মনে করি স্বাধীনতার পর থেকেই এটা চলছে। এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা গত ৪০ বছরের। পাকিস্তানিরা যেভাবে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যেত, স্বাধীন বাংলাদেশেও শাসকেরা আমাদের তুলে নিয়ে গেছে। যখনই যারা শাসক হয়েছে, লুটপাট করেছে, ধর্ষণ করেছে। কেউ সেবক হতে আসেনি। ১৯৭১ সালের পরে ৭৫ এ আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে, একটার পর একটা স্বৈরাচার এসেছে। কোনো দল দেশকে ভালোবাসেনি। আবারো যদি নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়, বাংলাদেশ আবার লড়াই করবে। আমার ভয় হয়, আমি বা আপনি ক্ষমতায় এসে ফ্যাসিস্ট হয়ে যায় কি না। লুটপাট কোথাও বন্ধ হয়নি। সব দখল হয়ে গেছে। দাসত্বের শৃঙ্খল যদি ভাঙতে না পারি বার বার ফ্যাসিস্ট ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করছি, ভোট এলে একটা দল ক্ষমতায় আসবে। আসলে তারা ক্ষমতায় চলে এসেছে। ওই রাজশাহী কোর্টে পিপি হলো, কে হলো? এটর্নি জেনারেল কে হলো? তারাই হয়েছে। এখন সমন্বয়কদের মধ্যে অনৈক্য দেখছি। কে কালো, কে ফর্সা, কে দেখতে একটু সুন্দর সেগুলো দেখা হচ্ছে। সমন্বয়কদের এক কমিটি আরেক কমিটিকে সভায় ডাকছে না। এগুলো বন্ধ করেন। না করলে আরেক ফ্যাসিবাদের কাছে জিম্মি হবেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক জাহিদ হোসেন বলেন, এক ফ্যাসিস্ট চলে গেছে। আরেক দল ফ্যাসিস্ট আচরণ নিয়ে সামনে আসছে। এমন কাউকে আমরা ক্ষমতায় আনব না যারা আমাদের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। আমরা চাই, দেশে সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। যারা ভারত নিয়ে মাতামাতি করবে, তার সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নয়।
সভা সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মহুয়া মৌ ও রোহানা হক সেতু।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- জাতীয় নাগরিক কমিটির মরিয়ম সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী মিশু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার, পৃষ্ঠপোষক রাশেদ রাজন, জাতীয় নাগরিক কমিটির স্থানীয় সংগঠক সাইফুল ইসলাম, আন্দোলনকর্মী নাহিদুল ইসলাম সাজু, শুভজিৎ রায় প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।