জুমবাংলা ডেস্ক : মাদারীপুরে জিয়াবুল হত্যা মামলার সাক্ষীকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অপহরণের ৫ দিন পর মোয়াজ্জেম সরদার ও মাকসুদা বেগম নামে স্বামী-স্ত্রীর হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দুপুরে কালকিনি উপজেলার আলিনগর ইউপির রাজারচর এলাকার একটি শুকনো খাল থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়। তাদের বাড়ি একই ইউপির পার্শ্ববর্তী কোলচরি স্বস্তাল এলাকায়। এদিকে মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে জিয়াবুল হত্যা মামলার আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
নিহত মোয়াজ্জেমের মেয়ে সাদিয়া আক্তার বলেন, আমার মা-বাবাকে ভাড়াটে লোক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার মা ও একমাত্র ভাই হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন। কৃষি কাজ করানোর জন্য দু্ইজন শ্রমিক ভাড়া করে এনেছিল বাবা। ঘটনার আগের দিন একজন চলে যায়। আমার মা বাবা নিখোঁজ হওয়ার রাতেই আশরাফ নামে এক শ্রমিক পালিয়ে যায়। ধারণা করছি শত্রুরা আশরাফকে সঙ্গে নিয়ে মা বাবাকে হত্যা করেছে। বাবা-মাকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই।
তিনি আরো বলেন, জিয়াবুল হত্যা মামলার আসামিরা মরদেহ উদ্ধারের পর পরই সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলে কেন পালাবে।
মামলার বাদী মোয়াজ্জেমের জামাতা মো. ইমরান সরদার বলেন, অপহরণের নাটক সাজিয়ে এটি পরিকল্পতি একটি হত্যাকাণ্ড। আমরা পুলিশের কাছে সব খুলে বলেছি। আশা করবো পুলিশ অপরাধীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
পুলিশ বলছে, ৩-৪ দিন আগে এই দম্পতিকে হত্যা করে মরদেহ খালে ফেলে রাখে অপহরণকারীরা। উদ্ধার হওয়া মরদেহ দুটির বিভিন্ন অংশ পচে গলে গেছে।
জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজারচর এলাকায় জিয়াবুল মোল্লা নামে এক যুবক খুন হন। জিয়াবুল হত্যা মামলায় আসামি করা হয় একই এলাকার বজলু বেপারী, হাবি বেপারীসহ বেপারী বাড়ির অনেকেই। এই মামলায় মোয়াজ্জেমের স্ত্রী মাকসুদা বেগম ও তার সৌদি প্রবাসী ছেলে সাঈদ সরদার ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষী। মোয়াজ্জেমের পরিবার স্বাক্ষী হওয়া নিয়ে বজলু বেপারীর সঙ্গে মোয়াজ্জেমের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মোয়াজ্জেম সরদার তার ফসলী জমিতে কৃষি কাজ করার জন্য ২ জন শ্রমিক ফরিদপুর থেকে ভাড়া করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারা মোয়াজ্জেমের বাড়ির একটি কক্ষে থেকে তার ফসলি জমিতে কাজ করতো। গত সোমবার ওই দুইজনের মধ্যে একজন ফরিদপুর চলে যান। ভাড়া করা দুই কৃষকের সঙ্গে সোমবার রাতে খাবার খান মোয়াজ্জেম ও তার পরিবার। রাতের খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে বাড়ির সবাইকে অচেতন করে ফেলে ওই দুই কৃষক। পরে ওই রাতেই মোয়াজ্জেম ও তার স্ত্রী মাকসুদাকে অপহরণ করে ভাড়া করা শ্রমিক আশরাফ ও তার সহযোগী।
মঙ্গলবার ভোর থেকে মোয়াজ্জেমের দুই মেয়ে বাবা-মাকে ঘরে না দেখে আশেপাশে খুঁজতে থাকে। একপর্যায় মুঠোফোনে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে শ্রমিক আশরাফ। পরে মোয়াজ্জেমের জামাতা মো. ইমরান সরদার মঙ্গলবার বিকেলে কালকিনি থাকায় শ্রমিক আশরাফ ও অজ্ঞাত আরো দুইজনকে আসামি করে একটি অপহরণের মামলা করেন। মামলা হওয়ার তিন দিন পরে শুক্রবার সকালে রাজারচর এলাকার একটি শুকনো খাল মোয়াজ্জেম ও তার স্ত্রীর মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে। এরপর বিকেল ৫টার দিকে মরদেহ দুটির সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
কালকিনি থানার ওসি ইশতিয়াাক আশফাক বলেন, মরদেহ দুইটি ৩-৪ দিন আগে থেকেই খালে পড়ে ছিল। মরদেহ বেশির ভাগই পচে গলে গেছে। তাই তাদের কিভাবে মারা হয়েছে সেটি বোঝা যাচ্ছে না। তবে মরদেহ দুটির হাত-পা গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। ধারণা করছি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
ওসি আরো বলেন, নিহত মোয়াজ্জেম তার বাড়িতে ২ শ্রমিককে ভাড়া করে এনেছিলেন। এক সপ্তাহের বেশি তারা মোয়াজ্জেমের বাড়িতে থেকে কাজ করেছে। অপহরণের সঙ্গে তারা জড়িত ছিল। তাই পুলিশ তাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু ওই শ্রমিকরা ফরিদপুরে যায়নি। এলাকায় কারো আশ্রয়ে আত্মগোপনে ছিল। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারাই জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। এ ছাড়াও স্থানীয় কিছু বিষয় নিয়ে তদন্ত করছি। আশা করছি খুব দ্রুতই জড়িতদের আটক করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।