জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুর থেকে চুরি যাওয়ার ১০ ঘণ্টা পর বগুড়া থেকে সাড়ে ৭ মাস বয়সী এক শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বগুড়া পৌর এলাকার একটি বাসা থেকে গতকাল সমবার ভোরে উদ্ধারের পর শিশুটিকে মা-বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আটক করা হয় শিশুটির বাবা রহিম উদ্দিনের চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা জান্নাত ও জান্নাতের বোন রাকিবা আক্তার আঁখিকে। পরে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠায় পুলিশ।
অপহরণের শিকার রিয়াদ হোসেন রোহান গাজীপুর মহানগরের বাঙ্গালগাছ এলাকার রহিম উদ্দিনের ছেলে। পেশায় তিনি রাজমিস্ত্রির সহকারী। দুই মেয়ে রেখে রহিমের প্রথম স্ত্রী কয়েক বছর আগে মারা যান। পরে হাবিবা খাতুনকে বিয়ে করেন। সাড়ে ৭ মাস আগে এ দম্পতির কোল আলো করে আসে ছেলেসন্তান। আদর করে নাম রাখেন রিয়াদ হোসেন রোহান।
রবিবার দুপুরে বাড়ির কক্ষে স্ত্রী হাবিবা খাতুনের সঙ্গে রোহানকে নিয়ে খেলছিলেন রহিম। এ সময় ঘরে আসেন রহিমের চাচাতো ভাই মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাত। তাঁকে দেখে বেরিয়ে যান রহিম। তাঁর এক চাচা রোহানকে নিয়ে যেতে বলেছে– এমন কথা বললে শিশুটিকে তৈরি করে জান্নাতের কোলে তুলে দেন মা হাবিবা।
তিনি বলেন, জান্নাত মাঝেমধ্যেই তাঁর শিশুকে কোলে নিত ও খুব আদর করত। এ কারণে কোনো সন্দেহ ছিল না তাঁর মনে।
কিছুক্ষণ পরই জান্নাতের কাছে রোহানের খোঁজ করলে তিনি শিশুটিকে নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। মুহূর্তেই কান্নার রোল পড়ে যায় বাড়িতে। এলাকার মসজিদের মাইকে রোহানকে চুরির সংবাদ জানানো হয়। সাড়া পড়ে যায় এলাকাজুড়ে। আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী ভিড় করেন বাঙ্গালগাছ এলাকার বাড়িতে। ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে সহযোগিতা চান রহিম উদ্দিন। খানিক পরই সেখানে যায় গাজীপুর সদর থানা পুলিশ।
রহিম বলেন, ‘রাস্তার পাশে জান্নাত তাঁর ছোট বোন রাকিবা আক্তার আঁখিকে দাঁড় করিয়ে আমার ঘরে ঢুকেছিল। রোহানকে নিয়ে দ্রুত তাঁর কাছে রেখে আবার সে চলে আসে। দশ মিনিট পর আমরা টের পাই রোহানকে অপহরণ করা হয়েছে।’ রোহান কোথায় বারবার জানতে চাইলেও জান্নাত কোনো তথ্য দেয়নি। এমনকি তাঁর ঘরে ঢোকার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মোঃ শামছুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার ফাহিম আসজাদের নেতৃত্বে সদর থানার একটি দল অভিযান শুরু করে। শিশুটি মা-বাবা ও চুরিতে জড়িত জান্নাতকে নিয়ে বগুড়ায় ছুটে যান তারা। বগুড়া সদর থানা পুলিশের সহায়তায় পৌর এলাকার একটি বাড়ি থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশুকে। পরে তাঁকে বাবা রহিম উদ্দিন ও মা হাবিবার কাছে তুলে দেওয়া হয়।
রহিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার দেহের ভেতর থাইক্যা পরাণডা উইড়া গেছিল। দশ ঘণ্টারও বেশি সময় আমার কলিজার
টুকরারে ছাড়াই আছিলাম।’
তাঁর স্ত্রী হাবিবা বলেন, ‘সমবার ভোরে বগুড়া সদর থানায় যখন আমাদের কোলে ফিরায়া দেওয়া হয় কলিজার টুকরাডারে, তখন আমরা প্রাণ ফিরা পাই।’
পরিবারের সদস্যরা জানায়, বাইরের খাবার খাওয়ানোয় শিশু রোহান অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে শিশুটিকে। তবে ফিরে পাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ওই পরিবারের সদস্যদের মাঝে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাত ও আঁখি জানিয়েছেন, নিঃসন্তান এক খালার জন্য ওই শিশুটিকে চুরির পরিকল্পনা করেছিলেন। সে অনুযায়ী রোহানকে বগুড়া নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় রহিম উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে দুই বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।