জুমবাংলা ডেস্ক : আমদানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার অফডকে পাঠানোর সিদ্ধান্তে বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) টাগ অব ওয়ার শুরু হয়েছে। বন্দরের ইয়ার্ড এড়িয়ে অফডক থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে গেলে খরচ যেমন চারগুণ বাড়বে তেমনি সময় ক্ষেপণ হবে তিনগুণ। বছরে যার আর্থিক ক্ষতির মূল্য ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বন্দরের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে এবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ।
পণ্য ডেলিভারি নিতে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান যেমন চট্টগ্রাম বন্দরে ঢুকে যানজটের সৃষ্টি করছে, তেমনি যানবাহনগুলোর সঙ্গে ১০ থেকে ১২ হাজার ড্রাইভার-হেলপার এবং কর্মচারী চট্টগ্রাম বন্দরকেই নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। এ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি পণ্য চুরি ঠেকাতে সব ধরনের ফুল কনটেইনার লোড (এফসিএল) কনটেইনার অফডক থেকেই খালাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
তবে বন্দরের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে দ্বিতীয় চিঠি পাঠিয়েছে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ। তাদের দাবি, বতর্মানে ২০ ফুট সাইজের একটি কনটেইনারের পণ্য বন্দর থেকে ডেলিভারি নিতে খরচ পড়ছে ৩ হাজার ৩০০ টাকা, আর ৪০ ফুট সাইজের কনটেইনারের ক্ষেত্রে ৪ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু বন্দরের পরিবর্তে অফডক থেকে ডেলিভারি নিতে গেলে খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ১২ হাজার ৬০৫ টাকা এবং ১৪ হাজার টাকা।
বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন,
প্রতি বছর এক হাজার কনটেইনার ডেলিভারি নিলে খরচ বেড়ে যাবে কোটি টাকার ওপরে। এর প্রভাব পুরো বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ওপর পড়লে বেড়ে যাবে পণ্যের দাম।
বছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৩২ লাখের বেশি কনটেইনার এবং ১২ কোটি মেট্রিক টন বাল্ক পণ্য হ্যান্ডলিং করছে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামালের পাশাপাশি রফতানির জন্য প্রস্তুত তৈরি পোশাক। আমদানিকৃত কাঁচামাল অফডক থেকে ডেলিভারি নেয়ার বিধান চালু হলে খরচের পাশাপাশি সময়ও বাড়বে বলে শঙ্কিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বন্দর থেকে সর্বনিম্ন একদিনে ডেলিভারি নিতে পারছেন আমদানিকারকরা।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে কাস্টমস থেকে একদিনে পণ্য ডেলিভারি পেলেও অফডকে সেটি পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ অফডকে কাস্টমস অফিসার যেয়ে পণ্য খালাসের অনুমতি দেয়া ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রচুর সময় ক্ষেপণ হবে।
পৃথিবীর কোনো বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার বিধান না থাকলেও নানামুখী চাপে চট্টগ্রাম বন্দর সেই কাজ করে আসছিল। আর এর ফলে কনটেইনার জটসহ চর্তুমুখী সংকটে পড়তে হয় বন্দর ব্যবহারকারীদের।
তাই ডেলিভারি ব্যবস্থা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে অনঢ় থেকে খরচ কমানোর ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাশাপাশি অফডক মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ বন্দর কর্তৃপক্ষের। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন,পণ্য খালাসে যা যা সহায়তা দরকার তার সবই করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আর অফডক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ডেলিভারি খরচ বাড়লেও জাহাজ ভাড়া কমিয়ে তা পুষিয়ে নিতে পারবে বিজিএমইএ।
উল্লেখ্য, বছরে ৬ থেকে ৭ লাখ রফতানি কনটেইনার, ২ লাখ আমদানি এবং ৫০ হাজর খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা রয়েছে অফডকগুলোর। বন্দরের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে অন্তত ২৫ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অর্জন করতে হবে অফডকগুলোকে।
৩৮ ধরনের আমদানি পণ্য ডেলিভারি দেয়ার পাশাপাশি রফতানি পণ্যের শতভাগ জাহাজীকরণ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক ২১টি অফডকে। দুই দশক আগে মূলত বন্দরের কাজে গতিশীলতা আনতে চালু করা হয়েছিল এই অফডকগুলো। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আর নতুন করে কোনো অফডকের অনুমোদন দেয়া হয়নি। তবে এখন কাজের পরিধি বাড়ায় নতুন নতুন অফডক তৈরির তাগিদ দিচ্ছেন আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।