গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: অবশেষে গাইবান্ধার সুদরগঞ্জে দুর্নীতি-লুটপাটসহ নানা অনিয়মে অভিযুক্ত ও বিতর্কিত সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুনবী সরকারকে বদলি করা হয়েছে। তাকে আগামী ১৬ অক্টাবরের মধ্যে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় যোগ দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হবে বলেও আদেশপত্রে উল্লেখ করা হয়।

রবিবার বিকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপ-সচিব (উপ-পরিচালক-প্রশাসন-২) লুত্ফুন নাহার স্বাক্ষরিত (২৮ সেপ্টম্বর) প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। পিআইও নুরুন্নবীর বদলির আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলহাজ মো. ইদ্রিস আলী।
তিনি বলেন, জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারণে পিআইও নুরুন্নবীকে সুদরগঞ্জ থেকে বদলি করে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় যোগদানের আদেশ জারি করে সংশ্লিষ্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
এর আগে, চলতি মাসে ‘ পিআইওর সম্পদের পাহাড় এবং ‘অফিসেই বসে ধূমপান করে সুন্দরগঞ্জের পিআইও’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর তাঁর লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হলে জেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে নড়েচড়ে বসে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেই ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাট জড়িয়ে পড়েন পিআইও নুরুন্নবী। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পিআইওর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে প্রমাণ পায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দুর্নীতি-লুটপাটের ঘটনায় ২০১৬-২০১৭ ও ২০১৮ অর্থবছর নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক চারটি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে স্থানীয় এক ঠিকাদারের দায়ের করা একটি মামলাও বর্তমান আদালতে বিচারধীন। দুর্নীতি ও মামলার কারণে তাকে বদলিও করা হয়। কিন্তু শ্রম আদালতে মামলা করে বদলির আদেশ ঠেকায় পিআইও নুরুন্নবী।
এরপর থেকে আরো বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটে এবং ক্ষমতার দম্ভসহ বিভিন্ন কারণে বেশ আলোচিত-সমালোচিত হয়ে উঠেন পিআইও। দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে তিনি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্যে পিআইও’র আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন স্থানীয় আবদুল হালিম। আবদুল হালিম অফিস বসেই নিয়মিত করতেন দেনদরবারসহ দাপ্তরিক কাজও। ফলে অল্প সময়ে দিনমজুর হালিম বিপুল অর্থ-বিত্তর মালিক হয়ে যান। তবে খবর প্রকাশের পর থেকে অনেকটা লাপাত্তা হালিম। এমনকি তাকে অফিস ও আশপাশের এলাকাতেও দেখা যায়নি।
এদিকে একাধিক অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ ও দুর্নীতির দায়ে দুদকের আসামি পিআইও নুরুন্নবীর বদলির খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ, শিক্ষক ও বিভিন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা।
তবে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এর আগেও কৌশল অবলম্বন করে বদলি ঠেকিয়েছিলেন পিআইও। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।