বিনোদন ডেস্ক: কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার সেই গাড়ি নিয়ে গুঞ্জনের জট খুলেছে। তার কাছ থেকে জব্দ করা বিলাসবহুল গাড়ি দুটির মালিক তিনিই। এর মধ্যে বিএমডব্লিউ এস২০৯ মডেলের সিলভার রঙের গাড়িটি ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আরেকজনের কাছ থেকে কিনে নেন পিয়াসা।
দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের অনলাইন ভার্সনে মিলেছে এমন তথ্য।
সূত্র বলছে, বিআরটিএর সার্ভারে পিয়াসার ব্যবহৃত বিএমডব্লিউ এস২০৯ মডেলের সিলভার রঙের গাড়িটির নিবন্ধন এখনো দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্সের নামে। গাড়ি কেনার পর অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও মালিকানা বদলের আবেদন না করার ফলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সার্ভারে আগের মালিকের প্রতিষ্ঠানের নামই থেকে গেছে। সে কারণে গাড়ির মালিক নিয়ে ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি। জট খুলতে গণমাধ্যমের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বেগ পেতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিএমডব্লিউ গাড়িটির মালিকানা পরিবর্তনের ব্যাপারে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আবেদন করেন পিয়াসা। গাড়িটি গত মাসে বিআরটিএতে পিয়াসার নামে রেজিস্ট্রেশন করা হলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চলা লকডাউনের জেরে সার্ভারে আপডেট হয়নি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পিয়াসা গাড়ি কেনার পর কেন দীর্ঘ সময়েও মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করেননি, তা নিয়ে বেশ সন্দিহান বিআরটিএ ও গাড়িটির আগের মালিকপক্ষও।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্স। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শফিকুল আলম মিথুন।
দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্সের মালিক শফিকুল আলম মিথুন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ আমারই ছিল। ২০১৮ সালে গাড়িটি আমি এঅ্যান্ডএ কার সেন্টারের কাছে বিক্রি করেছি। ট্যাক্সফাইল থেকেও গাড়িটা আমি রিডাকশন করে দিয়েছি। এঅ্যান্ডএ মূলত পুরনো গাড়ি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। তারা বিক্রি করেছে মিস্টার মানাম সাহেবের কাছে, আমারই ছোট ভাই ওটিবিএল-এর ডিরেক্টর।
তিনি আরও বলেন, মানাম সাহেব গাড়িটা বিক্রি করেছে নিড ফোর স্পিডের কাছে ২০১৯ সালে। নিড ফোর স্পিড নাকি গাড়িটি বিক্রি করেছে পিয়াসার কাছে। নিড ফোর স্পিডও পিয়াসার নামে বিআরটিএ-তে গাড়ির নাম ট্রান্সফার করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, পিয়াসার গাড়ি জব্দ হওয়ার পরই একবার সন্দেহ হয়েছিল। বুধবার গাড়িটি নিয়ে খবর প্রকাশের পর জানতে পারি- গাড়িটি এখনো আমার প্রতিষ্ঠানের নামেই আছে।
শফিকুল আলম মিথুনের ছোট ভাই মানাম গণমাধ্যমকে জানান, ভাইয়ার কাছে কেনার পর ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বারিধারার ৭১ প্রগতি সরণিতে অবস্থিত নিড ফোর স্পিড নামের একটি গাড়ির দোকানে এটি বিক্রি করে একটি পাজেরো কিনি।
তিনি বলেন, সেই ক্রয়-বিক্রয়ের কাগজপত্রও আমার কাছে আছে। এরপর আমি আর কিছু জানি না। হঠাৎ পিয়াসাকে গ্রেপ্তারের পর আমার সেই পুরোনো গাড়ি দেখে আঁতকে উঠি। তখনো ভাবিনি বিআরটিএতে গাড়িটি আমাদের নামেই আছে। গাড়িটির বর্তমান মালিকানার তথ্য আপডেট হয়নি। আমরা তো অনেক আগেই নাম পরিবর্তনের কাজ সেরে ফেলেছি।
নিড ফোর স্পিডের মালিক আতিক রহমান খান বলেন, পিয়াসাকে বিআরটিএ থেকে নাম পরিবর্তনের জন্য বারবার চাপ দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছিল না। একপর্যায়ে ফোনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি।
পিয়াসার বিএমডব্লিউ-এর ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা এক বছর আগের কথা। সম্ভবত ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে রিফাত বিন আলম নামের একজনের কাছ থেকে আমরা ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ এস২০৯ মডেলের সিলভার রঙের একটি গাড়ি এক্সচেঞ্জ করি।
তিনি বলেন, কাগজে-কলমে আমরা তাদের কাছ থেকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি কিনে আরেকটি পাজেরো গাড়ি তাদের কাছে বিক্রি করি। সে সময়ে রিফাত বিন আলমের সঙ্গে আমরা ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে গাড়ি বিক্রির চুক্তিনামাও করি।
গাড়িটির মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত বিআরটিএর একটি অনুলিপিতে দেখা যায়, গত ১২ এপ্রিল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ গাড়িটির মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করেন। আবেদনে রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ সই করে ১২ জুলাই। আবেদনে পিয়াসা তার বনানীর বাসার ঠিকানা ব্যবহার করেন।
বিআরটিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের সার্ভারে এখনো ঢাকা মেট্রো-গ-৩৯-৮৫৭৪ নম্বরের বিএমডব্লিউ গাড়িটি দ্য রিলায়েবল বিল্ডার্স নামেই নিবন্ধিত আছে। ২০২০ সালে এটার মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পরেও যদি আমাদের কাছে আসতে এত দিন লাগে, তাহলে বলতে হবে এর জন্য দায়ী তিনি, যিনি গাড়িটি কিনেছেন। এতদিন নাম পরিবর্তন না করে তিনি বেআইনি কাজ করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



