আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘ নয় মাস মহাকাশে কাটানোর পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরলেন নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে তাদের যাত্রা শুরু হওয়ার ১৭ ঘণ্টা পর স্পেসএক্স ক্যাপসুলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং সফলভাবে ফ্লোরিডা উপকূলে অবতরণ করে। গত বছরের ৫ জুন মাত্র আট দিনের জন্য আইএসএসে গিয়েছিলেন বুচ ও সুনিতা। তবে বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় তাদের ফিরে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
উদ্ধারের নাটকীয় মুহূর্ত: বাংলাদেশ সময় বুধবার প্রথম প্রহরে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ক্যাপসুলটি পানি থেকে তুলে নেয়। কিছুক্ষণ পর ক্যাপসুলের হ্যাচ খুললে, হাসিমুখে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস। তাদের সঙ্গে ছিলেন নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং রুশ মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গর্বুনভ। নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক স্টিভ স্টিচ সংবাদ সম্মেলনে জানান, পৃথিবীতে ফেরার পর চার নভোচারীর শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য টেক্সাসের জনসন স্পেস সেন্টারে নেওয়া হয়েছে।
স্টারলাইনারের ফিরে আসা: ২০২৪ সালের জুন মাসে মার্কিন মহাকাশযান নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের তৈরি স্টারলাইনার মহাকাশযানের প্রথম মনুষ্যবাহী পরীক্ষামূলক মিশন হিসাবে তারা যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে নভোচারীদের প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হয়। সেপ্টেম্বরে স্টারলাইনারটি খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়।
স্পেসএক্সের সহায়তায় সফল প্রত্যাবর্তন : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নাসা-স্পেসএক্স যৌথভাবে আইএসএসে ক্রু-নাইন মিশনের ফ্যালকন ৯ রকেট পাঠায়। এ মিশনের মাধ্যমে বুচ ও সুনিতাকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়। নাসার স্পেস অপারেশন মিশন ডিরেক্টরেটের ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো এই সফল মিশন সম্পর্কে বলেন, ‘ক্রু নাইনকে বাড়ি ফিরতে দেখে দারুণ লাগছে, সুন্দরভাবে তারা অবতরণ করেছে।’ পাশাপাশি তিনি স্পেসএক্সকে ‘চমৎকার পার্টনার’ হিসাবে অভিহিত করেন।
মহাকাশে গবেষণা ও রেকর্ড গড়া : দীর্ঘ এ সময় মহাকাশ স্টেশনে বুচ ও সুনিতা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালিয়েছেন। সুনি উইলিয়ামস মহাশূন্যে হেঁটে নারী নভোচারী হিসাবে সবচেয়ে বেশি সময় মহাকাশ স্টেশনের বাইরে কাটানোর রেকর্ড গড়েছেন। বড়দিনে তাদের পৃথিবীতে ফেরার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। ফলে মহাকাশ স্টেশনেই তারা সান্তা ক্যাপ ও রেইনডিয়ার শিং পরে উৎসব উদযাপন করেন।
নতুন চ্যালেঞ্জ : পৃথিবীতে ফেরার পর : দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রার পর শরীরের ওপর নানা ধরনের প্রভাব পড়ে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং দৃষ্টিশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাদের নিয়মিত ব্যায়াম ও কঠোর রুটিন মেনে চলতে হবে।
বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন তারা : মহাকাশে থাকাকালে বুচ ও সুনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘মিশন দীর্ঘ হলেও আমরা প্রস্তুত ছিলাম। তবে আমরা বাড়ি ফিরতে মুখিয়ে আছি।’ সুনি আরও জানান, তিনি তার পরিবার, কুকুরদের দেখতে এবং সাগরে ডুব দিতে মুখিয়ে আছেন।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা এখন ফিরে এসেছেন। আবারও পৃথিবীর মাটিতে দাঁড়িয়ে, প্রকৃতিকে ছুঁয়ে দেখতে পারছেন। এই সফল মিশন ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।