সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসের অবসরপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক কাম ক্লার্ক অলিয়ার রহমান খান চাকুরি শেষে অবসরে গেলেও অফিসের নিয়ন্ত্রণ এখনো নিজের দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা জাহান ও বর্তমান হিসাব রক্ষক কাম ক্লার্ক মো: ইব্রাহিম আল মামুনের যোগশাজসে এ কাজটি করছেন বলে অভিযোগ করেন অফিসটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ।
জেলা শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা জাহান অবসর প্রাপ্ত হিসাবরক্ষক কাম ক্লার্ক অলিয়ার রহমান খানকে দিয়ে অফিস পরিচালনা করে আসছেন। অলিয়ার রহমান খান ২০২১ সালের ৩১ মে পোস্ট রিটায়ারমেন্ট লিভ বা অবসর পরবর্তী ছুটিতে (পিআরএল) গেলে ওই বছরের ৭ জুন তারিখে মো: ইব্রাহীম আল মামুন যোগদান করেন। ইব্রাহীম আল মামুনকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে তার সকল কাজ অবসর প্রাপ্ত ক্লার্ক অলিয়ার রহমান খানকে দিয়ে করান। ফলে, বিভিন্ন শিক্ষকবৃন্দ অফিসিয়াল কাজ করতে এসে নানা রকম সমস্যার সম্মুক্ষিন হচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা জাহান ও অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক কাম ক্লার্ক অলিয়ার রহমান খান মিলে সিন্ডিকেট করে জেলার বিভিন্ন শিক্ষকদের জিম্মি করে বহুদিন ধরে নানা অপকর্ম ও দুর্নীতি চালিয়ে আসছে। জেলার বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক এবং কর্মচারি কোন কাজে অফিসে আসলে জেলা শিক্ষা অফিসার সকলকে অলিয়ার রহমান খানের কাছে পাঠিয়ে দেন এবং সেখান থেকে ফয়সালা করার পর জেলা শিক্ষা অফিসার ফাইলে স্বাক্ষর করেন। আর ফয়সালা না হলে স্বাক্ষর করেন না। এছাড়া তদন্ত সংশ্লিষ্ট কাজে তাহাকে খুশি করতে না পারলে তিনি তার বিপক্ষে রায় প্রদান করেন।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/সহকারি প্রধান শিক্ষক ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারি নিয়োগের জন্য মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি মনোনয়ন নেয়ার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে আসলে জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা জাহান সকল ফাইল অলিয়ার রহমান খানের নিকট প্রেরণ করেন এবং মোট অংকের অর্থ নিয়ে প্রতিনিধি মনোনয়ন দেন। এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অনলাইনে এমপিওভূক্তির জন্য অলিয়ার রহমান খান শিক্ষক ও কর্মচারীদের জিম্মি করে মোটা অংকের অর্থ নেন।
একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের সাথে এ নিয়ে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অলিয়ার রহমান খান অবসরে যাওয়ার পরেও নিয়মিত অফিস করেন। অফিসের আরো অনেক কিছুই হয়। আমরা সবকিছু বলতে পারিনা। অনেক কিছু আছে যেগুলো বলতে গেলে আমাদের নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয়।
এ নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, অভিযোগে যেসব কথা লেখা হয়েছে তা পুরোপুরি সত্য। কিন্ত আমরা অন রেকর্ডে কোন কথা বলতে পারবো না। আমরা এসব কথা বলেছি জানা জানি হলে আমাদের সমস্যা হবে।
তবে জেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক শাহ আলম অবসর প্রাপ্ত হিসাবরক্ষক কাম ক্লার্ক অলিয়ার রহমান খানের অফিসে আসার কথা স্বীকার করে বলেন, অলিয়ার স্যার মাঝে মাঝে অফিসে আসেন। তবে পুরো অফিস টাইম অফিস করেন না, কিছুক্ষণ থেকে চলে যান।
জেলা শিক্ষা অফিসের বর্তমান হিসাব রক্ষক কাম ক্লার্ক মো: ইব্রাহিম আল মামুন জানান, অলিয়ার স্যার অবসরে গেছেন ঠিক আছে, মাঝে মাঝে তার পেনশনের কাজের জন্য অফিসে আসেন। তিনি সিনিয়র মানুষ, অফিসে আসলে তাকে তার আগের চেয়ারে বসতে দেই। তার চেয়ারে আমিও বসি না, সাইডে রেখে দিয়েছি। তবে অলিয়ার স্যার অফিসে আসলেও তিনি অফিসিয়াল কোন কাজ করেন না। আমি এই অফিসে নতুন। আমি কিছু না বুঝলে হয়তো উনার হেল্প নেই, এর বাইরে কিছু না।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসের অবসরপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক কাম ক্লার্ক অলিয়ার রহমান খান বলেন, অবসরে যাওয়ার পর আমি অফিস করি না। কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আপনাদের বিভ্রান্ত করেছে।
মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা জাহান বলেন, আমার উপস্থিতিতে সে কখনো অফিসে আসে না, মাঝে মাঝে সে তার পেনশনের কাজের জন্য অফিসে আসে। আমার অফিস সহকারি ইব্রাহিম আছে, শাহীন আছে। অলিয়ার রহমান খান প্রায় দেড় বছর আগে পিআরএলে গেছেন। তার অবসরের পর তাকে দিয়ে আমি কোন কাজ করাইনি, এসময়ে অফিসিয়াল কাগজে তার স্বাক্ষরের প্রশ্নই উঠেনা। সে পিআরএলে যাওয়ার আগে কয়েকটা স্কুলে পরিদর্শনে যাওয়ার সময় তাকে নিয়ে গেছি, পিআরএলে যাওয়ার পর সে আমার সাথে কোথাও যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।