কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আরাজী পিপুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কনা খাতুনের বয়স না হলেও চাকুরীতে যোগদান করেছেন। এছাড়াও বিয়ে না করেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তুলছেন শিক্ষা ভাতার টাকা। বিষয়টি ধরা পড়েছে শিক্ষকদের ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার (ইএফটি) তথ্য পূরণ করতে গিয়ে।
শিক্ষিকা কনা খাতুন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চাকলি গ্রামের বখত জামান ও রেনু বেগম দম্পতির মেয়ে।
অনুসন্ধানে তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, কনা খাতুন ২০১০ সালে সিরাজগঞ্জের আরিয়া মহন স্কুল থেকে মানবিক বিভাগ হতে জিপিএ-৩.৬৯ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। এসএসসি সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ হলো ১৩ আগস্ট ১৯৯৫ সাল। কিন্তু চাকুরীতে প্রবেশের সময় তিনি জন্মসাল ব্যবহার করেছেন ১৩ আগস্ট ১৯৯০ সাল।
এদিকে তিনি অবিবাহিত হলেও নিজেকে বিবাহিত পরিচয় দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে ভুয়া সন্তানের নাম দেখিয়ে ৫শ’ টাকা করে নিয়মিত শিক্ষা ভাতা উত্তোলন করছেন।
চলতি বছর শিক্ষকদের ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার’র (ইএফটি) মাধ্যমে বেতন ভাতা প্রদান করার জন্য তথ্য আপলোড করতে গিয়ে প্রকাশ পায় শিক্ষকের এমন প্রতারণার বিষয়টি। ভুয়া জন্মসাল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিক্ষা ভাতা গ্রহণের বিষয়ে তাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছেন সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
শিক্ষক কনা খাতুন ২০১০ সালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আরাজী পিপুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
তখন স্কুলটি বেসরকারি ছিল। তিনিসহ ৪ জন শিক্ষক ছিলেন স্কুলটিতে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সরকার সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে। আর এই সুযোগে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকও সরকারি হয়ে যায়। ফলে কপাল খুলে যায় শিক্ষক কনা খাতুনের।
জেলা শহর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন আরাজী পিপুলবাড়ী চরে যেতে শ্যালো নৌকা ব্যবহার করতে হয়। সময় লাগে আধা ঘণ্টা। বিচ্ছিন্ন এই চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে তথ্য গোপন করে তিনি সুবিধা নিলেও টের পায়নি দ্বীপচরের নিরীহ মানুষ। স্কুলটিতে শিশু শ্রেণি হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২২৪ জন। ৫টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। সেখানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন রুনা।
গত ৪ জুলাই কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার ভুয়া জন্মসাল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিক্ষাভাতা গ্রহণের বিষয়ে কারণ দর্শানোর চিঠি প্রদান করেন। এই পত্রে জানানো হয়, পরিবারের প্ররোচনায় চাকুরিতে প্রবেশের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা “খ” ছকে লিপিবদ্ধ এবং অবিবাহিত হয়েও স্বামী-সন্তান না থেকেও ইএফটি’তে সেই তথ্য গোপন করেছেন। এবং শিক্ষা ভাতা উত্তোলন করার অভিযোগে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে নির্দেশ প্রদান করে শিক্ষা বিভাগ।
আরাজী পিপুলবাড়ী চরের বাসিন্দা ও অভিভাবক জহুরুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙনের কারণে এখানে কোন স্কুল ছিল না। ছিল না কোন শিক্ষিত মানুষ। পরে আমরা স্থানীয়দের উদ্যোগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করি। নেয়া হয় ৪জন শিক্ষক। রুনা আপা আত্মীয়তার সূত্রে এখানে চাকুরিতে যোগদান করেন। কিন্তু তার বয়স হয়েছিল কিনা সেটা আমরা যাচাই করতে পারিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষিকা রুনা খাতুন ভুয়া জন্মসাল এবং অবিবাহিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, বয়স ঠিকঠাক করে শোকজের জবাব দিয়েছি। তিনি আরও স্বীকার করেন সন্তান না থেকেও ২০১৭ সাল থেকে তিনি সন্তানের নামে ৫শ টাকা হারে শিক্ষা ভাতা তুলেছেন।
প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, স্কুলটি যখন বেসরকারি ছিল তখনই এক সাথে আমরা ৪জন শিক্ষক ২০১০সালে ২৫অক্টোবর এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। কিন্তু সহকারী শিক্ষকের জন্মসাল ভুয়া ছিল তা আমরা কাগজপত্র দেখে টের পাইনি। ইএফটি পূরণ করার সময় বিষয়টি সবার নজরে আসে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত শেষ হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।