অবৈধ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ সীমান্ত হত্যা নিয়ে ঢাকার কড়া প্রতিবাদ

জুমবাংলা ডেস্ক : সীমান্তে অবৈধভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং সম্প্রতি বিএসএফের গুলিতে একজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভর্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রতিবাদ এবং উদ্বেগ জানাতে বোরবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করেন।

এই তলব সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সীমান্তে এখন যা কিছু ঘটছে তা নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। অবৈধভাবে ভারতের পক্ষ থেকে কয়েকটি পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়াসহ সম্প্রতি একজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপারে দুদেশের মধ্যে যে সমঝোতা রয়েছে ভারতীয় পদক্ষেপ তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে ভারত যে যুক্তি দিচ্ছে তা বাংলাদেশ গ্রহণ করছে না। বিষয়টি ভারতীয় দূতকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে।

সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে ওই কর্মকর্তা জানান, আমরা ভারতীয় দূতকে বলেছি সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ভারত যেন সেটা রক্ষা করে। তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশের জন্য একটি স্পর্শকাতর ইস্যু। সীমান্তে কোনো লোক নিহত হলে এ দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বিষয়টির ভারতকে বিবেচনায় নিতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ভারতীয় দূতকে আমরা জানিয়েছি সীমান্তে এখন দুটি বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য দিল্লির কাছে ঢাকা ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করে।

সীমান্ত সমস্যা সমাধানে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকের পরে ভারতীয় হাইকমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, অপরাধশূন্য সীমান্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যাতে চোরাচালান, মানবপাচার ও অপরাধীদের চলাচল রোধ করা সম্ভব হয়।

তিনি জানান, নিরাপত্তার জন্য বর্ডার ফেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একটি সমঝোতা আছে। দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এর জন্য যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। আমরা আশা করি, যে সমঝোতা হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হবে। অপরাধ প্রতিরোধের জন্য দুপক্ষের মধ্যে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে বলে আমরা আশা করি।

প্রণয় ভর্মা বলেন, আমি পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিতের ব্যাপারে ভারতের প্রত্যয় নিয়ে কথা বলেছি। চোরাচালান, অপরাধীদের চলাচল, পাচারের চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে দমনের বিষয়ে আলোচনা করেছি।

এর আগে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) সাংবাদিকদের জানান, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো পক্ষ প্রতিরক্ষা সামর্থ্য আছে– এমন ধরনের কোনো কাঠামো তৈরি করতে পারবে না। দুদেশের মধ্যে ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৩ হাজার ২৭১ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত। বাকি আছে ৮৮৫ কিলোমিটার। সীমান্তে উত্তেজনার বিষয়টি আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারা ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করবেন।