জুমবাংলা ডেস্ক : বর্ষা মানেই পাহাড় ধসের শঙ্কা। তারপরও বন্ধ নেই এর পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। ২০১৭ সালে ভয়াবহ পাহাড় ধসের পরও কয়েকগুণ বসতি বেড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে। পাহাড় এলাকায় নাগরিক সুবিধা বাড়াই এর কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। এদিকে, রাঙ্গামাটি শহরে ৩১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এ অবস্থায় পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন বন্ধের পাশাপাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পরামর্শ দিচ্ছেন সুধীজনরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের ঢালে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠেছে বসতি। পাহাড়ধসের ঝুঁকি নিয়েই সেখানে বাস করছেন তারা। এ পরিস্থিতি শুধু রাঙ্গামাটি সদরের শিমুলতলী, রূপনগর, যুব উন্নয়ন ও রাঙাপানি এলাকায় নয়, জেলার কাপ্তাই, কাউখালী ও নানিয়ারচরসহ প্রায় সব উপজেলার একই অবস্থা। অথচ ২০১৭ সালের ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন এখনও পাহাড়ের বুকে দৃশ্যমান।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে পাহাড় ধসে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। তারপর এসব এলাকায় নাগরিক সুবিধা বেড়েছে অনেক। পাহাড়ে প্রশস্ত সড়কের পাশাপাশি লোকালয়ে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। এতে স্থানীয়দের মাঝে বসতি স্থাপনে আগ্রহ বাড়ছে। সবমিলিয়ে অবৈধ বসতিতে যেন বৈধ সুবিধা মিলছে! ফলে সেখানে জায়গার দাম বেড়েছে শতগুণ। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে প্রতিনিয়ত সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বাড়ছে। এ কারণে ঝুঁকি সত্ত্বেও জায়গা ছাড়তে রাজি হচ্ছেন না বাসিন্দারা।
শিমুলতলীর বাসিন্দা আবু বক্কর মিঠু বলেন, ‘এসব এলাকায় থাকতে তো ভয় লাগেই। আমরা জানি, ভারি বৃষ্টি হলে পাহাড় ধস হতে পারে। কিন্তু আমরা নিরুপায়। আমাদের থাকার কোনও জায়গা নেই। তাই ঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়ে থাকতে হয়।’
আরেক বাসিন্দা শফিক মিয়া বলেন, ‘এই জায়গা ছেড়ে আমরা যাব কেন? আমরা খাস জায়গা কিনে নিয়েছি। আমরা কোনও ঝুঁকিতে নেই।’
নুয়াদামের বাসিন্দা রকি চাকমা বলেন, ‘দুর্যোগ সবসময় হয় না; তাই আগের মতো ভয়ও পাই না। আমরা ভালো আছি। বৃষ্টি বাড়লে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাই। আশা করি, ২০১৭ সালের মতো ভয়াবহ অবস্থা আর হবে না।’
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রতিবছর বর্ষা এলে প্রশাসনের ঘুম হারাম হয়ে যায়। ভারি বর্ষণের মধ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। এখানেই শেষ নয়, তারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন কিনা সেটাও তদারকি করেন। কারণ, এসব মানুষ সুযোগ পেলেই ঘরে ফিরে যান। তাই আমাদের দাবি হলো, প্রথমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতি স্থাপন বন্ধ করতে হবে; পাশাপাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘রাঙ্গামাটিতে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকে। প্রাথমিকভাবে আমরা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেই। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পরে সরকারের সহায়তায় তাদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।