জুমবাংলা ডেস্ক : জন্মের ছয় মাস আগে হারিয়েছিলেন বাবাকে। মা আর বড় ভাইকে নিয়ে চলছিলো সংসার। কিন্তু অভাবের তাড়নায় ক্লাস এইটে উঠার পর বড় ভাই বললেন, তোমাকে চাষাবাদ করতে হবে। তাই মায়ে কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যাই কোটচাঁদপুরের এক শিক্ষকের বাড়িতে। সেখানে লজিং থেকে চলছিলো পড়ালেখা। পাশাপাশি তাদের কৃষি কাজও করতে হয়েছিলো। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে শিক্ষকের বড় ভাইকে সকালে কোরআন পড়ানোরও দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। এমন সংগ্রামী শৈশব-কৈশোর জীবনের গল্প ছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক সদ্য বিদায়ী মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলামের।
ঢাকায় এসে ভর্তি হন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে যা আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান পড়ার সময় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাতে একটি বাসা ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। টিউশনির ৩০ টাকা বেতনে কোনো মতে ঢাকায় টিকে থাকার সংগ্রাম চলছিলো। কিন্তু ফতুল্লা থেকে প্রতিদিন মুড়ির টিনে (যাত্রীবাহি বাস) করে বাসায় যাতায়াত করতে সময় লাগতো প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই ঘণ্টা। তাই আড়াই বছর রেললাইন ধরে পায়ে হেঁটে দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ফতুল্লায় যাতায়াত করতেন মো. সিরাজুল ইসলাম। জগন্নাথে পড়াশোনার একপর্যায়ে ঢাকায় টিকে থাকার জন্য দিনে ক্লাস, টিউশনির পাশাপাশি রাতে বেবি টেক্সি (বিকল্প) চলানো শুরু করেন।
সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮- এর ধারা ১৫-তে প্রদেয় ক্ষমতাবলে ব্যাংকসহ ‘২৯টি প্রতিষ্ঠান’কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা দেওয়ায় সাংবাদিকতার ওপর কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে কি-না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মুখপাত্র বলেন, ‘where there is a crisis, there is scope’ যেখানে সঙ্কট, সেখানে সুযোগ। তিনি বলেন, যখন রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার হয় তখন সাংবাদিকদের ডেকে ব্রিফিং করতে বলা হয়। আর যখন ৩৫এ নেমে আসে তখন কেন নয়?
দীর্ঘসময় অফিস করে রাতে বাসায় গেলে সাংবাদিকরা যখন কল দিতো তখন বিরক্ত হতেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তোমরা যখন রাতে বাসায় ফেরার পর আমাকে ফোন দিতে তখন বউয়ের কাছে আমার দাম বেড়ে যেতো। তখন তাকে বলতাম দেখো এরা এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফোন দেয়, না কথা বললে আগামীকাল দেশে উল্টাপাল্টা শুরু হয়ে যাবে। এমনকি আমার চাকরিও চলে যেতে পারে। তাই চাকরি বাঁচাতে এদের সঙ্গে কথা বলতেই হবে। তবে তোমাদের ফোনে আমি বিন্দুমাত্র অখুশি কিংবা বিরক্ত হতাম না। কারণ আমি আমার জীবনটাই চালিয়েছি ‘হাল্কা চালে হাওয়ার তালে’ এই নীতি দিয়ে। অনেক সময় অনেক নেগেটিভ নিউজের কারণে গভর্নর স্যারও আমাকে ডাকতেন, তখন আমি বলতাম স্যার ওরা কিছু ‘ক্যাচি ওয়ার্ড’ ব্যবহার করে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।
মো. সিরাজুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২২ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসরে গেলেন। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই কর্মকর্তা ১৯৮৮ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৪ বছরের চাকরি জীবনে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, এক্সপেন্ডিচার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, ইইএফ ইউনিট, রংপুর ও সিলেট অফিসে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি লালন শাহসহ বিভিন্ন শিল্পীদের গানের পর্যালোচনা লিখেছেন। এছাড়াও তিনি অর্থনীতি নিয়ে একটি বইও লিখেছেন।
সিরাজুল ইসলাম ৫ অক্টোবর ১৯৬৩ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকালে তিনি ভারত, বেলজিয়াম ও পাকিস্তানে সফর করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।