অভিনেত্রী মিথিলার ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে অনলাইনে তোলপাড় কেন?

মিথিলাআকবর হোসেন, বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশে বিনোদন জগতের তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রায়ই সরগরম হয়ে উঠে।

তারকাদের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি কিংবা ভিডিও ফেসবুক এবং ইউটিউবে ছড়িয়ে যায়।

যেমনটা হয়েছে সুপরিচিত অভিনয়শিল্পী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার ক্ষেত্রে। ইফতেখার আহমেদ ফাহমি নামের এক নাট্য পরিচালকের সাথে তার কিছু কথিত ছবি গত কয়েকদিন ধরেই ফেসবুকে ছড়িয়েছে এবং সেগুলো নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে।

বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা সাইবার ক্রাইম ইউনিটে একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে তারকাদের ব্যক্তিগত জীবনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টেনে আনা কতটা সঙ্গত?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরি গায়েন মনে করেন, যে কোন নাগরিকের ব্যক্তিগত বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টেনে আনা শুধু আপত্তিকরই নয়, ফৌজদারি অপরাধও বটে।

“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে এনে তাদেরকে মব জাস্টিসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এতে তার জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে”, বলছিলেন অধ্যাপক গায়েন।

অনেকে যুক্তি তুলে ধরেন যে, তারকাদের জীবনে কী ঘটেছে সেটি নিয়ে মানুষের আগ্রহ আছে।

কাবেরি গায়েন প্রশ্ন তোলেন, তারা তো বিষয়গুলো জনসম্মুখে করছেন না। যে বিষয়গুলো তারা জনসম্মুখে করছেন না, সে বিষয়ে অন্যদের আগ্রহ থাকবে কেন?

“আমি কারো ব্যক্তিগত জীবনে হানা দিতে পারি কিনা?”

বিনোদন জগতের তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে কাঁটা-ছেঁড়া চলছে সে বিষয়ে অনেকে ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সংগীত শিল্পী সোমনুর মনির কোনাল বলেন, তারকারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে কী করছে সেটি অন্যদের বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়।

“পাবলিক ফিগার ও পাবলিক প্রপার্টি – দুটো আলাদা বিষয়। আমি হয়তো পাবলিক ফিগার হতে পারি, কিন্তু আমি পাবলিক প্রপার্টি না,” বলছিলেন কোনাল।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, একজন মানুষ তার বেডরুমে কী করছে, রান্নাঘরে কী করছে, সেটা অন্যদের বিবেচ্য বিষয় হবে কেন?

সামাজিক ব্যাধি

অন্যের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা কিংবা ছবি ছড়িয়ে দেবার পেছনে কিছু নেতিবাচক মানসিকতা কাজ করে।

কাবেরি গায়েনের মতে, এটি হচ্ছে যৌন অবদমনের ফল। যৌন অবদমিত প্রবণতা নগ্নভাবে প্রকাশ হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

“আমরা লুকিয়ে অন্যের যৌন জীবন দেখার চেষ্টা করছি। একজন তো দেখছেই, অন্যকেও দেখাচ্ছে। এটা বিপদসীমা অতিক্রম করে গেছে।”

অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার কথিত ছবি নিয়ে মূলধারার কিছু সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে অভিনেত্রী মিথিলার কাছে প্রতিক্রিয়াও জানতে চেয়েছে।

এ বিষয়টিতে ঘোরতর আপত্তি তুলেছেন অধ্যাপক কাবেরি গায়েন। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ‘চরিত্র হনন’ করা হচ্ছে।

“তারা বেডরুমে কী করছে সেটা দেখার দায়িত্ব অন্য কাউকে দেয়া হয়নি।”

কাবেরি গায়েন বলেন, মূলধারার গণমাধ্যম অনেক সময় ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে প্রতিযোগিতা করছে।

প্রতিযোগিতার এই যুগে অনেক সময় মূলধারা গণমাধ্যম নিজেদের ‘অনিরাপদ’ মনে করছে বলে তাঁর ধারণা।

মূলধারার গণমাধ্যম মনে করছে মানুষে ফেসবুকে অনেক বিষয় দেখছে। সেদিকে নজর না দিলে তাদের কাটতি কমে যেতে পারে। এমন আশংকা থেকেই কিছু মূলধারার গণমাধ্যমও তাদের সীমারেখা নির্ণয় করতে পারছে না বলে উল্লেখ করেন কাবেরি গায়েন।

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *