স্পোর্টস ডেস্ক: জয়ের জন্য প্রয়োজন আর একটা গোল, টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার হয়ে শেষে শটটা নিতে আসলেন গনজালো মন্টিয়েল। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাকি নয়জন। মন্টিয়েলের নেয়া মাটিঘেষা শটটা ফ্রান্স দলপতি হুগো লরিসকে পরাজিত করতেই ছুট লাগালেন সবাই। কেবল একজন হাত দিয়ে চোখমুখ চেপে ধরে বসে পড়লেন। তিনি মেসি। ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে আর্জেন্টিনার বিজয় উল্লাসের শুরুটা ছিল এমনই।
বাংলাদেশের মতো আর্জেন্টিনার নিজ দেশের আপামর জনসাধারন নেমে আসে মাঠে, রাস্তায়। এ আনন্দ ৩৬ বছরের অপেক্ষার, এ আনন্দ বিশ্বকাপ জয়ের, এ আনন্দ মেসির ক্যারিয়ারের পুর্নতার।
কিন্তু এই জয়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি যার অবদান তার কথা কি কেউ জানেন? মেসিদের খেরার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বিশ্বজয়ের পেছনের কারিগর হলেন দুঃসময়ে দলের হাল ধরা কান্ডারী, দলের প্রধান কোট লিওনেল স্কালোনি।
ট্রাইব্রেকারে ফরাসিদের ৪-২ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর শিরোপা এবার মেসির হাতেই উঠলো। এর সঙ্গে সঙ্গেই আর্জেন্টাইন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম অংশ হয়ে গেলেন এই লিয়নেল স্কালোনি।
এই জয়ে আর্জেন্টিনার সাবেক বিশ্বকাপ জয়ী কোচ সিজার লুইস মেনোত্তি ও কার্লোস বিলার্দোর সঙ্গে সবর্কালের সেরা আর্জেন্টাইন কোচদের বেদীতে স্থান করে নিলেন লিওনেল স্কালোনি।
২০১৮ সালে জর্জ সাম্পাওলির রাজত্ব শেষ হবার পর অস্থায়ী ভিত্তিতে আর্জেন্টাইন কোচের দায়িত্ব নেন ৪৪ বছর বয়সি স্কালোনি। পরে অবশ্য আসনটিকে নিজের করে নেন তিনি এবং দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপাও এনে দিলেন তিনি।
আক্রমনাত্মক সাম্পাওলি ও গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা স্কালোনির মধ্যে সুস্পষ্ট কোন বৈপরিত্য নেই। রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোল থেকে বিদায় নেয়ার পর আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে তার নিয়োগ ব্যপক সমালোচনা ও বিরোধীতার মুখে পড়েছিল। তারা মনে করেছিল যে দায়িত্ব পালনের মতো যোগ্যতা স্কালোনির নেই।
তবে আর্জেন্টিনার সাবেক কোচ প্রয়াত দিয়েগো ম্যারাডোনা বিষয়টি পর্যবেক্ষনের পর স্কালোনির চরিত্রের প্রশংসা করেছিলেন। যদিও ক্লারিন নামের এক পত্রিকায় বলা হয় ‘ট্রাফিক পরিচালনায়ও সক্ষম নন তিনি’।
প্রধান কোচ হিসেবে এর আগের কোন অভিজ্ঞতা ছিলনা স্কালোনির। তবে সাম্পাওলির উত্তর সুরি খোঁজার জন্য মাত্র দুই মাসের জন্য স্কালোনিকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিল আর্জেন্টাইন ফেডারেশন। এই সময় তিনি এমন একটি ক্ষতবিক্ষত দল পেয়েছিলেন যারা ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে পরাজিত। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টানা দুইবার চিলির কাছে হেরেছে কোপা আমেরিকার ফাইনাল।
এদিকে দায়িত্ব গ্রহনের পরপর স্কালোনির কাছে গুরুত্বপুর্ন হয়ে দাঁড়ায় লিওনেল মেসির ভবিষ্যৎ। যিনি ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ব্যর্থতার কারণেও মেসির মোহ ভেঙ্গে গিয়েছিল।
কিন্তু দল নিয়ে স্কালোনির দৃষ্টিভঙ্গি দেখে মুগ্ধ হন মেসি। একই সঙ্গে তিনি কোচিং স্টাফ হিসেবে পেয়ে যান নিজের আইডল পাবলো আইমারকে। সেই সঙ্গে ছিলেন সাবেক সতীর্থ রবার্তো আয়ালা ও ওয়াল্টার স্যামুয়েল ।
নিজ ইমেজে জাতীয় দল গঠন করেছেন আর্জেন্টাইন এই কোচ। কাতারে অংশগ্রহনকারী ২৬ সদস্যের এই দলটির ১৯ জনই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনালের গোলদাতা জর্জ বুরুচাগা এএফপিকে বলেন, তিনি (নাহুয়েল) মোলিনা, ক্রিস্টিয়ান রোমেরো, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ ও (এ্যালেক্সিস) ম্যাক এ্যালিস্টার এর মতো খেলোয়াড়দের আবিস্কার করেছেন। যারা দলকে একটি পরিচয় এনে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং গত বিশ্বকাপেও লিওনেল মেসির সঙ্গে খেলার অপসন হিসেবে কাজ করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।