সরকার পরিবর্তনের পর অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে অস্থিরতা দেখা দিলেও ব্যাংক খাতে গত জুন শেষে দেখা গেছে বিপুল উদ্বৃত্ত তারল্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, জুন ২০২৫ শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, জুন শেষে ব্যাংকগুলোর মোট তারল্যের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। অথচ ন্যূনতম প্রয়োজনীয় তারল্য ছিল তিন লাখ চার হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ৬৫ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। এর আগের বছরের জুনে ব্যাংক খাতে মোট তারল্য ছিল চার লাখ ৭৩ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে তারল্য বেড়েছে প্রায় ৯৭ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক ভেদে বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জুনে সরকারি ব্যাংকগুলোর মোট তারল্য ছিল এক লাখ ৬৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা, যেখানে প্রয়োজন ছিল ৮০ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা।
উদ্বৃত্ত হয়েছে ৮৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য ছিল তিন লাখ ১৪ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা, প্রয়োজন ছিল এক লাখ ৭০ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত এক লাখ ৪৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে দুই হাজার ১১৩ কোটি টাকা থাকলেও প্রয়োজন ছিল দুই হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, ফলে ঘাটতি ছিল ৬২ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলোর তারল্য ৪৮ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা, প্রয়োজন ১৫ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৩৩ হাজার ৯৭ কোটি টাকা।
তবে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে কিছুটা সংকট দেখা গেছে-৩৭ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা তারল্য থাকলেও প্রয়োজন ছিল ৩৭ হাজার ৪৯১ কোটি। ঘাটতি দাঁড়ায় ৪৩৩ কোটি টাকা।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতে সংকট নিরসনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ছিল অনিশ্চয়তার মধ্যে। এতে বিনিয়োগ কমে যায় এবং ঋণ নেওয়ার আগ্রহও হ্রাস পায়। ফলে ব্যাংকে বাড়ে তারল্য।’
অন্যদিকে রেমিট্যান্সপ্রবাহে এসেছে রেকর্ড সাফল্য। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬.৮৩ শতাংশ বেশি। শুধু জুন মাসেই এসেছে ২.৮২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের জুনের তুলনায় ১১.১৩ শতাংশ বেশি। ২০২৫ সালের জুনে মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১.৭৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৬.৭১ বিলিয়ন ডলার। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে বিক্রি করেছে ৫০৩ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ৭৭ পয়সা, যা আগের বছরের জুনে ছিল ১১৮ টাকা।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, হুন্ডি কমে যাওয়ায় এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বাজারে চাপ কমেছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ আসায় রিজার্ভেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে একটি সবুজ সংকেত দেখা যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির দিকেও নজর রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রির স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল তিন লাখ ৪২ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। একই সময়ে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সরকারি পালাবদলের পর অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।