ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ও বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। এটি চালু হওয়ার সাথে সাথে খুলে যাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দুয়ার। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক বাণিজ্য একলাফে বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।
টানেলটি মূলতঃ এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে যুক্ত করে উন্নয়নকাজ ত্বরান্বিত করবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ ত্বরান্বিত করবে বঙ্গবন্ধু টানেল। সর্বোপরি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ জানান, টানেল চালু হলে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্ত আনোয়ারার দিকে প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ কমবে এবং পূর্ব প্রান্তের শিল্প কারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে।
তিনি আরও বলেন, কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পূর্ব প্রান্তে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে। এসব কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, রপ্তানি বাড়বে। ফলে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ দেশের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে।
আনোয়ারার উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ জুমবাংলাকে বলেন, ‘এই টানেল চালু হয়ে গেলে আমাদের এলাকায় আরো অনেক উন্নয়ন হবে। ইতোমধ্যে তার কিছু নমুনাও দেখতে পাচ্ছি। সরবারি বেসরকারি পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে টানেল রোডের আশ-পাশের জমির দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে। এতে স্থানীয় জমির মালিকরা যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কোরিয়ান ইপিজেড তো আছেই, সঙ্গে চীনা ইপিজেড তৈরি হচ্ছে। এগুলো হয়ে গেলে কেবল আনোয়ারায় নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রামে কোনো বেকারত্ব থাকবে না। অনেক ব্যবসায়ী এখানে কারখানা দেয়ার জন্য জায়গা কেনা শুরু করেছে।’
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১২ সালে সেতু কর্তৃপক্ষ, চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসিএল) ও অভি অরূপ অ্যান্ড পার্টনার্স হংকং লিমিটেড যৌথভাবে টানেল নির্মাণের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা করে।
২০১৪ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে (সরকারের সঙ্গে সরকারের) সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীন সরকারই সিসিসিসিএলকে এই টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে। এ বিষয়ে ওই বছরের ৩০ জুন সেতু কর্তৃপক্ষ ও সিসিসিসিএলের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘এই বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। নদীর দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন হবে। ইতোমধ্যে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড আছে, চীনা অর্থনৈতিক জোনও শুরু হওয়ার পথে।
তিনি বলেন, ‘টানেল চালু হয়ে গেলে আরও অনেক শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। সেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। আবাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। মোট কথা সেখানে উপশহর গড়ে উঠবে। এতে চট্টগ্রাম শহরের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমবে। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের অর্থনীতির আকার বড় হবে। জিডিপি বাড়বে। খুলে যাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দুয়ার।’
ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ফিনান্সিয়াল ও ইকোনোমিক আইআরআর এর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া ফিনান্সিয়াল ও ইকোনোমিক ‘বেনিফিট কস্ট রেশিও (বিসিআর)’ এর পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ১ দশমিক শূন্য ৫ এবং ১ দশমিক ৫। ফলে কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে জিডিপিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
টানেলের প্রকল্প পরিচালক জানান, আমরা সময়মতো টানেলটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় এবং আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করছি। টানেলের ৯৭.২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করেছি। এখন টানেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তা কাজ চলছে। প্রকল্পের বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামী সেপ্টেম্বরে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।