কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলা ও সদ্য গঠিত লালমাই উপজেলা এই তিন ইউনিটের আওয়ামীলীগের সভাপতি হলেন অর্থ মন্ত্রী লোটাস কামালসহ তারা আপন তিন ভাই। এর মধ্যে আবার বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবেও আছেন।
আবার সদর দক্ষিণ উপজেলার চেয়ারম্যানও ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার। আর লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন অর্থ মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা রতন সিং। এছাড়া এই দুই উপজেলার কমিটিতে আরো ৬ পরিবারের সদস্য আছেন দুই জন করে। একই পরিবারের দখলে দলের সর্বোচ্চ এতগুলো পদ হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ায় এহেন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না কেউ। চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতিতে এমন কি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে হঠাৎ করে ডেকে সম্মেলন নাম দিয়ে অর্থ মন্ত্রীর দুই ভাই তার নির্বাচনী এলাকা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হন।
যদিও মন্ত্রীর দুই ভাই লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রথম সভাপতি আবদুল হামিদ ও সদর দক্ষিণ উপজেলার সভাপতি গোলাম সারওয়ার বলেছেন, আমরা দুই ভাই আওয়ামীলীগের সভাপতি হতে চাইনি। মন্ত্রী মহোদয়ও এতে রাজি ছিলেন না। এলাকার নেতাকর্মীদের চাপে আমরা দলীয় পদ নিতে বাধ্য হয়েছি। তাছাড়া যোগ্যতা থাকলে তো আর কোন সমস্যা থাকার কথা না।
জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর সম্মেলন করে লালমাই উপজেলা আর ১৬ সেপ্টেম্বর একই ভাবে সম্মেলন করে সদর দক্ষিণ উপজেলা। সেই সম্মেলনে লালমাই উপজেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি হন অর্থ মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আহম মোস্তাফা কামাল ওরফে লোটাস কামালের বড় ভাই আবদুল হামিদ আর সাধারণ সম্পাদক হন মন্ত্রীর এপিএস রতন কুমার সিং। আর ১৬ সেপ্টেম্বর কতিথ সম্মেলনে সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হন উপজেলা চেয়ারম্যান ও মন্ত্রীর আপন ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কোন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন না। এমন কি ছিলেন না কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও অর্থ মন্ত্রী লোটাস কামাল এমপি ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক মজিব এমপি।
লালমাই উপজেলা ও সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামীলীগের এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন মজুমদার।
এ বিষয়ে লালমাই উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রথম সভাপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, আমরা দুই ভাই আওয়ামীলীগের সভাপতি হতে চাইনি। মন্ত্রী মহোদয়ও এতে রাজি ছিলেন না। এলাকার নেতাকর্মীদের চাপে আমরা দলীয় পদ নিতে বাধ্য হয়েছি। তাছাড়া যোগ্যতা থাকলে তো আর কোন সমস্যা থাকার কথা না।
এদিকে, সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিদায়ী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুম হামিদ। তিনি বলেন,আমি দলের ভারপাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরেও জানি না কবে কোথায় কে দলের সম্মেলন করছে।
ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলন তো চুপিচাপি হওয়ার কথা না। যে সম্মেলনে আমার নেতা জেলা সভাপতি লোটাস কামাল ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক আসেন নি, কেন্দ্রীয় কোন নেতা আসেন নি সেই সম্মেলন সদর দক্ষিন উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মেনে নেয় নি এবং মেনে নিতে পারে না।
কাউকে কিছু না বলে অতি গোপনে একটি রুমে বসে কমিটি ঘোষনা দিলেই কি সম্মেলনের বৈধতা পেয়ে যাবে? ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুম হামিদ আরো বলেন, সম্মেলনের আগের দিন আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের উপজেলা সভাপতি সারওয়ার ভাই ফোন করে বললেন, আগামীকাল সম্মেলন, তুমি থাকবা। আমি তাকে বলেছি, কিসের সম্মেলন, কে ডাকল সম্মেলন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তো সম্মেলন আমার ডাকার কথা।
তখন তিনি বললেন, হামিদ ভাই(লালমাই উপজেলার সদ্য গঠিত কমিটির সভাপতি) ও মালেক ভাই (লালমাই উপজেলার চেয়ারম্যান) সম্মেলন ডেকেছে। আমি বলেছি, যেই সম্মেলনে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা নেই সেই সম্মেলনে আমি এবং নেতাকর্মীরা থাকতে পারে না।
এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি গোলাম সারওয়ার বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাসুম হামিদ কি কাজ করেছে তাকে জিজ্ঞেস করুন। তিনি সব সময় ঢাকা পড়ে থাকেন।
ঢাকা থেকে কিভাবে দল চলবে। সম্মেলন ডেকেছে দলের সভাপতি আবদুল মালেক। সভাপতিও তাকে বলেছেন আমি নিজেও তাকে সম্মেলনে থাকতে বলেছি। কিন্তু সে থাকে নি।গত নির্বাচনে দলের সেক্রেটারি হয়েও নিজের কেন্দ্রে সে থাকতে পারেনি। তার সব ভাই বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তার সাথে কোন নেতাকর্মী নেই।
অর্থমন্ত্রীসহ আপনারা তিন ভাই আওয়ামীলীগের তিন ইউনিটের সভাপতি এ বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষন করলে সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি গোলাম সারওয়ার বলেন, মন্ত্রী মহোদয় বার বার দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছেন, আমার ভাইদের তোমরা সভাপতি করিওনা। কিন্তু নেতাকর্মীরা মানে নি।
নেতাকর্মীরা মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছেন, আপনি প্রকাশ্য ভোট দিন আমরা হামিদ ভাই ও সরওয়ার ভাইকে ভোট দিব। এই দুই উপজেলায় এই দুই জন ছাড়া নেতাকর্মীরা অন্য কাউকে সভাপতি মানতে রাজি নয়। আমার বাসা ঢাকা। আমি রাজনীতির জন্য সংসার ফেলে এলাকায় জনগনের জন্য, দলের জন্য কাজ করছি। ব্যবসা বানিজ্য ছেড়ে রাজনীতি করছি।
এ সকল যারা বলে তারা দলের ভাল চায় না, মঙ্গল চায় না। আবারো বলছি, লালমাই উপজেলার নেতাকর্মীদের অনুরোধে হামিদ ভাই আর সদর দক্ষিণ উপজেলায় নেতাকর্মীদের অনুরোধে আমি সভাপতি হতে বাধ্য হয়েছি। সূত্রঃ বাংলাদেশ টুডে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।