স্পোর্টস ডেস্ক: শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) স্বপ্নের মতো একটি দিন কাটায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনের সকালটা বাদ দিলে গোটা দিন লেখা হয় স্বাগতিকদের নামে। দিন শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৫৩ রান টাইগারদের। কিন্তু দ্বিতীয় দিন সেখান থেকে বেশিদূর যেতে পারলো না স্বাগতিকরা। শনিবার দিনের প্রথম সেশনে ৭৫ রান যোগ করতেই শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
মাত্র ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি মুশফিক। লিটন আউট হয়েছেন ১১৪ রানে। ফিফটির সম্ভাবনা জাগালেও সঙ্গীর অভাবে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকতে হয়েছে মেহেদি হাসান মিরাজকে। বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ৩৩০ রানে। পাকিস্তানের পক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছেন হাসান আলি।
আগেরদিন করা ৪ উইকেটে ২৫৩ রান নিয়ে আজকের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বাঁহাতি স্পিনার নৌমান আলি করেন দিনের প্রথম ওভার। সেই ওভার থেকে একটি করে সিঙ্গেল নেন প্রথম দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস।
অপরপ্রান্তে আক্রমণে আনা হয় ডানহাতি পেসার হাসান আলিকে। তার ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন লিটন। আম্পায়ার প্রথম আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে সাফল্য পায় পাকিস্তান। আউট হওয়ার আগে ১১ চার ও ১ ছয়ের মারে ২৩৩ বল থেকে লিটন করেন ১১৪ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ২০৬ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি।
এরপর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি অভিষিক্ত ইয়াসির আলি রাব্বি। মুখোমুখি ১৪তম বলে শাহিন আফ্রিদিকে দর্শনীয় এক কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন তিনি। কিন্তু হাসান আলির ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে ৪ রানেই থামে ইয়াসির রাব্বির ইনিংস।
ইনিংসের ৯৩তম ওভারে শাহিন আফ্রিদির বলে আউটসাইড এজ থেকে পাওয়া বাউন্ডারিতে ৮৭ থেকে ৯১ রানে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুশফিক। এরপর একের পর এক ডট খেলে টানা পাঁচ ওভারে আর রান করতে পারেননি তিনি। সেই ৯১ রানেই ১৪টি বল খেলেন মুশফিক।
দ্বিতীয় দিনে ৯৯তম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসেন ফাহিম আশরাফ। তার করা পঞ্চম ডেলিভারিটি ছিল হালকা রাইজিং ইনসুইঙ্গার। যেটি ডিফেন্ড করতে গিয়ে লাগে মুশফিকের ব্যাটের বাইরের কানায়। বোলার-ফিল্ডারদের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন মুশফিক। টিভি রিপ্লে’তে দেখা যায় বল যখন মুশফিকের ব্যাট অতিক্রম করছিল তখন তার ব্যাট প্যাডের সঙ্গেও লেগে ছিল। কিন্তু আল্ট্রাএজে স্পাইক দেখা যাওয়ায় মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন থার্ড আম্পায়ার গাজী সোহেল।
ফলে ৯১ রানেই থেমে যায় মুশফিকের ২২৫ বলে ইনিংস। ক্যারিয়ারে এর আগে ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫, ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৩ ও ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯২ রান করে আউট হয়েছিলেন মুশফিক। এর মধ্যে ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল চট্টগ্রামেই।
স্বীকৃত সব ব্যাটারদের বিদায়ের পর অষ্টম উইকেটে ২৮ রান যোগ করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। এ জুটিতে পূরণ হয় দলীয় ৩০০ রান। ফাহিমের করা ১০১তম ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান মিরাজ। পরে সাজিদ খানের ওভারে উইকেট ছেড়ে বেরিয়েও মারেন চার।
১০৭তম ওভারে মিরাজ-তাইজুলের জুটি ভাঙেন শাহিন আফ্রিদি। ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ধরা পড়েন তাইজুল। তার ব্যাট থেকে আসে ২৮ বলে ১১ রান। আউট হওয়ার আগে বলে নিজের একমাত্র বাউন্ডারিটি মারেন তাইজুল।
এরপর ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ রাহিকে নিয়ে আরও কিছু দূর এগিয়ে যান মিরাজ। ইনিংসের ১০৯তম ওভারে শাহিন আফ্রিদির করা খাট লেন্থের ডেলিভারিতে দৃষ্টিনন্দন এক পুল শটে চার মারেন তিনি। দুই ওভার পর নৌমানের বলে লং অন দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান রাহি।
উইকেটে ততক্ষণ পুরোপুরি সেট মিরাজ। হাসান আলির করা ১১৩তম ওভারে অফস্ট্যাম্পের বাইরে থেকে খাটো লেন্থের ডেলিভারিকে মিড উইকেট দিয়ে পুরোদস্তুর ব্যাটারদের মতো উড়িয়ে মারেন তিনি, পেয়ে যান চার রান। শেষ বলে দ্রুত এক রান নিয়ে স্ট্রাইক রাখেন নিজের কাছেই।
কিন্তু হাসান আলির পরের ওভারে আর অপরপ্রান্তের ব্যাটারদের বাঁচাতে পারেননি মিরাজ। ওভারের দ্বিতীয় বলে এক রান নিয়ে রাহিকে স্ট্রাইক দেন তিনি। পরের বলেই স্লিপে ধরা পড়েন দুই চারের মারে ৮ রান করা রাহি। আর মুখোমুখি প্রথম বলে বোল্ড হন এবাদত হোসেন।
শেষ পর্যন্ত মিরাজ অপরাজিত থেকে যান ৩৮ রানে। তার ৬৮ বলের ইনিংসে ছিল ছয়টি চারের মার। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফাইফার নিতে হাসান আলি খরচ করেছেন ৫১ রান। এছাড়া ফাহিম আশরাফ ও শাহিন আফ্রিদি নিয়েছেন দুইটি করে উইকেট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।