অলিভ অয়েল না-কি নারকেল তেল! আপনার ত্বকের জেল্লা বাড়াতে, চুলের গোড়া মজবুত করবে কোনটি?
জুমবাংলা ডেস্ক : শুধু শীতকাল নয়, সারা বছরই ত্বক, চুলের যত্নে অনেকেই অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন। স্বাস্থ্য সচেতন যাঁরা, তাঁরা রান্নাতেও অলিভ অয়েল ব্যবহার করে থাকেন। কারণ, অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন ই, মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যা হৃদ্রোগ এবং ক্যানসারের মতো জটিল দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।তবে এখানের প্রসঙ্গটা শারীরিক নয়। প্রসাধনী হিসেবে কে কাকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অলিভ অয়েল নাকি নারকেল তেল এগিয়ে এই প্রতিযোগিতায়? সম্প্রতি অলিভ অয়েলকে বলে বলে টেক্কা দিচ্ছে নারকেল তেল। যতই বিদেশি প্রসাধনী বাজার ছেয়ে যাক। সাধারণ মানুষ থেকে সেলেব, সকলেরই প্রথম পছন্দ নারকেল তেল।
চুলের যত্নে নারকেল তেলের জুড়ি মেলা ভার। ঘন কালো চুল পেতে নারকেল তেলের কোনও বিকল্প নেই। তবে শুধু চুলের জন্যই নয়। নারকেল তেল আপনার ত্বকের জন্যও বেশ ভালো। রোজকার ত্বকের যত্নে নারকেল তেলের বিকল্প খুঁজে পাওয়া দায়। রূপচর্চার যেকোনও সমস্যার সহজ সমাধান নারকেল তেল। তবে অলিভ অয়েল অর্থাৎ জলপাই তেল নাকি নারকেল তেল। কোনটি আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য সবথেকে ভালো, সেটি নিজেরাই যাচাই করে নিন। কোনটি রোজ ব্যবহার করা যেতে পারে, সেটি সম্পর্কেও ধারণা তৈরি হবে আপনার।
নারকেল তেলের ধরণ
নারকেল তেল সম্পর্কে যে যে রিপোর্ট আমরা পড়েছি। সেই রিপোর্টগুলির বেশিরভাগটাই তৈরি হয় অপরিশোধিত নারকেল তেল থেকে। আমরা সাধারণত যে ধরণের পরিশোধিত নারকেল তেল ব্যবহার করি, তা দিয়ে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। অপরিশোধিত নারকেল তেল টাটকা নারকেলের শাঁস থেকে দুধ এবং জল আলাদা করে সেখান থেকে তৈরি করা হয়। আর অন্যদিকে পরিশোধিত নারকেল তেল শুকনো নারকেল থেকে বের করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে এই তেল নিষ্কাশনে রাসায়নিক প্রক্রিয়াও ব্যবহার করা হয়। অপরিশোধিত বা ভার্জিন নারকেল তেল শরীরের পক্ষে উপকারী। কারণ অপরিশোধিত তেলে পুষ্টিকর উপাদান যথেষ্ট মাত্রায় থাকে।
ত্বকের জন্য নারকেল তেল কেন ভালো?
নারকেল তেলের মধ্যে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড। সেই কারণে এই তেল মুখে মাখলে ত্বক থাকে নরম। কারণ এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। এছাড়াও ত্বকের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে নারকেল তেল। এই তেলে থাকা লিনোলেনিক অ্যাসিড ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে নারকেল তেলে। তাই আপনার চামড়ায় যদি কোনও সংক্রমণের জেরে জ্বালা-যন্ত্রণা হয় তাহলে তা নারকেল তেল সারিয়ে তুলতে পারে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফলে আপনার ত্বকে সানবার্ন এবং প্রিম্যাচিওর এজিংয়ের সমস্যা তৈরি হয়। ত্বক পুড়েও যায়। আবার ত্বকে সহজেই বয়সের ছাপ পড়ে। আর এই সমস্ত সমস্যাকে এক ঝটকায় ঠিক করে দিতে পারে নারকেল তেল।
আপনার ত্বক কি তৈলাক্ত? তাহলে নারকেল তেল প্রয়োগের ক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকটি পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। তাহলে আপনার ত্বকের তেলতেলে ভাব কমে যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে আপনার ত্বকের সহ্যক্ষমতা ঠিক কেমন সেটি জানা আবশ্যিক। আর সেই কারণে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
যাইহোক, একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে এই বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এর ফলাফলগুলিও ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে, কারণ প্রত্যেকের ত্বকের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়ার বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
অলিভ অয়েলের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে
অলিভ অয়েল প্রসাধনী সামগ্রী হিসেবে কতটা কার্যকরী, তা হয়তো আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। নারকেল তেলের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে অলিভ অয়েলে। এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ত্বকের ভিতরে গিয়ে তার প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় খনিজের জোগান দেয়। এর প্রভাবে ত্বক উজ্জ্বল থাকার পাশাপাশি টোনডও থাকে। আইব্রো করার পর কিংবা দাঁড়ি কাটার পর জ্বালা করে ত্বকে। সেই সময়ে যদি কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল লাগিয়ে দেন ওই জায়গায়। তাহলে ম্যাজিকের মতো জ্বালা কমিয়ে দেবে অলিভ অয়েল।
অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করে কিউটিকল, ফাটা গোড়ালি, কনুই ও হাঁটুর কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনার হাত ও পা যদি খুব শুষ্ক হয়ে পড়ে, তাহলে এই তেল সেটি মসৃণ করতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল ত্বকের পরম বন্ধু। স্নানের আগে সারা গায়ে তেল মেখে রাখতে পারেন। কয়েকদিন পর থেকেই টের পাবেন এই তেল আপনার শরীরের জন্য কতটা উপকারি। স্নানের পর তেল ধুয়ে গেলেও ত্বক মসৃণ এবং নরম রাখে অলিভ অয়েল৷
ব্যবহার, ত্বক যেমন তেল তেমন
অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করলে কয়েকদিনের মধ্যেই উপকার পাবেন। এটি ত্বকের ওপেন পোরস বন্ধ করতে সাহায্য করে। আমাদের ত্বকের সারফেসে শ্বাস নেওয়ার জন্য ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। সেটিকেই ইংরেজিতে বলা হয় পোরস। সেটিও সঠিক রাখতে সাহায্য করে অলিভ অয়েল। শরীর ম্যাসাজের জন্য অলিভ অয়েলের বিকল্প কিছু ভাবাই যায় না। এটি ত্বকের উপর ঘন আস্তরণ হিসেবে থাকে। কিন্তু, যদি আপনার ত্বকে যদি ব্রণর সমস্যা থাকে এবং এটি আপনি মুখে মাখেন তাহলে ব্রণ বেরোনোর সম্ভাবনা থাকতে পারে।
এটি নারকেল তেলের পুরোপুরি বিপরীত। আপনি যদি মালিশের জন্য নারকেল তেল ব্যবহার করেন, এটা আপনার ত্বক পুরোপুরি শুষে নেবে। আপনি যে তেল মেখেছেন সেটি বোঝাই যাবে না। ত্বকের উপরের অংশে আপনি শুষ্কতা অনুভব করবেন।
মেক-আপ রিমুভার হিসেবে অলিভ অয়েল এবং নারকেল তেল, এই দুইয়ের কোনও তুলনাই হয় না। তাই সেলেব থেকে সাধারণ মানুষ, অনেকেরই মেক-আপ রিমুভার হিসেবে বাজারচলতি কোনও প্রোডাক্টের উপর খুব একটা ভরসা করে না। খুব শুষ্ক যাদের ত্বক তারা ছাড়া সমস্ত ত্বকের জন্য নারকেল তেল খুবই ভালো। নাইট সিরাম হিসেবেও এটি ব্যবহার করতে পারেন।
নারকেল তেল আপনার ত্বকের সমস্ত ময়লা টেনে নেয়। কিন্তু সেটি আপনার ত্বক দেখলে কখনই বোঝা যাবে না। আপনার ত্বক যদি খুব বেশি তৈলাক্ত হয়, তাহলে মেক-আপ তুলে ফেলবার পর ভেজা কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নেবেন। নাহলে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। অ্যাকনে, ব্রণর সমস্যা থাকলে নারকেল তেল ব্যবহার না করাই ভালো। তবে ব্রণর দাগ তুলতে ব্যবহার করতে পারেন নারকেল তেল। চোখের, ঠোঁটের মেক-আপের জেদি দাগ তুলতে এই তেল আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। তবে তেল দিয়ে মেকআপ তোলার পর অবশ্যই ক্লিনজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
অলিভ অয়েল, ভালো চুলের গোড়ার কথা
আপনার চুলের আগা ফেটে যাচ্ছে? রোদ, হিট স্প্রে ব্যবহারে চুলের অবস্থা পুরোপুরি খারাপ? তাহলে শ্যাম্পু করবার আগে চুলের ম্যাসাজ তেল হিসেবে অলিভ অয়েল অসাধারণ কাজ করে। এটি চুলের গোড়াকে মজবুত করে। চুলকে নারকেল তেলের তুলনায় অনেক বেশি মোলায়েম ও আর্দ্র করে তোলে অলিভ অয়েল। যদিও নারকেল তেল অপেক্ষাকৃত সস্তা। এছাড়া মা ঠাকুমাদের কাছে আজও ভরসার তেল হচ্ছে নারকেল তেল। তাই আমাদের মতামতা হল, বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করুন অলিভ অয়েল। মাথা ও চুলের ক্ষেত্রে আলাদাই সৌন্দর্য দেবে অলিভ অয়েল। তাই হাতের কাছে বাড়িতে একটি অলিভ অয়েলের শিশি রাখুন।
অলিভ অয়েল, নারকেল তেলের যুগলবন্দি হোক
নারকেল তেল এবং অলিভ অয়েল কয়েক ফোঁটা নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই তেলের মিশ্রণ আপনার মুখের পাশাপাশি আপনার ত্বকেও ম্যাসাজ করুন। আপনার ত্বক যদি বেশি শুষ্ক হয়, তাহলে নারকেল তেল আগে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করে নিন। যখন পুরো তেল আপনার ত্বক টেনে নেবে তখন অলিভ অয়েল নিয়ে ম্য়াসাজ করতে পারেন। এই দু’টো তেলই আপনার ত্বকের জন্য অভাবনীয়। স্নানের আগে অলিভ অয়েল এবং নারকেল তেলের এই মিশ্রণ লাগিয়ে নিন। এরপর মুখে তেল টেনে নিলে ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিন। এই দুই তেল আপনার ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং ত্বক রাখে সুন্দর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।