জুমবাংলা ডেস্ক:ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে ট্রেন চলাচল নিয়ে ‘হুলুস্থূল’ কাণ্ড ঘটে যায়। অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় তিনটি ট্রেন। এ ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্টরা একে অপরকে দোষারোপ করে।
এতে ট্রেন চলাচল শুরু করতে বিলম্ব হয়। শেষ পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মূলত সংকেত একদিকে থাকলেও ট্রেন আরেক দিকে ঢুকে পড়ায় এ দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। আবার সংকেত যেদিকে দেওয়া সেদিকে ট্রেন ঢুকলেও স্পষ্টতই আরেকটি দুর্ঘটনার শঙ্কা ছিল। তবে ঘটনাটি সংকেত বাতির ত্রুটি কারণে নাকি সংকেত পরিচালনায় ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে, এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরাও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। তারা একে অপরকে দোষারোপ করেন। চালকসহ ট্রেন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকেত দিতে গিয়ে ভুলের কারণে এমন দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দেয়। অন্যদিকে, সংকেত পরিচালনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চালক সংকেত অতিক্রম করায় এ ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে জানা যাবে আসলে কী কারণে এ শঙ্কা দেখা দেয়। দুর্ঘটনার কারণে সিলেটগামী পাহাড়িকা আখাউড়া, চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা আজমপুর, চট্টগ্রামগামী নাসিরাবাদ পাঘাচং স্টেশনে আটকা পড়ে। বিলম্ব করে চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস, ঢাকাগামী কর্ণফুলি এক্সপ্রেস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বলছে, এক্ষেত্রে চালক ও সংকেতবাতি পরিচালনকারী দুজনের ত্রুটি থাকতে পারে। হতে পারে যে, চালক সংকেত অতিক্রম করেছে। আবার এমনও হতে পারে সংকেত পরিচালনাকারী প্রথমে কন্টেইনার ট্রেনকে এটির জন্য নির্ধারিত লাইনেই যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ওই পথে আরেকটি ট্রেনকে সংকেত দেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক নম্বর লাইনে দিয়ে দেন। এতে করে দুটি চলন্ত ট্রেনের সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে, চালকও সময় পেয়ে সামনে থাকা ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগানোর বিষয়টি সামলাতে পেরেছেন জরুরি ব্রেক কষে।
সরজমিনে ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলি এক্সপ্রেস (৪ নম্বর ডাউন) ট্রেনটি বেলা ১টা ৩৭ মিনিটে আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনের এক নম্বর লাইনে প্রবেশ করে। দুটি ট্রেনের ক্রসিংয়ের কারণে ট্রেনটি এক ঘণ্টারও বেশি সময় স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে। বেলা ৩টার দিকে ওই ট্রেনটি দাঁড়ানো অবস্থায়ই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ৬০৪ নম্বর কন্টেইনার ট্রেন একই লাইনে প্রবেশ করতে থাকে। চালক বিষয়টি বুঝতে পেরে জরুরি ব্রেক কষে প্রায় দু’শ গজ দূরে ট্রেনটি থামিয়ে দেন। একই সময়ে ট্রেনটির পরিচালকও ব্রেক কষেন। একই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি কন্টেইনার ট্রেনের পাশ দিয়ে যায়।
রেলওয়ে কলোনি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৬০৪ নম্বর কন্টেইনার ট্রেনটি সর্বশেষ যে সংকেতবাতি অতিক্রম করে সেটিতে ইংরেজিতে ‘জি’ লেখা। সংশ্লিষ্টদের দেওয়া ভাষ্যমতে ‘জি’ মানে হচ্ছে ‘গুডস’ অর্থাৎ মালবাহী ট্রেনের জন্য নির্ধারিত লাইনে ট্রেনটি প্রবেশ করবে। এর মানে হচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য নির্ধারিত লাইনে ট্রেনটি ঢোকার কথা না। তবে এক নম্বর লাইনে পয়েন্ট মেলানো থাকায় ট্রেনটি সেই পথেই যেতে থাকে। আবার যদি সংকেত লেখা ‘জি’ অনুযায়ী লাইনে ট্রেনটি প্রবেশ করতো তাহলে আরেকটি দুর্ঘটনার শঙ্কা ছিল। কারণ সেদিকে যাচ্ছিল ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস। নির্ধারিত লাইনে কন্টেইনারকে যেতে হলে বিজয় এক্সপ্রেস যে লাইন দিয়ে যাচ্ছিল সেটিকে অতিক্রম করতে হতো।
কন্টেইনার ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক এ নিয়ে স্পষ্ট করে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে সহকারী চালক আবু তালহা জানান, ট্রেনটি নির্ধারিত লাইনের বদলে যাত্রীবাহী ট্রেনের লাইনে যেতে দেখে জরুরি ব্রেক কষা হয়। হোম সিগন্যালে (সংকেত) ঢোকার বাতি দেখেই প্রবেশ করা হয়। যদি সিগন্যাল অমান্য করা হতো তাহলে তো ট্রেন লাইনচ্যুত হতো।
ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) শফিকুল ইসলাম বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে সংকেতের ত্রুটির কথা জানান। তবে এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে যান। এমনকি তিনি নিজের নাম বলতেও রাজি হননি। অনেক অনুরোধের পর তিনি বলেন, চালক ইমার্জেন্সি ব্রেক কষার পর আমিও একই কাজ করি।
স্টেশন কেবিন মাস্টার (সংকেত বোর্ড পরিচালনাকারী) মো. খায়রুল আলম বলেন, হোম সিগন্যাল ডেঞ্জার (না আসার বাতি) দেওয়া ছিল। চালক সেটা অমান্য করে ঢোকায় দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দেয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর্ণফুলি এক্সপ্রেস ট্রেন ঢোকার পর ওই পথে ঢোকার লাইনটি আগের মতোই তৈরি করা ছিল। সিগন্যাল অমান্য করায় এটি ওই লাইনে ঢুকে পড়ে। বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইনে কন্টেইনার ট্রেন ঢোকার সম্ভাবনা ছিল না। তবে সংকেত বাতির ওপরে কিভাবে ‘জি’ লেখা সেটা বুঝতে পারছি না। হয়তো যন্ত্রপাতির কোনো ত্রুটি থাকতে পারে।
আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট মো. কামরুল ইসলাম বলেন, কিভাবে কী ঘটেছে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে চালক ব্রেক কষায় কোনো ধরনের ক্ষতি হয়নি। তদন্ত কমিটি গঠন হলে হয়তো তাদের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।