কমলাপুর রেলস্টেশনের গণ্ডি থেকে উত্তেজনায় কাঁপছে সোহেল। পাসপোর্টের পাতায় জ্বলজ্বল করছে নেপালের ভিসা স্টিকার। জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ, আর তাও নিজের উপার্জিত টাকায়! কলেজের সেই সহপাঠী রিয়াদের কথা মনে পড়ল, যে গত বছর থাইল্যান্ড ঘুরে এসে বলেছিল, “দেশের বাইরে পা রাখাটা তো আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নয় ভাই, শুধু দরকার সঠিক প্ল্যানিং!” সোহেলের হাতে বাজেট মাত্র ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু সে জানে, অল্প খরচে দেশের বাইরে ভ্রমণ কোন অলীক কল্পনা নয়, বরং সঠিক তথ্য আর একটু স্মার্ট প্ল্যানিংয়ে তা সবার জন্যই সম্ভব। বাংলাদেশের হাজারো তরুণ-তরুণী, মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য, এমনকি অবসরপ্রাপ্তরাও এখন চাইছেন বিশ্ব দেখতে। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে জানতে হবে বাজেট ফ্রেন্ডলি গন্তব্যের খোঁজ, সাশ্রয়ী বুকিংয়ের কৌশল এবং অর্থ সাশ্রয়ের গোপন মন্ত্রগুলো।
কীভাবে অল্প বাজেটে বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা শুরু করবেন?
ভ্রমণ মানেই তো লাখ টাকার ব্যাপার নয়,” বলছিলেন অভিজ্ঞ ট্রাভেল ব্লগার ও ‘বাংলাদেশ ট্রাভেলার্স’ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরাফাত রহমান। “২০২৩ সালে শুধু আমাদের ফোরাম থেকেই প্রায় ১২০০ বাংলাদেশী প্রথমবারের মতো অল্প খরচে নেপাল, ভুটান, ভারত বা থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। চাবিকাঠি হলো গবেষণা, নমনীয়তা এবং অফ-সিজন ভ্রমণের সাহস।” বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনও (২০২৪) বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্যবিত্তের আয়ুর্দয় ও লো-কস্ট এয়ারলাইন্সের বিস্তারের কারণে বিদেশ ভ্রমণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
গন্তব্য বাছাই: কোথায় যাবেন কম খরচে?
- নেপাল: বাংলাদেশীদের জন্য সবচেয়ে বাজেট-ফ্রেন্ডলি ও ভিসা-জটমুক্ত গন্তব্য। ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট (রাউন্ড ট্রিপ ১৫-২০ হাজার টাকায় মিলতে পারে অগ্রিম বুকিংয়ে)। কাঠমান্ডুর হোস্টেলে থাকা ৫০০-৮০০ টাকা/রাত, খাওয়া-দাওয়া স্থানীয়ভাবে ২০০-৩০০ টাকা/মিল। পোখরার লেকসাইডে কয়েক দিন কাটানো যায় হাতের টাকায়।
- ভুটান: ভিসা ফি একটু বেশি (প্রায় $৪০), কিন্তু দারুণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট। সরকারি নিয়মে প্রতিদিন ন্যূনতম $২০০ খরচ বাধ্যতামূলক, তবে বাংলাদেশীদের জন্য বিশেষ ডিসকাউন্ট আছে! গ্রুপে গেলে খরচ কমে।
- ভারত (পূর্বাঞ্চল): শিলিগুড়ি (দার্জিলিং, কালিম্পং), আগরতলা (ত্রিপুরা), কলকাতা। ট্রেন বা বাসে যাওয়া যায়। কলকাতায় গেস্ট হাউজ/হোস্টেল ৮০০-১৫০০ টাকা/রাত।
- থাইল্যান্ড (ব্যাংকক/চিয়াং মাই): লো-কস্ট এয়ারলাইন্স (এয়ার এশিয়া, ভিয়েতজেট) ব্যবহার করে অগ্রিম বুকিংয়ে রাউন্ড ট্রিপ ২০-২৫ হাজার টাকা। ব্যাংককের কাওসান রোডের হোস্টেলে ৫০০-১০০০ টাকা/রাত। স্ট্রিট ফুড দারুণ সস্তা।
- মালয়েশিয়া (কুয়ালালামপুর): এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটে আগাম বুকিং। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার দেখতে যাওয়া যায় কম খরচে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এক্সেলেন্ট।
সময় বাছাই: অফ-সিজন কেন জরুরি?
পর্যটন মৌসুমে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) দাম আকাশছোঁয়া। বরং বর্ষাকাল বা শoulder মৌসুমে (মে-সেপ্টেম্বর) ভ্রমণ করুন। তখন হোটেলের দাম ৩০-৫০% কমে, ফ্লাইট টিকেটও সস্তা। নেপালের মনসুন বা থাইল্যান্ডের গ্রিন সিজনে ভ্রমণেও আলাদা রোমাঞ্চ থাকে। ট্রাভেল এজেন্ট সামিনা আক্তারের পরামর্শ: “বাংলাদেশিরা সাধারণত শীতকালে ভ্রমণ প্ল্যান করেন। যদি কেউ জুলাই-আগস্টে নেপাল বা সেপ্টেম্বরে ব্যাংকক প্ল্যান করেন, তাহলে তার খরচ অর্ধেকেরও কম হবে।”- বাজেটিং ও ট্র্যাকিং: টাকার হিসাব রাখুন কঠোরভাবে
- ৫০/৩০/২০ রুল: মোট বাজেটের ৫০% পরিবহন ও থাকা-খাওয়ায়, ৩০% আকর্ষণীয় স্থান ভ্রমণ ও এক্টিভিটিজে, ২০% জরুরি প্রয়োজনে ও স্যুভেনির কেনায়।
- অ্যাপস ব্যবহার করুন: ট্রাভেল বাজেট ট্র্যাকার অ্যাপ (যেমন: TrabeePocket, TravelSpend) ব্যবহার করুন। প্রতিদিনের খরচ লিখে রাখুন।
- ক্যাশ ও কার্ড মিক্স: কিছু স্থানীয় মুদ্রা নগদ রাখুন (বাজেটের ৩০%), বাকিটা প্রিপেইড ট্রাভেল কার্ড বা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডে।
ট্রান্সপোর্টেশন সাশ্রয়ের নিশ্চিত উপায়: উড়োজাহাজ, ট্রেন, বাস
“ফ্লাইট টিকেট কিনলেই তো অর্ধেক বাজেট শেষ!” – এই ভয় কাটানোর সময় এসেছে। লো-কস্ট ক্যারিয়ার (LCC) আর ফ্লাইট ডিলের যুগে আকাশপথ এখন সবার হাতের নাগালে।
লো-কস্ট এয়ারলাইন্সকে কাজে লাগান:
- এয়ার এশিয়া, ভিয়েতজেট এয়ার, সাউথইস্ট এশিয়ান এয়ারলাইন্স (সিল্কএয়ার): এশিয়ার গন্তব্যগুলোর জন্য সেরা অপশন।
- বুকিং কৌশল:
- অগ্রিম বুকিং (৩-৬ মাস আগে): এয়ার এশিয়ার ‘প্রোমো ফেয়ার’ বা ভিয়েতজেটের ‘মেগাসেল’ এ ঢাকা-ব্যাংকক রাউন্ড ট্রিপ পাবেন ১৫,০০০ – ২০,০০০ টাকায় (সাধারণ দাম ৩০,০০০+ টাকা)।
- অফ-পিক ডে/টাইম: মঙ্গলবার, বুধবার বা শনিবার ভোররাত/সন্ধ্যার ফ্লাইট সাধারণত সস্তা হয়।
- ফ্লেক্সিবল ডেটস: স্কাইস্ক্যানার, গুগল ফ্লাইটসের ‘ডেট গ্রিড’ বা ‘প্রাইস গ্রাফ’ দেখে সস্তার দিন বেছে নিন।
- নিয়ারবাই এয়ারপোর্ট: ব্যাংককের বদলে ডন মুয়েং (DMK) এ ল্যান্ড করলে সাশ্রয় হয়।
- ভূমি পথের বিকল্প: সস্তা, অভিজ্ঞতাও সমৃদ্ধ
- বাংলাদেশ থেকে ভারত/নেপাল:
- কলকাতা/শিলিগুড়ি: ঢাকার কমলাপুর বা আব্দুল্লাহপুর থেকে এসি/নন-এসি বাস (গ্রিনলাইন, শ্যামলী, সৌদিয়া – ভাড়া ২,০০০ – ৪,০০০ টাকা)। সময় ১২-১৬ ঘন্টা।
- কাঠমান্ডু: ঢাকা থেকে বাসে সিলিগুড়ি (ভাড়া ~৩,৫০০ টাকা), তারপর সিলিগুড়ি থেকে বাস/জিপে কাকরভিট্টা বর্ডার পার হয়ে নেপালগঞ্জ/কাঠমান্ডু (ভাড়া আরও ১,৫০০-২,০০০ টাকা)। মোট সময় ২৪-৩০ ঘন্টা, মোট খরচ ~৫,০০০-৬,০০০ টাকা।
- স্থানীয় পরিবহন: গন্তব্যে পৌঁছে পাবলিক বাস, মেট্রো, ট্রেন, টুকটুক/অটোরিকশা ব্যবহার করুন। ট্যাক্সি/রাইডশেয়ারিং (উবার, গ্র্যাব) শেয়ার করে নিলেও সাশ্রয় হয়।
- বাংলাদেশ থেকে ভারত/নেপাল:
থাকা-খাওয়া: হোস্টেল, হোমস্টে ও স্থানীয় স্বাদের সন্ধান
শীতলপাটি আর ক্যাম্পিং এর দিন গেছে। এখন কম খরচে থাকার নানান আধুনিক ও আরামদায়ক উপায় আছে।
বাজেট ফ্রেন্ডলি একcommodation:
- হোস্টেলস (Hostels): এশিয়ার প্রধান ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে অসংখ্য হোস্টেল (যেমন: নেপালে ‘জংলি ফ্রি হোস্টেল’, ব্যাংককে ‘লুব ডি ব্যাংকক সিলম’)। ডরমিটরি বেড ৩০০-৮০০ টাকা/রাত, প্রাইভেট রুম ১,৫০০-৩,০০০ টাকা/রাত। কমিউনিটি কিচেন থাকায় নিজে রান্না করে খরচ কমাতে পারবেন।
- গেস্টহাউজ ও বাজেট হোটেল: স্থানীয় এলাকায় খুঁজলে মৌলভীবাজারের মত সাধারণ মানের কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রুম মিলবে ৮০০-২,০০০ টাকা/রাতে। প্ল্যাটফর্ম: বুকিং.কম, এগোডা, হোস্টেলওয়ার্ল্ড।
- হোমস্টে (Homestay): স্থানীয় পরিবারের সাথে থাকার অভিজ্ঞতা (যেমন: ভুটানের পারো ভ্যালিতে, নেপালের পোখরায়)। দাম ১,০০০-২,৫০০ টাকা/রাত, প্রায়ই অন্তর্ভুক্ত থাকে সকালের নাস্তা বা খাবার। প্ল্যাটফর্ম: Airbnb (ফিল্টার ‘হোমস্টে’), স্থানীয় ট্যুর অপারেটর।
- কাউচসার্ফিং (Couchsurfing): বিনামূল্যে স্থানীয়দের বাসায় থাকা। নিরাপত্তা ও প্রোফাইল রিভিউ ভালোভাবে চেক করতে হবে।
- খাওয়া-দাওয়া: স্থানীয় স্বাদে, কম খরচে
- স্ট্রিট ফুড রাজ: থাইল্যান্ডের পদ থাই, নেপালের মোমো ও থুকপা, ভুটানের এমা দাতশি, ভারতের চাট-পকোড়া – স্বাদে অতুলনীয়, দাম হাতের নাগালে (২০-১০০ টাকা)।
- লোকাল মার্কেট: তাজা ফল, স্ন্যাক্স, রান্না করা খাবার কিনতে পারবেন কম দামে।
- কমিউনিটি কিচেন (Hostels): নিজে রান্না করলে খরচ আরও কমবে।
- সস্তা রেস্টুরেন্ট: পর্যটকদের জন্য নয়, স্থানীয়দের ভিড় জমানো রেস্তোরাঁ খুঁজুন (‘হোলে ইন দ্য ওয়াল’)।
দর্শনীয় স্থান ও এক্টিভিটিজ: অভিজ্ঞতা বাড়াতে, খরচ কমাতে
ভ্রমণের আসল স্বাদ তো গন্তব্যের সংস্কৃতি ও প্রকৃতির সান্নিধ্যে। সেটা বাজেটের মধ্যেও উপভোগ করার উপায় আছে।
ফ্রি/লো-কস্ট অ্যাট্রাকশন্স:
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: নেপালের পোখরা লেকের সানসেট, ভুটানের পারো ভ্যালির ধানক্ষেত, দার্জিলিংয়ের চা বাগান ঘুরে দেখতে কোন টিকিট লাগে না।
- মুক্ত যাদুঘর ও মন্দির: ব্যাংককের জাতীয় যাদুঘর (কোন কোন দিন ফ্রি), কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথ মন্দির (বাহির থেকে দর্শন), কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম (প্রবেশমূল্য নামমাত্র)।
- ফ্রি ওয়াকিং ট্যুর: অনেক শহরে (ব্যাংকক, কাঠমান্ডু, কলকাতা) স্থানীয় গাইডরা ফ্রি ওয়াকিং ট্যুর অফার করে। শেষে ইচ্ছামতো টিপ দিলেই হয়।
- পার্ক ও জনসাধারণের স্থান: ব্যাংককের লুম্পিনি পার্ক, কাঠমান্ডুর গার্ডেন অফ ড্রিমস।
- স্মার্ট ট্যুর বুকিং:
- গ্রুপ ট্যুর: একা ভ্রমণের চেয়ে গ্রুপে ট্যুর বুক করলে (যেমন: ভুটানের প্যারো টাক্টসাং ট্রেক) খরচ কম পড়ে।
- অনলাইন ডিল: Klook, Viator, GetYourGuide অ্যাপে আগে থেকেই এক্টিভিটিজ বুক করুন। অনেক সময় ইন্সট্যান্ট ডিসকাউন্ট থাকে।
- স্থানীয় ট্যুর অপারেটর: হোটেল রিসেপশন বা হোস্টেলে স্থানীয় ছোট ট্যুর অপারেটরের কার্ড থাকে, যারা বড় কোম্পানির চেয়ে কম দামে ভালো সার্ভিস দেয়।
ভিসা, ইনশ্যুরেন্স ও টাকা রক্ষার জরুরি টিপস
ভ্রমণের আনন্দ যেন ভিসার জটিলতায় ম্লান না হয়, আর যেকোন দুর্ঘটনায় যেন আর্থিক সুরক্ষা থাকে।
ভিসা সাশ্রয় ও সহজীকরণ:
- ভিসা-ফ্রি/অন অ্যারাইভাল: বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের জন্য:
- অন অ্যারাইভাল: নেপাল, মালদ্বীপ, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া (বালি), শ্রীলঙ্কা (ই-ভিসা সহজ), ইথিওপিয়া, জ্যামাইকা।
- ই-ভিসা (সহজ প্রক্রিয়া): ভুটান (এজেন্টের মাধ্যমে), ভারত (তুরিস্ট ই-ভিসা), ভিয়েতনাম, মিয়ানমার।
- ভিসা ফি: সবচেয়ে কম নেপালে (ফ্রি), ভুটানে (~$৪০), থাইল্যান্ডে (~১,৭০০ টাকা)।
- ডকুমেন্টেশন: চাকরিজীবীরা বেতন স্লিপ, কোম্পানির NOC, ব্যাংক স্টেটমেন্ট (৩-৬ মাস) পরিষ্কারভাবে জমা দিন। ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট।
- ভিসা-ফ্রি/অন অ্যারাইভাল: বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের জন্য:
ট্রাভেল ইনশ্যুরেন্স: অত্যাবশ্যক, কিন্তু সস্তায়!
বিদেশে মেডিকেল ইমার্জেন্সি বা ট্রিপ ক্যানসেলেশনের ঝুঁকি এড়াতে ইনশ্যুরেন্স বাধ্যতামূলক (ভুটানসহ অনেক দেশে ভিসার জন্যও আবশ্যক)। বাংলাদেশী কোম্পানি যেমন: সানডারল্যান্ড, পপুলার লাইফ, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স থেকে অনলাইনে কিনুন। ৭ দিনের নেপাল ট্রিপের ইনশ্যুরেন্স প্রিমিয়াম মাত্র ৮০০-১,২০০ টাকা! প্ল্যাটফর্ম: পেপারফ্লাই (.com.bd), চোলো (.com)।- টাকা ও কমিউনিকেশন:
- ফরেক্স কার্ড/প্রিপেইড ট্রাভেল কার্ড: স্থানীয় কারেন্সি উত্তোলনে এটিএম ফি কমায়। ডাচ-বাংলা, ব্র্যাক ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে নিন।
- লোকাল সিম কার্ড: বিমানবন্দরেই কিনে ফেলুন (থাইল্যান্ডে ‘ট্রু মুভ’, নেপালে ‘নসেল’)। ডাটা প্যাক নিলে গুগল ম্যাপ, অনুবাদ সহজ হয়। দাম ২০০-৫০০ টাকা (সিম + কিছু ডাটা/কল)।
- নগদ টাকা: কিছু নগদ রাখতেই হবে (বাজেটের ২০-৩০%)। সিটি বা স্কাইলার্ক এক্সচেঞ্জ কাউন্টারে রেট ভালো।
অল্প খরচে দেশের বাইরে ভ্রমণ কোন অসম্ভব চ্যালেঞ্জ নয়; এটা শুধু একটু বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য আর সঠিক তথ্যের সমন্বয়। আপনার স্বপ্নের সেই পাহাড়, সমুদ্র বা অচেনা শহরের রাস্তা এখন হাতের নাগালে। সঠিক গন্তব্য বেছে নিন, অফ-সিজনের ম্যাজিককে কাজে লাগান, হোস্টেলের বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে থাকুন, স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিন আর দেখুন কীভাবে বিশ্বজুড়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে ওঠে আপনার। এবারই সময় আপনার পাসপোর্টে প্রথম স্ট্যাম্প জমার। পরিকল্পনা শুরু করুন আজই, কারণ সবচেয়ে বড় বিনিয়োগটা আপনার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায়।
জেনে রাখুন (FAQs)
১. বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের জন্য কোন কোন দেশে ভিসা লাগে না বা সহজে মেলে?
বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের জন্য নেপালে ভিসা লাগে না (ফ্রি অন অ্যারাইভাল)। ভুটান, মালদ্বীপ, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া (বালি), শ্রীলঙ্কা, ইথিওপিয়া, জ্যামাইকা-তেও অন অ্যারাইভাল ভিসা বা সহজ ই-ভিসার সুবিধা আছে। থাইল্যান্ডেও ভিসা অন অ্যারাইভাল, তবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানোর প্রয়োজন হতে পারে। ভারতের জন্য অনলাইনে ই-ভিসা নেওয়া যায়।
২. সর্বনিম্ন কত বাজেটে বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব?
সবচেয়ে সাশ্রয়ী গন্তব্য নেপালে ৪-৫ দিনের ট্রিপ সম্ভব ২০,০০০ – ৩০,০০০ টাকা বাজেটে (ফ্লাইট, থাকা-খাওয়া, ভ্রমণসহ)। ভারতের শিলিগুড়ি/দার্জিলিং বাসে গেলে ১৫,০০০ – ২৫,০০০ টাকায় করা যায়। থাইল্যান্ড (ব্যাংকক) লো-কস্ট ফ্লাইট ও হোস্টেলে থাকলে ৩০,০০০ – ৪০,০০০ টাকা লাগতে পারে ৫ দিনের ট্রিপে। খরচ নির্ভর করে গন্তব্য, মৌসুম, থাকার মান ও এক্টিভিটিজের উপর।
৩. সস্তায় ফ্লাইট টিকিট পেতে কী করব?
সস্তায় ফ্লাইট টিকিট পেতে অগ্রিম বুকিং (৩-৬ মাস আগে) জরুরি। লো-কস্ট এয়ারলাইন্সের (এয়ার এশিয়া, ভিয়েতজেট) প্রোমো সেল/মেগাসেল-এর খোঁজ রাখুন। স্কাইস্ক্যানার, গুগল ফ্লাইটস ব্যবহার করে সস্তার তারিখ ও সময় বেছে নিন। অফ-সিজনে (বর্ষাকাল) ভ্রমণ করলে দাম অনেক কমে। সপ্তাহের মাঝের দিনগুলোতে (মঙ্গল-বুধ) ফ্লাইট সাধারণত সস্তা হয়।
৪. কম খরচে থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় কী?
কম খরচে থাকার জন্য হোস্টেলের ডরমিটরি বেড সবচেয়ে সাশ্রয়ী (৩০০-৮০০ টাকা/রাত)। হোমস্টে (স্থানীয় বাড়িতে থাকা) দারুণ অভিজ্ঞতাও দেবে (১,০০০-২,৫০০ টাকা/রাত)। গেস্টহাউজ বা বাজেট হোটেল খুঁজতে বুকিং.কম বা এগোডা-তে ফিল্টার করুন। নিজে রান্না করার সুবিধা আছে এমন থাকায় খাবার খরচও কমবে।
৫. বিদেশ ভ্রমণে টাকা সেভ করার গোপন টিপস কী?
টাকা সেভ করতে স্থানীয় পরিবহন (বাস, মেট্রো, ট্রেন) ব্যবহার করুন, ট্যাক্সি এড়িয়ে চলুন। স্ট্রিট ফুড ও লোকাল মার্কেটে খান, ট্যুরিস্টি রেস্টুরেন্টে কম খান। ফ্রি/লো-কস্ট অ্যাট্রাকশন (পার্ক, মন্দিরের বাইরের অংশ, প্রাকৃতিক দৃশ্য) বেশি বেশি দেখুন। পর্যটন মৌসুম এড়িয়ে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) ভ্রমণ করুন। পানি কিনবেন না, রিউজেবল বোতল নিয়ে রিফিল করুন।
৬. ট্রাভেল ইনশ্যুরেন্স কি জরুরি? কোথায় পাবো সস্তায়?
হ্যাঁ, ট্রাভেল ইনশ্যুরেন্স অত্যন্ত জরুরি। এটি বিদেশে অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, ট্রিপ ক্যানসেলেশন বা ডাক্তারি জরুরি সেবার বিপুল খরচ থেকে রক্ষা করে। বাংলাদেশী কোম্পানি যেমন সানডারল্যান্ড, পপুলার লাইফ, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স থেকে অনলাইনে সহজেই কিনতে পারবেন। ১ সপ্তাহের জন্য প্রিমিয়াম মাত্র ৮০০ – ১,৫০০ টাকা। পেপারফ্লাই (.com.bd) বা চোলো (.com) ওয়েবসাইটে তুলনা করে কিনতে পারেন।
Disclaimer: ভ্রমণের বিধি-নিষেধ, ভিসা নীতি, ফ্লাইট ও থাকার খরচ সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তনশীল। যাত্রা শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইট (.gov), বিশ্বস্ত ট্রাভেল এজেন্ট এবং এয়ারলাইন্সের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ তথ্য ও নিয়মাবলী জেনে নিন। স্বাস্থ্যবিধি ও স্থানীয় আইন-কানুন মেনে চলুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।