জুমবাংলা ডেস্ক : বছরে আনুমানিক চার হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপনী বাজারের ৮০ ভাগই দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং প্রয়াত আলী যাকের পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক গ্রুপ।
জাতীয় দৈনিক আমার দেশে ২৩ জানুযারি প্রকাশিত সৈয়দ মিজানুর রহমানের করা একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এশিয়াটিক গ্রুপের বিজ্ঞাপন বাজার দখলের বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু একটি বা দুটি নয়, অন্তত ১৭টি ভিন্ন নাম ব্যবহার করে বিগত দেড় দশকে বিজ্ঞাপনের বাজারকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়। বিজ্ঞাপনের এই বিশাল বাজার দখলে রেখে মূলত দেশের গণমাধ্যমগুলোকেই পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এশিয়াটিক গ্রুপ।
বিজ্ঞাপনের বাজার যেন এশিয়াটিক গ্রুপের দখলে থাকে সেজন্য এ দেশে নিয়োজিত বহুজাতিক গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারাও সহযোগিতা করেছেন। শেখ হাসিনার আমলে তারা কোনো কোনো বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে জোর করে ব্যবসা থেকে তাড়িয়ে দেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, নানা অসৎ উপায় অবলম্বন করে এশিয়াটিক গ্রুপ বিজ্ঞাপনের কাজ নিজের দখলে রাখতো।
দেশে যেমন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারের অন্যান্য বিভাগ ক্ষমতার জোরে দখলে রেখে বিজ্ঞাপনী বাজার নিজেদের হাতে রেখেছিল এশিয়াটিক গ্রুপ, তেমনি ভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপনের কাজও এখন পর্যন্ত এশিয়াটিক গ্রুপের কব্জায় রয়েছে।
বিজ্ঞাপন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতীয় আনুকূল্যে পাওয়া বিদেশি অ্যাফিলিয়েশনকে কাজে লাগিয়ে সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও যাকের পরিবারের মালিকানাধীন এশিয়াটিক গ্রুপ বিভিন্ন নামে এখনো গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, বিকাশ, ম্যারিকো, রেকিট বেনকাইজার, কোকাকোলা, টাটা, বাটা, বিএটি, বাজাজ, কোলগেট, হিরো, হিমালয়া, ডাবর ও টিভিএস, ডানো, কোলগেট, পেপসির মতো বড় বড় বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপনী বাজার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
বিজ্ঞাপন খাতের সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শীর্ষ পদের প্রায় সবাই ভারতীয় নাগরিক। আর এদের সহযোগিতায় বিজ্ঞাপনের বাজার সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এশিয়াটিক গ্রুপ।
বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রি-সিক্সটি ও মিডিয়া এজেন্সি গ্রুপএমের যৌথ উদ্যোগে ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে এশিয়াটিক মাইন্ডশেয়ার লিমিটেড। মিডিয়া বায়িং এবং প্ল্যানিং-সংক্রান্ত কাজের জন্য তাদের রয়েছে চারটি কোম্পানি। এগুলোর মধ্যে আছে মাইন্ডশেয়ার, ওয়েভমেকার, এমবিএ এবং এমপাওয়ার। এ ছাড়া ইনফ্লুয়েন্সার ম্যানেজ করার জন্য তদারকিতে রয়েছে তাদের স্ট্যাকমিস্ট নামের আরেকটি কোম্পানি।
এশিয়াটিক গ্রুপ বা এশিয়াটিক থ্রি-সিক্সটি গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে- এশিয়াটিক এমসিএল, এশিয়াটিক সোশ্যাল, এশিয়াটিক টকিং পয়েন্ট, আউট অব দ্য ব্লু ডিজাইন স্টুডিও, ধ্বনিচিত্র, ফোরথট পিআর, ব্ল্যাকবোর্ড স্ট্যাটেজিজ, স্টেনসিল বাংলাদেশ, এশিয়াটিক এক্সপেরিমেন্টাল, অপটিমাম সার্ভিস, রেডিও স্বাধীন, এশিয়াটিক ডিজিটাল, এ মাইনর স্টুডিও এবং এশিয়াটিক টিএমএস।
এ বিষয়ে এশিয়াটিক গ্রুপ দৈনিক আমার দেশকে পাঠানো বক্তব্যে বলেছে, দেশীয় বড় কোম্পানি ও বিদেশি ক্লায়েন্টদের মিডিয়া বাজেট কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ অবাস্তব ও কাল্পনিক।
আলী যাকের মারা যাওয়ার পর আসাদুজ্জামান নূর এসে এশিয়াটিক গ্রুপের দায়িত্ব নেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এশিয়াটি গ্রুপ থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত বছরের অগস্ট মাসে এশিয়াটি গ্রুপের সব শেয়ার ছেড়ে দেন তিনি। তবে এসব শেয়ার কারা কিনেছে এবং কত তারিখে তা সম্পাদন করা হয়েছে তা তাদের পক্ষে বলা হয়নি। বর্তমানে এশিয়াটিক গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে আলী যাকেরের স্ত্রী সারা যাকের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।