আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘ তাপপ্রবাহের জেরে ব্যাপক গরমে হাঁসফাঁস করছে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। গতকাল বুধবার ফিলিপাইনের সব স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট, বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ আদায় করছেন।
গত পরশুদিন মঙ্গলবার জাতিসংঘের বৈশ্বিক জলবায়ু নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) এক প্রতিবেদনে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২৩ সালে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে এশিয়া মহাদেশভুক্ত দেশগুলো।
বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন দেশে যে টানা ও দীর্ঘ তাপপ্রবাহ বইছে, তার প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন।
ফিলিপাইনের ক্যাভিট প্রদেশের বাসিন্দা এরলিন তুমারন (৬০) সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্ট চালান। মঙ্গলবার এএফপির সঙ্গে যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন ক্যাভিটে তাপমাত্রা ছিল ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এএফপিকে এরলিন বলেন, ‘এখানে এখন এত গরম যে আপনার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে। আমাদের রিসোর্টের সুইমিং পুলগুলো আজ খালি। গরমের সময় অতিথিরা পুলে সময় কাটাতে পছন্দ করেন, কিন্তু এখন এত গরম যে তারা কক্ষ থেকে বের হওয়ার সাহস করছেন না।’
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপাইন মৌসুমী আবহাওয়ার দেশ হওয়ায় বছরের মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে দেশটিতে গ্রীষ্মকাল থাকে। এ সময় আবহাওয়া থাকে গরম ও উষ্ণ।
কিন্তু চলতি বছরের গরম বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। ফিলিপাইনের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বুধবার অন্তত ৩০টি শহরে তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি। আবহাওয়া দপ্তরের শীর্ষ জলবায়ুবিদ আনা সোলিস এএফপিকে জানিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে গরম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে অন্তত ৫০ শতাংশ।
অসহনীয় গরম ও তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে লোকজনকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং বাইরে বের হওয়ার সময় সঙ্গে ছাতা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে বিশ্বের যেসব দেশে খরা, বন্যা, ঝড়, অতিবর্ষণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, সেসব দেশের মধ্যে ফিলিপাইন অন্যতম।
এদিকে অস্বাভাবিক গরমের কারণে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক এবং তার আশপাশের অঞ্চলগুলোতে তাপ সতর্কতা (হিট অ্যালার্ট) জারি করেছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস বলেছিল, বুধবার ব্যাংককের তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এদিন ব্যাংকক, উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ ল্যামপাংসহ বেশ কিছু অঞ্চলে তাপামাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ার পর হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া দপ্তর।
থাইল্যান্ডের জলবায়ুবিদ মেরি অ্যান গেনার এএফপিকে বলেন, ‘এখানে এখন যে তাপ, বাড়ির বাইরে বের হলেই রোদের কারণে আপনার মাথাব্যাথা শুরু হবে। তাই বাড়িতে থাকুন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।’
এদিকে তাপপ্রবাহের কারণে দেশজুড়ে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের সরকার। বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকায় গত সপ্তাহে যে তাপমাত্রা ছিল— তা গত ৩০ বছরের গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।
তাপপ্রবাহকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে বৃষ্টির অভাব। বৃষ্টির জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কিছু রাজ্যেও শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। বুধবার দেশটির এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী পাঁচদিন পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, সিকিম এবং কর্ণাটকে তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।