লাইফস্টাইল ডেস্ক: করোনার সংক্রমণের কারণে চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। পৃথিবীটা ছোট হতে হতে বহু আগেই হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। গত এক বছরে, এই ভাইরাসের ধাক্কায় গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানাচ্ছেন ডাক্তাররাই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনলাইন ক্লাস ছাড়াও পড়ুয়ারা স্ক্রিন টাইম মানছে না। যার কারণেই একাধিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এর কারণে নতুন প্রজন্ম ভুগবে।
স্ক্রিন টাইম কী?
ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে প্রবলভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টিভি, ইত্যাদির ব্লু-রে যেমন চোখের ক্ষতি করে, তেমনই সারাদিন এগুলো নিয়েই সময় কাটালে মনের উপরেও প্রভাব পড়ে। তাই গবেষকরা নির্দিষ্ট ‘স্ক্রিন টাইম’ মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। এও জানাচ্ছেন, গোটা ২৪ ঘণ্টায় বয়স অনুযায়ী ২ ঘণ্টার বেশি ডিভাইস ব্যবহার করলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হবেন যে কোনও বয়সি মানুষ।
কী কী সমস্যা?
১. ওবেসিটির সমস্যা ধরা পড়তে পারে শিশু থেকে মাঝ বয়সি যে কারও। একজায়গায় বহুক্ষণ বসে থেকে বাড়তে পারে ওজন।
২. ঘুমের সমস্যা দেখা দেবেই। রাতে তাড়াতাড়ি শোওয়ার পরেও, এপাশ ওপাশ করতে করতেও ঘুম আসবে। এটাও অতিরিক্ত ডিভাইস ব্যবহারের কারণে হয়।
৩. ব্যবহারের অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। সামাজিকভাবে অনেকেই মিশতেও পারেন না এর কারণে।
৪. হজমের সমস্যা দেখা দেবে। খাওয়ার পরেই একজায়গায় বসে টিভি দেখা, ভিডিও গেম খেলা, কিংবা অনেকক্ষণ অনলাইন ক্লাস চললে এই সমস্যা দেখা যায়।
৫. ফাস্ট ফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ডিভাইসের সামনে অত্যধিক বেশি সময় কাটালে মশলাদার, ভাজাভুজি, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার দিকে ঝোঁকে পড়ুয়ারা।
৬. আস্তে আস্তে পড়ুয়ারা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।
কোন বয়সে কতক্ষণ স্ক্রিন টাইম মেন্টেন করা উচিত-
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস জানাচ্ছে, সারা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে এই মুহূর্তে ৮ থেকে ১৮ বছরের পড়ুয়ারা ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত মোবাইল, ল্যাপটপের সামনে কাটায়। আর বয়স্করা তারচেয়েও বেশি সময়। যার ফলে দেখা যাচ্ছে একাধিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। তাদের গাইডলাইনে জানানো হয়েছে-
১. ২ বছরের কম বয়সিরা কোনওভাবেই যেন ডিভাইস ব্যবহার না করে।
২. ১৮ বছর পর্যন্ত ১ থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্ক্রিনের সামনে থাকতে পারে।
৩. অনলাইন পড়াশোনার জন্য মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে, এবং স্ক্রিন থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে ডিভাইস ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে তারা।
বিশেষজ্ঞরা কী জানাচ্ছেন-
অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকেই শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছে শিশুরা। এ বিষয়ে aajkaal.in কে ডাক্তার সৌম্যদীপ মুখার্জি জানাচ্ছেন, ‘দীর্ঘক্ষণ মোবাইল এবং কম্পিউটারের সামনে সময় কাটানোর ফলে চোখ, কান, এবং ঘাড়ের সমস্যা দেখা দিচ্ছে পড়ুয়াদের। এমনকি মাথা যন্ত্রণার সমস্যাতেও ভুগছে। ছোটবেলাতেই এইধরনের সমস্যা দেখা দিলে চোখে মাইনাস পাওয়ার চলে সম্ভবনা বাড়ে। এখন অনলাইন ক্লাস তো বাধ্যতামূলক। এড়িয়ে যেতে পারবে না কেউ। তাই কম্পিউটার বা ল্যাপটপের থেকে ১৫ থেকে ২০ সেমি দূরত্বে থাকার পরামর্শ দেব। একটানা ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের বেশি ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকা উচিত নয়। আর তার বেশি ক্লাস চললে বসার ভঙ্গিমা বদলাতে হবে। তাছাড়া ক্লাসের পরেই একটু এক্সারসাইজ করার পরামর্শ দেব। আর সবার আগে যেটা খেয়াল রাখতে হবে, মোবাইল স্ক্রিন যেন ফাঁটা না থাকে। ফাঁটা স্ক্রিনের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখের বহু সমস্যা দেখা দেয়।’
সহমত পোষণ করলেন ডাক্তার প্রবীর কুমার সরকারও। জানালেন, ‘করোনার প্রথম ঢেউ এর সময় ভাইরাসকে এতটা গুরুত্ব কেউ দেননি। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউএর পর, একটু গুরুত্ব দিচ্ছেন সকলে। কারণ কোভিড ছাড়াও আরও অন্যান্য সমস্যায় ভুগছে পড়ুয়ারা। আধুনিক যুগে মা-বাবাকে সচেতন থাকতে হবে প্রতি মুহূর্তে। ছোটবেলাতেই মোবাইল, কম্পিউটার উপহার দিলেও, সেগুলোব্যবহারে অত্যধিক ব্যবহারে রাশ টানতে তাঁদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে। এর জন্য স্ক্রিন টাইমের গাইডলাইন মেন্টেন করা উচিত। সবটাই এখন ডিভাইস নির্ভর। তবুও যতটা কম সময় এর পিছনে ব্যয় করা যায়, তার চেষ্টাই করতে বলব সকলকে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।