অ্যান্টার্কটিকা—পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা, শুষ্ক এবং দুর্গম মহাদেশ। এই মহাদেশের সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা মানুষকে সবসময় আকৃষ্ট করেছে। কিন্তু এই মহাদেশ সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? শুভ্র বরফছাওয়া অ্যান্টার্কটিকাকে আরও ভালোভাবে জানতে আগ্রহীদের জন্যই এ লেখা।
পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি
আমরা জানি, ধূলোর মরু হয়।বরফেরও কি মরুভূমি হয়? সাধারণত মরুভূমির কথা বললে মনে ভেসে ওঠে বালির উঁচু টিলা, প্রখর রোদ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মরুভূমিকে শুধু গরম বা বালুময় হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। মরুভূমি মানে বৃষ্টিপাতের অভাব। যেসব এলাকায় বছরে খুব কম বৃষ্টি হয়, সেগুলোকেই মরুভূমি বলা হয়। বিস্ময়কর হলেও সত্য, আয়তনের দিক থেকে অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি। বরফমরু।
গত ত্রিশ বছরে দক্ষিণ মেরুতে গড়ে বছরে মাত্র দশ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা অত্যন্ত নগণ্য। এ কারণেই অ্যান্টার্কটিকায় বরফের পুরু আস্তরণ তৈরি হতে লেগেছে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ৫০ লাখ বছর। পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক মহাদেশ হওয়ার পাশাপাশি অ্যান্টার্কটিকা সবচেয়ে শীতলও বটে।সারা বছর এখানে গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় মাইনাস ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে শীতকালে তাপমাত্রা কমে হতে পারে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে বাতাসে উড়ে চলা ধুলোর পরিমাণ সর্বোচ্চ।আবার ভূমির দিক থেকেও এটি সবচেয়ে উঁচু মহাদেশ।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বাদু পানির আধার
অ্যান্টার্কটিকা আমাদের গ্রহের সবচেয়ে বিশাল মিঠা পানির ভাণ্ডার। বিশ্বের মোট স্বাদু পানির ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ এই মহাদেশের বিপুল বরফে আবদ্ধ। এই বরফ প্রায় ১৪ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪০ লাখ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বরফের আধারও এটি। অ্যান্টার্কটিকার পর্বতমালা, উপত্যকা ও মালভূমি এই বরফে ঢাকা। সব মিলে সারা বছর মহাদেশটির মাত্র এক শতাংশ অঞ্চলে শুধু বরফ থাকে না।
গ্রীষ্মকালে অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের কিছু অংশের বরফ গলে যায়। এই বরফের সর্বোচ্চ পুরুত্ব প্রায় ৪.৫ কিলোমিটার, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্টের উচ্চতার প্রায় অর্ধেক। এই বিশাল বরফের স্তূপ যদি সম্পূর্ণ গলে যায়, তাহলে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ৬০ মিটার বেড়ে যেতে পারে। ফলে বিপন্ন হতে পারে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলো।
নির্দিষ্ট কোনো টাইমজোন নেই
অ্যান্টার্কটিকায় সময়ের ধারণা বেশ জটিল। দক্ষিণ মেরুতে পৃথিবীর সবকটি দ্রাঘিমা রেখা এক বিন্দুতে মিলিত হয়। ফলে ভিন্ন ভিন্ন টাইম জোন বা সময়াঞ্চলের ধারণাটি এখানে খাটে না। অ্যান্টার্কটিকার বেশির ভাগ অঞ্চলে গ্রীষ্মের ৬ মাস অবিরাম দিনের আলো থাকে, আর শীতকালে ৬ মাসজুড়ে থাকে অন্ধকার। দিন-রাতের স্বাভাবিক চক্র না থাকায় সময়ের ধারণা এখানে অন্যরকম। অ্যান্টার্কটিকায় গবেষণারত বিজ্ঞানীরা সাধারণত তাঁদের নিজ দেশের সময় মেনে চলেন।
যেমন অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপে চিলি, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র তাদের নিজ দেশের সময় অনুসরণ করেন বটে, তবে সে জন্য কেন্দ্রগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানে সমস্যা হয়। সাধারণত সাপ্লাই বা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের সময়াঞ্চল ব্যবহৃত হয়। আবার অরোরা অভিযানে আসা পর্যটকরা সাধারণত উসুয়াইয়া সময় অনুসরণ করেন। তবে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ বা দক্ষিণ জর্জিয়া ভ্রমণের সময় তাঁরা সেখানকার স্থানীয় সময় অনুসরণ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।