১৯৬৫ সালের ২৩ নভেম্বরের পূর্ণগ্রহণ বেশ আলাদা ছিলো। বলয়গ্রহণের সময় চাঁদ আমাদের থেকে দূরে থাকে, সূর্যকে পুরোপুরি ঢাকতে পারে না। সূর্য আংটির মতো চাঁদের কালো চাকতির চারদিকে জেগে থাকে। ফলে পূর্ণগ্রহণের আবহ পাওয়া যায় না। ১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে একটি পূর্ণগ্রহণের পথ গিয়েছিল, আধুনিক সময়ে সেটাই ছিল প্রথম গ্রহণ।
বাংলাদেশের জ্যোতির্বিদ্যায় উত্সাহীরা সেটা দেখতে গিয়েছিলেন সুন্দরবনে। এরপর পূর্ণগ্রহণ হয়েছিল ২০০৯ সালের ২২ জুলাই। অনুসন্ধিত্সু চক্রের একটা বড় দলকে নিয়ে সেবার পঞ্চগড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল। সেখানে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পঞ্চগড় স্টেডিয়ামে জড়ো হয়েছিল।
সেই সকালে আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি পড়ছিল। তবু পূর্ণগ্রহণের সময় আমরা যখন সম্পূর্ণ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিলাম, সেই সময়ের আবেগ স্টেডিয়ামে উপস্থিত সবাইকে এক অনুভূতির সূত্রে আবদ্ধ করেছিল। আমরা সবাই প্রকৃতির এই চমকপ্রদ প্রদর্শনীতে সমবেতভাবে হাততালি দিয়েছিলাম। এবারও তার অন্যথা হয়নি।
আমরা নক্ষত্রের সন্তান এবং আমাদের সবার ভবিষ্যৎ যে সূর্য নামক নক্ষত্রটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেটা গ্রহণের মাহেন্দ্রমুহূর্তে যেন ক্ষণিকের জন্য হলেও বুঝতে পারি। মহাবিশ্বে এমন কিছু জিনিস আছে, যা কিনা সব ধরনের মানুষকে এক করতে পারে, পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হলো এমনই একটি ঘটনা।
আমরা এমন একসময়ে বাস করছি, যখন চাঁদের কৌণিক আকার সূর্যের কৌণিক আকারের সমান, যাতে পূর্ণগ্রহণ হতে পারে। কিন্তু জোয়ার-ভাটা ইত্যাদির কারণে চাঁদ প্রতিবছর পৃথিবী থেকে প্রায় ৪ সেন্টিমিটার দূরে সরে যাচ্ছে। এর ফলে ধীরে ধীরে গ্রহণের সংখ্যা কমবে। তবে শেষ পূর্ণগ্রহণ হতে অন্তত ৬০০ মিলিয়ন বছর থেকে ১ বিলিয়ন বছর লাগবে।
বিশেষজ্ঞরা তা-ই বলেছেন। সেটা সুদূর ভবিষ্যতে, কিন্তু সূর্যগ্রহণ সব সময়ই একটি বিরল ঘটনা—ঢাকা শহর থেকে শেষ পূর্ণগ্রহণ দেখা গিয়েছিল ১৮৯০ সালের ১৭ জুন। বাংলাদেশে আরেকটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ২১১৪ সাল পর্যন্ত। এই বিরলতাই প্রতিটি পূর্ণগ্রহণকে করেছে মূল্যবান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।