বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী হয়েও সবাই একে একে ব্যর্থ হচ্ছেন! তাঁদের ব্যর্থতার কারণ এখন স্পষ্ট বোঝা যায়। আসলে আইনস্টাইন যে সময় ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরি নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন মহাবিশ্বকে শাসন করা প্রাকৃতিক বল মাত্র দুটি বলে ধারণা করা হতো। সেগুলো মহাকর্ষ ও বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বল। কিন্তু আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর একে একে উদ্ঘাটিত হলো প্রকৃতির আরও কিছু রহস্য। দেখা হলো, মহাকর্ষ আর বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বলই শেষ কথা নয়, পরমাণুর গহিনে লুকিয়ে আছে আরও দুটি প্রাকৃতিক বল। সেগুলো হলো সবল ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল।
আবার আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হতে থাকে নিত্যনতুন কণা। তাতে একটা পুরো বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে পড়েছিল মৌলিক কণাপদার্থবিজ্ঞান। পদার্থের মৌলিক গাঠনিক উপাদান খুঁজতে অ্যাটম স্ম্যাশার দিয়ে নিউক্লিওকে ছিন্নভিন্ন করতে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কণাপদার্থবিদেরা। এসব কারণে মৌলিক কণাপদার্থবিজ্ঞান হয়ে ওঠে পরিভাষাগতভাবে পরস্পরবিরোধী। যেন একটা কসমিক জোক।
পদার্থ ও শক্তির প্রকৃতি নিয়ে দুই হাজার বছর তদন্তের পর মাত্র চারটি মৌলিক বলই যে এই মহাবিশ্বকে শাসন করছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হন পদার্থবিদেরা। প্রথম বলটি হলো মহাকর্ষ। দ্বিতীয় বলটি হলো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বা বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বল। এ বলের কারণে বিভিন্ন শহর আলোকিত হয়। আবার পুরো বিশ্বে এখন টিভি, সেলফোন, রেডিও, লেজার রশ্মি ও ইন্টারনেটে ভরে গেছে এ বলের কারণেই।
তৃতীয় বলটির নাম উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স বা দুর্বল পারমাণবিক বল। তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের জন্য দায়ী এই বল। পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে ধরে রাখার মতো দুর্বল বল যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। তাই পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে যায় বা ক্ষয় হয়। হাসপাতালে নিউক্লিয়ার মেডিসিন ভীষণভাবে এই নিউক্লিয়ার বলের ওপর নির্ভর করে। তেজস্ক্রিয় পদার্থের মাধ্যমে পৃথিবীর কেন্দ্রকে উষ্ণ রাখতেও সহায়তা করে দুর্বল বল।
অন্যদিকে পরমাণুর নিউক্লিওগুলোকে একত্রে ধরে রাখে চতুর্থ বল স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স বা শক্তিশালী পারমাণবিক বল। তাই পারমাণবিক বল ছাড়া চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেত পরমাণুর নিউক্লিও। ফলে স্বভাবতই পরমাণু ভেঙে যেত এবং আমরা যে বাস্তবতা সম্পর্কে জানি, তা চোখের সামনে থেকে স্রেফ অদৃশ্য হয়ে যেত। মহাবিশ্বের প্রায় ১০০ মৌল গঠনের পেছনে দায়ী শক্তিশালী পারমাণবিক বল।
এই চারটি বলের সবচেয়ে বিস্ময়কর ধর্ম হলো, সেগুলো প্রতিটি একে অপরের চেয়ে একেবারে আলাদা। এমনকি তাদের শক্তি ও ধর্মও আলাদা। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানমতে, মহাবিস্ফোরণের পর এই চারটি বল আসলে একটি বল হিসেবে বিরাজ করছিল। মহাবিস্ফোরণের অতি অল্প সময় পর বলগুলো একে একে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। তাই মহাবিশ্বকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে, আদিম মুহূর্তের মতো করে চারটি বলকে একত্র করে বুঝতে হবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাই চারটি বল একীভূত করে একক তত্ত্ব প্রণয়নের প্রতি এতটা জোর দেন তাঁরা।
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের দুটি প্রধান ভিত্তি আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব। প্রথমটির কাজ–কারবার বৃহৎ পরিসরের জগৎ নিয়ে, তথা মহাকর্ষ বল নিয়ে। আর কোয়ান্টাম তত্ত্বের কাজ–কারবার ক্ষুদ্র পরিসরের পরমাণুর জগৎ নিয়ে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বল, সবল ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল নিয়ে কাজ করে এই তত্ত্ব। কণাপদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলে এই তিনটি বলকে এরই মধ্যে একত্র করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সেখানে মহাকর্ষের জন্য কোনো জায়গা বরাদ্দ নেই।
তাই মোটা দাগে, থিওরি অব এভরিথিং বোঝাতে এখন পদার্থবিদেরা বোঝেন আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম মেকানিকসের মধ্যে একটা সমঝোতা, একটা গাঁটছড়া বাঁধা; যা দিয়ে একই সঙ্গে বিপুল পরিসরের মহাবিশ্ব আর ক্ষুদ্র পরিসরের পরমাণুর রাজ্যকে একসুতোয় গাঁথা যাবে। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও এখনো এতে সফল হওয়া যায়নি। আদৌ সেটি সম্ভব কি না, তা–ও বোঝা যাচ্ছে না। তবে হাল ছাড়েননি বিজ্ঞানীরা। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের ভাষায়, এমন কোনো তত্ত্ব বা সূত্র যদি আমরা শেষ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারি, তাহলে সেটিই হবে মানবজাতির চূড়ান্ত বিজয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।