আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের(আইসিসি) প্রধান কৌসুলী করিম খান হামাস ও ইসরাইল শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করার সময় আদালতের কাছে রহস্যময় এক বার্তাও দেন। তিনি আহবান জানান, আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাজে বাধা-প্রদান, ভয় দেখানো ও তাদের উপর অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করার যে কোন ধরণের চেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।না হলে এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেন।
এই প্রভাব বিস্তার ও বাধা দানের কাজ কারা করছে সেদিন তা পরিষ্কার করেননি করিম খান। তবে শীর্ষ ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ান প্রকাশিত এক দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ইসরাইল তার গোয়েন্দা, প্রযুক্তি দিয়ে কিভাবে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইসরাইল ভিত্তিক সংবাদ ম্যাগাজিন প্লাস ৯৭২, হিব্রু ভাষার গণমাধ্যম লোকাল কলের সঙ্গে পরিচালিত সেই যৌথ অনুসন্ধান দুইটি সিরিজ রিপোর্টে মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে দ্যা গ্যার্ডিয়ান। যেখানে আদালতকে সবই তো করতে গত প্রায় এক দশক ধরে ইসরাইল সরকারের চালানো এসব কর্মকা- বেরিয়ে এসেছে। প্রসঙ্গত, অবরুদ্ধ গাজা ও পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের উপর গত দশকের বিভিন্ন সময়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধ অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ উঠেছিল। এ বিষয়ে ২০২১ সালে শুরু হওয়া আইসিসির অনুসন্ধান গত সপ্তাহে শেষ হয়।এর দায়িত্বে ছিলেন আইসিসির সাবেক প্রসিকিউটর ফাতাউ বেনসুদা।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনায় উল্লেখ করে, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে আইসিসির বিভিন্ন সারির কর্মকর্তাদের সব ধরনের যোগাযোগের ওপর নজর রাখছিল। এর মধ্যে আছেন ফাতাউ বেনসুদা ও তার বর্তমান উত্তরসূরী করিম খান। দেশটির এই নজরদারি এসব আদলত সংশ্লিষ্টদের ফোন, মেইল, ম্যাসেজ, ডকুমেন্ট সব ক্ষেত্রেই বিরাজমান ছিল। গার্ডিয়ান নয় বছর ধরে নজিরবীহিন এই নজরদারিকে আইসিসির বিরুদ্ধে ইসরাইলের গোপন ‘যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছে। ইসরাইল কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের তদন্তকালীন বেনসুদা শুধু নজরদারিতেই ছিলেন না, তাকে দেয়া হয়েছিল হুমকিও। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন একাধিক গোপন বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এই প্রধান কৌঁসুলিকে হুমকি দিয়েছিলেন।
একাধিক গোপন বৈঠকে তদন্ত কাজ বাদ দেয়ার জন্য তার উপর চাপও সৃষ্টি করেছিলেন কোহেন। বেনাসুদা যাতে ইসরাইলর প্রত্যাশা মত কাজ করেন সেটি নিশ্চিতে তার সঙ্গে সমঝোতার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন নেতানিয়াহু। তার অনানুষ্ঠানিক দূত হিসেবেই সেসমত কাজ করছিলেন কোহেন। সাম্প্রতিক সময়েও এই আড়িপাতা ও হ্যাকিং অব্যহত রেখেছে ইসরাইল। ফলে চলমান সংঘাতে যুদ্ধঅপরাধ ইস্যুতে আইসিসির সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে আগেই রক্ত পেয়ে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। এখন নজরদারীর কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন করিম খান। আইসিসির কাছে তার যুদ্ধ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়ার বিষয়টি আড়িপেতে আগেই জেনে গিয়েছিল ইসরাইল। ফলে আবেদনের আগে থেকেই করিম খানের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে যুক্তরাষ্ট্র।
গার্ডিয়ানকে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, নেতানিয়াহু আইসসিতে চলমান মামলায় ব্যাপারে গোপন তথ্য জানতে এই ধরণের নজরদারিতে ব্যাপক ‘আগ্রহ’ ছিল নেতানিয়াহুর। এই গোপন কর্মকা- দেখভাল করতেন তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা। আইসিসির উপর নিখুঁত নজরদারি নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করতো গোয়েন্দা সংস্থা, সিন বেত, সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা, আমান, সাইবার ইন্টিলিজেন্স ডিভিশন, ইউনিট ৮২০০। আড়িপাতা ও হ্যাকিং থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় গোপন তথ্য শুধু সরকারের শীর্ষ মহলে প্রকাশ করা হতো। গার্ডিয়ান জানায়, নেতানিয়াহুরর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত সাবেক মোসাদ প্রধান কোহেন আইসিসি প্রসিকিউটরকে হুমকি ও প্রলুদ্ধ করার কাজে সহযোগী হিসবে পেয়েছিলেন ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলকে।
এসব তৎপরতার ব্যাপারে গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে পরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের কাছে পাঠানো প্রশ্নগুলোতে অনেক মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বিষয় রয়েছে, যা ইসরাইল রাষ্ট্রকে আঘাত করার জন্য করা হয়েছে।’ কোহেন এ বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটির কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বেনসুদার পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য করা হয়নি। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।