জুমবাংলা ডেস্ক: ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এবং বর্তমান মেয়র ফজলে নুর তাপসের মধ্যকার পুরনো বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার।
সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অনুসন্ধান চলছে তার অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার ও পরিবারের সদস্যদের আটটি ব্যাংক হিসেব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে এজন্য ফজলে নূর তাপসকে দুষলেন সাঈদ খোকন।
তার অভিযোগ হচ্ছে, ফজলে নূর তাপসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তার ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার আবেদন করেছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ খোকন নিজেই বলেছেন, এসব অ্যাকাউন্টে সাড়ে সাত কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে।
তাপসের মুখে তালা
সাঈদ খোকনের অভিযোগের কোন জবাব দেননি বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপস।
ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বিষয়টি আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংশ্লিষ্ট।
বিচারাধীন কোন বিষয়ে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস কোন ধরণের বক্তব্য বা প্রতিউত্তর দিতে নিরৎসুক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কমিশন কাজ ক্করে না।
সাঈদ খোকন কি দলের আর্শিবাদ হারিয়েছেন?
মেয়র হিসেবে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও এর পরবর্তীতে সাঈদ খোকনকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকলেও তার কোন প্রভাব বা কার্যকারিতা নেই বলে দলের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন।
সাঈদ খোকনকে এক সময় মনে করা হতো আওয়ামী লীগের উদীয়মান নেতাদের মধ্যে অন্যতম। সেজন্য তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে মেয়রও হয়েছিলেন।
তার বাবা ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষার জন্য মানবঢাল হিসেবে যারা ঘিরে রেখেছিলেন তাদের মধ্যে সাঈদ খোকনের বাবা মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অন্যতম।
অন্যদিকে ফজলে নূর তাপস শেখ হাসিনার আত্নীয়। মি. নূরকেও অনেকে মনে করেন আওয়ামী লীগের উদীয়মান নেতাদের মধ্যে অন্যতম।
খাঁটি আওয়ামী পরিবার
দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ যাই থাকুক না কেন, দুজনের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাত তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিনাত হুদা ওয়াহিদ।
“খাঁটি আওয়ামী পরিবার বলতে যা বোঝায় দুজনেই কিন্তু সে ধরণের পরিবারের সন্তান। তারা দলের জন্য স্ট্রাগল করেছেন বা স্যাক্রিফাইজ করেছেন।
”আমার মনে হয় এটার পেছনে হয়তো ব্যক্তিত্বের সংঘাত আছে, সেটিই হয়তো বিরাট কারণ,” বলেন অধ্যাপক ওয়াহিদ।
তিনি বলেন, সাঈদ খোকন মেয়র ছিলেন, হয়তো পুননির্বিচিত হবার চেষ্টা করেছিলেন।
”দেখা যাচ্ছে যে সেখানে ব্যরিস্টার তাপস চলে আসলেন। স্বাভাবিকভাবেই এখানে ব্যক্তিত্বের সংঘাত থাকতেই পারে, ” অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাথে দূরত্ব কেন?
সাঈদ খোকন মেয়র থাকার সময় দলের অনেক নেতার সাথে তার দূরত্বও তৈরি হয়েছিল বলে পর্যবেক্ষকরা বলছেন।
দু’হাজার সতেরো সালের নভেম্বর মাসে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের একটি সভাস্থলে ময়লার স্তুপ ফেলে সভাটি পন্ড করে দেয়া হয়।
সেই সমাবেশে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা যোগ দেবার কথা ছিল।
অভিযোগ উঠেছিল আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীর কিছু নেতার সাথে কোন্দলের কারণে তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশে ময়লার স্তুপ ফেলা হয়েছিল।
যদিও সাঈদ খোকন তখন বিষয়টি অস্বীকার করেছিলন।বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ হয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতারা।
ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে সমালোচনা
বছর দুয়েক আগে ঢাকা শহরে যখন ডেঙ্গুজ্বর ভয়াবগ আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল তখন সেটিকে ‘গুজব’ হিসেবে বর্ণনা করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাঈদ খোকন।
মেয়র হিসেবে প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারার কারণে গত নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়নি দল। সেই থেকে দলের সাথে তার দূরত্ব আরো বাড়তে থাকে বলে উল্লেখ করেছেন পর্যবেক্ষরা।
খোকন-তাপস বিতন্ডার সূচনা
বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে সিটি করপোরেশনের কিছু দোকন উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে।
অভিযোগ উঠে সাঈদ খোকন মেয়র থাকার সময় অবৈধভাবে বিপুল টাকা নিয়ে অনিয়ম করে সেসব দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
এনিয়ে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে একজন দোকান মালিক মামলাও দায়ের করেছিলেন।
সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন। যার ফলশ্রুতিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশনা এসেছে।
সিটি করোরেশনের অবৈধ দোকান নিয়ে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ আসে তখন ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্য সমাবেশ করে ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে পাল্টা অনিয়মের অভিযোগ আনেন সাঈদ খোকন।
তখন তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, মেয়র তাপসের মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা হস্তান্তর করেছে।
এর জবাবে মেয়র তাপস তখন বলেছিলেন, এতে কোন অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


