জুমবাংলা ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় দেশের স্বার্থই আগে বিবেচনা করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত ফেনী নদী থেকে খুব সামান্যই পানি পাবে এবং তা শুধু খাবার পানি হিসেবেই ব্যবহারের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় আমাদের নিজেদের দেশের স্বার্থটাই আগে দেখি। কাজেই এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ফেনী নদীটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদী যাতে দুই দেশেরই অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ অংশ থেকে ভারত তাদের রামগড়ের নিকটবর্তী সাবরং এলাকার জন্য সামান্য খাবার পানি নিচ্ছে, এজন্যই এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভনে তাঁর সাম্প্রতিক জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং পরবর্তীতে ভারত সফর নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন। খবর বাসসের।
এ সময় সমসাময়িক নানা বিষয়সহ ভারত বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে- মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন সংবাদ পত্র, সংবাদ সংস্থা সহ গণমাধ্যমের সম্পাদক এবং সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ি। এটা বাংলাদেশ ভারত-সীমান্তের ১১৬ কি.মি দৈর্ঘ্যরে একটি নদী। যার ৯৪ কি.মি’র অবস্থান সীমান্তে এবং ৪০ কি.মি অবস্থান বাংলাদেশে। যেটা ফেনীর সোনাগাজী হয়ে সাগরে চলে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন সীমান্তবর্তী নদীতে দুই দেশেরই অধিকার থাকে। যেমন- রাজশাহীর পদ্মা এবং মাতামুহুরি। এমন আরো ৭টি নদী রয়েছে। যেগুলো আমরা যৌথভাবে ড্রেজিংসহ নাব্যতা বৃদ্ধিতে যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা করেছি (ভারতের সঙ্গে)।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের রামগড়ের সঙ্গের একটি রাজ্য ত্রিপুরার সাবরংয়ে খাবার পানির খুব অভাব, তারা ভূগর্ভস্থ পানি তোলে। আর তাতে সীমান্তের অপর পার্শ্বে ভূগর্ভেরও পানি তোলার ক্ষতিকর প্রভাব কিন্তু আমাদের দেশেই পড়ছে।‘কাজেই ফেনী নদীর থেকে সামান্য পানি আমরা দিচ্ছি, তাঁদের খাবার পানি হিসেবে। ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি দেয়ার চুক্তি হয়েছে। এই নদীর অধিকাংশ পানিই আমরা ব্যবহার করি। আর তাঁদের একটু খাবার পানি দেয়ায় এটা নিয়ে এত চিৎকার কেন আমি জানি না।’
‘কেউ যদি খাবার পানি চায় আর আমরা সেটা না দেই তো কেমন দেখায়,’ প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন -‘আমাদেরতো আরো সীমান্তবর্তী নদী রয়েছে সেগুলোর বিষয়েও তো আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
‘এখনই এই চুক্তি বাতিল করতে হবে’ মর্মে সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বিএনপি’র বক্তব্য প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন যে, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর ’৮১ সালে তার এবং পরবর্তীতে ’৯১ সালে খালেদা জিয়ার ভারত সফরের সময় জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া উভয়ই গঙ্গার পানি চুক্তির বিষয়টি ভারতের কাছে উত্থাপনই করেননি। পরবর্তীকালে ’৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারই ঐতিহাসিক এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় ভারত সফর শেষে দেশে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন- তিনি নাকি গঙ্গার পানি চুক্তির কথাটি ভুলেই গিয়েছিলেন।’
অপর এক প্রশ্নে উত্তরে ত্রিপুরায় বাল্ক এলপিজি রপ্তানী নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের কোন স্বার্থ শেখ হাসিনা কোনদিন বিক্রি করবে, এটা হতে পারে না। এটা সবার জানা উচিত। বরং যে যে সমস্যা ছিল তাঁর প্রত্যেকটির সমাধান আমরাই করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যারা গ্যাস বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন তোলে ২০০১ সালে তারাই গ্যাস বিক্রির মুচলেখা দিয়েছিল। আমার কথা হলো, যারা এই প্রশ্ন তোলে তারা অতীতটা ভুলে যায় খুব তাড়াতাড়ি।’
শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমরা বড় আকারে বাল্কে আমদানী করে ভ্যালু অ্যাডেড করছি এবং ত্রিপুরায় রপ্তানী করছি এবং এতে আমাদের রপ্তানীর খাতায় আরো একটি আইটেম যুক্ত হলো, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলপিজি কোন প্রাকৃতিক গ্যাস নয় এবং ্এটি আমাদের দেশে উৎপন্ন হয়না। তিনি বলেন, আমরা যে ক্রুড অয়েল (অপরিশোধিত তৈল) কিনে নিয়ে আসি এটি পরিশোধের পর এর কিছুটা অংশ এলপিজি হয় এবং আমরা যে গ্যাস উত্তেলন করি সেখানে কিছু তেল আমরা পাই, যা থেকে অকটেন এবং পেট্রল হয়। এরসাথে সামান্য কিছু এলপিজি তৈরী হয়।
তাঁর সরকার প্রাকৃতিক গাসের স্বল্পতা দেখা দেওয়ায় এলএনজি আমদানী করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেজন্য রান্নাসহ অন্যান্য কাজে যাতে বোতলজাত গ্যাস ব্যহার করা যায় সেজন্য এলপিজি আমাদানী করে সিলিন্ডারে ভরে আমরা সরবরাহ করছি।
তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেসরকারী খাতে এলপিজি বোতলজাত করাকে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় আগে একটি ১০ থেকে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম দেশে ১৬শ’ টাকা করে পড়লেও এখন ৯শ’ টাকায় প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। বেসরকারী পর্যায়ে প্রায় ২৬টি কোম্পানী এই গ্যাস বোতলজাত করণের কাজ করছে এবং ১৮টি কোম্পানী উৎপাদন করছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ত্রিপুরায় যে গ্যাসটা দিচ্ছি সেটা এই বোতলজাত গ্যাস। আমরা আমদানী করছি বাল্কে, সেই গ্যাস বোতলজাত করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা কিছুটা ত্রিপুরাতেও সরবরাহ করছি, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বলছেন যে দেশের গ্যাস দিয়ে দিচ্ছে এবং এটা নিয়ে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার বিশেষ করে বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার জন্য গ্যাস রপ্তানীর চুক্তিতে মুচলেখা দিয়েছিল। একটি আমেরিকান কোম্পাীর কাছে সেটা বিক্রী করবে এবং ভারত ক্রয় করবে। কিন্তু আমি বলেছিলাম আমাদের কি পরিমাণ গ্যাস রয়েছে তা নির্ধারণ করে ৫০ বছর দেশে ব্যবহার উপযোগী গ্যাস মজুদ রা রেখে আমি গাস রপ্তানী করতে পারি না। এ কথার কারণে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি।’ এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের বাংলাদেশে আগমন এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাতে খালেদা জিয়া এবং প্রয়াত মান্নান ভূইয়া এবং প্রয়াত জিল্লুর রহমান সহযোগে তাদের বৈঠকে এই গ্যাস রপ্তানী নিয়ে মার্কিন প্রস্তাব এবং পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগের তথ্যও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি যমুনার বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি বললাম অসম্ভব, এটা আমি দিতে পারি না তখন অবস্থা এমন হলো আমি আর জিল্লুর রহমান সাহেব চলে আসলাম। আর খালেদা জিয়া থেকে গেলেন এবং তাদের মধ্যে চুক্তিটা হলো।’
তিনি এ সময় ভারতের ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে ভারী যন্ত্রপাতি আনা-নেওয়ায় সুযোগ প্রদানের শর্ত হিসেবে সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে বর্তমানে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করছে বলেও উল্লেখ করেন। আর ভেড়ামারার জন্য আমরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করছি। সর্বমোট ১৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা ভারত থেকে আমদানী করছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ত্রিপুরার সরকার এবং জনগণের সহযোগিতার কথা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে বলেন, ‘ত্রিপুরা যদি আমাদের কাছে কিছু চায় তবে সেটা আমাদের দিতে হবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা আমাদের একটা বড় শক্তি ছিল। কাজেই তাঁদের সঙ্গে সব সময়ই আমাদের একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং থাকবে।’
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে’ অংশ নিতে ৩ থেকে ৬ অক্টোবর নয়াদিল্লী সফর করেন তিনি। এ সময় দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং তিনটি যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।