জুমবাংলা ডেস্ক : সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যার ২৮ দিনের মাথায় প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে তাকে গ্রেফতারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে এসআই আকবরকে বলতে শোনা যায়- ‘আমাকে সিনিয়র অফিসার বলছিল, তুমি আপাতত পালাইয়া যাও। পরে আইসো। দুই মাস পরে মোটামুটি সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।’
বিষয়টি নিহত রায়হান আহমদের মাসহ পরিবারের সদস্যদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, আকবর পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা বলে আসছি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সহযোগিতায় সে পালিয়েছে। এ জন্যই আকবরকে গ্রেফতার করা হয়নি। আকবর আটক হওয়ার পর এখন প্রমাণিত হলো আমাদের অভিযোগ সঠিক ছিল।
তিনি বলেন, আমি চাই খুনিকে পালাতে সহায়তাকারী ওই সিনিয়র অফিসারকে চিহ্নিত করে গ্রেফতারপূর্বক কঠোর শাস্তি দেয়া হোক।
কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরকে সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে ‘সিনিয়র অফিসারের’ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আকবর যেসব জায়গায় পালিয়ে ছিল বলে জানা গেছে, সেখানে যারাই তাদের সহযোগিতা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশের কেউ যদি সহযোগিতা করে থাকে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে ব্যাখা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এটা হবে দুই প্রক্রিয়ায়। একটি হচ্ছে মামলার তদন্তের মাধ্যমে। পিবিআই এই মামলার তদন্ত করছে। তদন্তে তারা কারও সম্পৃক্ততা পেলে তাকে আইনের আওতায় আনবে। অথবা পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) স্যার যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন, ওই তদন্ত কমিটি যদি রায়হানের পালানোর সঙ্গে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা পায় তবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ১১ অক্টোবর সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদ। রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য রাতভর নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করেছে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ।
এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান শেষে ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। ১২ অক্টোবর গভীর রাতে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এর পরদিন পালিয়ে যান সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া।
ওই ঘটনার পর গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ১৪ অক্টোবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পালিয়ে যান আকবর। নোমান নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক ও স্থানীয় এক দালাল তাকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করেন বলেও গোয়েন্দা কর্মকর্তরা জানান।
তবে প্রথম থেকেই আকবরের পালানোর সঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। রায়হানের পরিবার থেকেও এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আকবর হোসেন ভূঁইয়ার পালানোর ঘটনায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কেউ জড়িত কি-না সেটি খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দফতর থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ক্রাইম অ্যানালাইসিস) মোহাম্মদ আয়ুবকে প্রধান করে তিন সদস্যের গঠিত ওই কমিটি গত ২৬ অক্টোবর তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আকবরের পালানোর জন্য মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলাকে দায়ী করা হয়।
এছাড়া ওই তদন্ত কমিটি সিলেটে এসে তদন্ত কাজ শুরু করার পর ২১ অক্টোবর আকবরকে পালাতে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে বন্দরবাজার ফাঁড়ির টু-আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকেও সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।