জুমবাংলা ডেস্ক : বেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সব বিনিয়োগ প্রচার সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কোরিয়ান ইয়াংওন করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ থেকে সর্বাধিক রপ্তানিকারক দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ইয়ংওন করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং বৈঠকে বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করে প্রধান উপদেষ্টাকে বাংলাদেশে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার আহ্বান জানান।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কোরিয়ান ইপিজেডের ভূমি সমস্যার সমাধান আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করা হবে। আমরা চাই, কোরিয়ান ইপিজেড বাংলাদেশের জন্য একটি মডেল হিসেবে দাঁড়াক। এটি বড় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে এবং বহু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
ইপিজেডে দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করে কিহাক সাং বলেন, ‘এটি অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের জন্য পথ খুলে দেবে। কোরিয়ান ইপিজেড অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি মডেল হয়ে উঠবে।’
পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম দ্রুততর করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার মতে, এই বন্দরের কর্মকাণ্ডে ধীরগতির কারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর উচ্চমানের ও ফ্যাশান পোশাকের অর্ডার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ফ্যাশান পোশাকগুলোর রপ্তানি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হয়। সেটি ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে হলে ভালো হয়। অথচ (বাংলাদেশ থেকে) উচ্চমানের ফ্যাশান পোশাকের অর্ডার পাঠাতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
এ সময় রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুত করায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিয়েতনামে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করার উদাহরণ টানেন তিনি।
বন্দরের কার্যক্রম দক্ষতর করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, চট্টগ্রামকে এ অঞ্চলের শীর্ষ বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ধারাবাহিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
এ সময় কিহাক সাং এবং ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ এ মতিন সমস্ত বিনিয়োগ প্রচার সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তাদের মতে, এটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দক্ষ ওয়ান-স্টপ পরিষেবা সরবরাহ করবে।
প্রত্যুত্তরে প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) প্রধান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনকে পাঁচটি বিনিয়োগ সংস্থাকে একটি কার্যালয়ের অধীনে আনতে বলেছেন।
এ বিষয়ে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বিনিয়োগ প্রচারের জন্য পাঁচটি ভিন্ন সংস্থা সাম্প্রতিক অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের উত্তরাধিকার। এজেন্সিগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে বিডা উদ্যোগ নিয়েছে।
সাং জানান, প্রতি বছর হাজারো বাংলাদেশে তরুণকে প্রশিক্ষণ দিতে ইয়ংওন করপোরেশন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট নির্মাণ করছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ইনস্টিটিউটটির উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টাকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
এছাড়া, ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ এ মতিন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রম আইন সহজ করা এবং সোলার প্যানেলের জন্য নেট মিটারিং পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব দেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, শ্রম আইন সংস্কারে অস্থায়ী সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এই বিষয়ে কাজ করছেন। চট্টগ্রাম বন্দরে দ্রুত রপ্তানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য সবুজ চ্যানেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
শ্রম আইন নিয়ে কিহাক সাং বলেন, ‘আমাদের স্বচ্ছ ও সহজ প্রক্রিয়া দরকার।’
পোশাক জায়ান্ট ইন্ডিটেক্সের কান্ট্রি হেড হাভিয়ের কার্লোস সান্তোনজা ওলসিনা বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সংস্কার এবং ব্যবসা করার শর্ত সহজ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই অভিভূত। এই নতুন বাংলাদেশ আমাদের প্রয়োজন। আশা করছি, এ বছর বাংলাদেশের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা পরিচালনাকারী ব্রিটিশ কোম্পানি ডিউহার্স্টের পরিচালক পল অ্যান্থনি ওয়ারেনও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.