জুমবাংলা ডেস্ক : সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের পক্ষে নয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারা বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর হুমকিধমকিতে সংস্কারপ্রক্রিয়া থেকে পিছিয়ে আসা যাবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এখন যারা তাড়াহুড়া করছে, নির্বাচনের পর তারা সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেবে, এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। সুতরাং আগে সংস্কার হবে, তারপর নির্বাচন হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘শহীদ আসাদ থেকে শহীদ আবু সাঈদ: গণ-অভ্যুত্থান থেকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের রাজনীতির রোডম্যাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভা করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে এই সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সরকারকে আমরা বলব শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর হুমকিধমকিতে সংস্কারের পরিবেশ তৈরি না করে, সংস্কারের সূচনা না করে, সংস্কারের বাস্তব রূপ না করে চলে যাবেন না।
এমন যদি হয় বাংলাদেশের জনগণ, ছাত্ররা নতুন কাউকে নিয়ে আসবে, সংস্কারের পরিবেশ তৈরি করবে এবং বাস্তবে রূপ দেবে। সুতরাং সংস্কারের বাস্তব রূপায়ণ এই সরকারকে করে যেতে হবে।’
বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে আসতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে আর কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে দেওয়া যাবে না। প্রথমে যাদের বিলোপ হতে হবে, তারা হলো ফ্যাসিবাদী পতিত আওয়ামী লীগ।
এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার রক্ষাকবচ হিসেবে আইনি ভিত্তি হিসেবে, ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখার ‘মেকানিজম’ (কৌশল) হিসেবে সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করেছে ’৭২–এর সংবিধান। এই সংবিধান দিয়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করা সম্ভব নয়। এ কারণে বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধান প্রয়োজন।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেবে, এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই বলে সভায় উল্লেখ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে এখন রাজনীতি করতে হলে বলতে হবে, ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবে?আজকে আমরা কেন বিশ্বাস করব যে ক্ষমতায় এলে (তারা) সংস্কার করবে। সুতরাং সংস্কার হবে, তারপর নির্বাচন হবে।’
সারোয়ার তুষার বলেন, সংবিধান প্রণয়নের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘ম্যান্ডেট’ আছে কি না, এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সংবিধান প্রণয়ন বা সংশোধন অন্তর্বর্তী সরকার করবে না। এই সরকার সংবিধান সংশোধন করবে, এটা একবারের জন্যও বলা হচ্ছে না।
সংবিধান সংস্কারের যে পরিবেশ প্রয়োজন, সেটা এই সরকার করে দেবে। সংবিধান প্রণয়ন কিংবা সংস্কার হবে গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
কেন গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার করতে হবে—এর ব্যাখ্যা হিসেবে জাতীয় নাগরিক কমিটির এই যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘নির্বাচিত সংসদের সংবিধান প্রণয়ন করা বা সংস্কার করার ম্যান্ডেট থাকে না।
যাঁরা ম্যান্ডেটের প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের আমরা পাল্টা বলতে চাই, আপনার ভুল করছেন। সংসদে গিয়ে আপনার কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন করা। সেটি করবেন বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে। কিন্তু যখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় নতুন একটি সংবিধান বানাতে হবে, তখন আসলে আপনাকে যেতে হবে গণপরিষদে। আমরা সেই গণপরিষদের কথা বলছি।’
সারোয়ার তুষার বলেন, গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়ন করার পরে তা আইনসভায় রূপ নেবে। অর্থাৎ সংসদে রূপ নেবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দুটি নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) থাকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর বড় তাড়াহুড়া, সে জন্য আমরা দুটি নির্বাচনের রোডম্যাপ বলিনি।
একটাই নির্বাচন হবে, সেটা গণপরিষদ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনের পরে ওই গণপরিষদই সংসদে, আইনসভায় রূপ নেবে। এটা পৃথিবীর বহু দেশে চর্চিত বিষয়। আমাদের দেশেও এটা করতে চাই। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হওয়া উচিত।’
আলোচনা সভার সঞ্চালক ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আলাউদ্দীন মোহাম্মদ। বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, সংগঠক মশিউর রহমান, ফয়সাল মাহমুদ ও প্রীতম দাশ, নির্বাহী সদস্য ইমন সৈয়দ, হাসান আলী, জয়নাল আবেদীন ও সহমুখপাত্র সালেহ উদ্দিন।
হাসিনাসহ সব বাংলাদেশিকে ভারত থেকে বের করে দেওয়ার আহ্বান শিবসেনা এমপির
সভার অন্য বক্তাদের মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির নির্বাহী সদস্য হাসান আলী বলেন, সংস্কার ও বিচার ছাড়া এই মুহূর্তে অন্য কোনো আলাপেই যাওয়া উচিত নয়। এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের একমত হওয়া উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।