জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় গতকাল রোববার রাত সাড়ে তিনটার দিকে নারীসহ এক ভ্যানচালককে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় একটি ট্রাক। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সিরাজ ছৈয়াল ও তার মেয়ে আকলিমা (১৫)। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলা সদরের বলিয়া ইউনিয়নে।
গতি বেশি থাকায় ট্রাকটিকে থামাতে পারেনি স্থানীয়রা। পরে দুই জনের লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। লাশের সঙ্গে কোনো মোবাইল কিংবা পরিচয়পত্র না থাকায় অজ্ঞাতনামা হিসেবেই লাশ দুটিকে মর্গে রাখা হয়েছিল।
অপরদিকে নিহতদের স্বজনদের সন্ধানে কাজ শুরু করে থানা পুলিশ। দীর্ঘদিন পর্যন্ত পরিচয় শনাক্ত না হলে এমন মরদেহগুলোকে সাধারণত বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই হাতের আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে লাশদুটির পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শুধুমাত্র নিহত ব্যক্তির হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে উন্নত প্রযুক্তির সফটওয়্যারের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করেছেন পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. আল-আমিন শেখ।
আজ সন্ধ্যায় দেশের জনপ্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকার অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে এসআই জানান, নিহত ব্যক্তির হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সফটওয়্যারের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এরপরেই ওই মেয়ের পরিচয় জানা যায়।
যেভাবে গ্রামে পৌঁছাল মৃত্যুর সংবাদ
পিবিআই সফটওয়্যারের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করে। তার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য হাতে পেয়ে যায়। এরপর সেই তথ্যের সূত্র ধরেই ওই এলাকার চেয়ারম্যান এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিহত সিরাজ ছৈয়াল ও তার মেয়ের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।
পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. আল-আমিন শেখ বলেন, ‘আমাদের ফিঙ্গার আইডেন্টি ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এফআইভিএস)সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে আমরা তার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য হাতে পেয়ে যাই। এরপর আমি ওই এলাকার ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সেলিমের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাকে ফোন করি। তাকে নিহত ব্যক্তির বর্ণনা বাবা-মায়ের নামসহ সব কিছু জানাই। পরে তার মাধ্যমে গ্রামে থাকা নিহত সিরাজ ছৈয়ালের মেয়ের সাথে কথা বলে তাদের বাবার মৃত্যুর বিষয়টি জানাই।’
এভাবেই অজ্ঞাতনামা সিরাজ ছৈয়ালের মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছে যায় তার নিজ গ্রামে এবং পরিবারের সদস্যদের কাছে।
কাঁচামালের ব্যবসায় প্রাণ যায় বাবা-মেয়ের
নিহত সিরাজ ছৈয়ালের মৃত্যুর সংবাদ আজ সোমবার সন্ধ্যায় তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। এরপর ঢাকার খিলগাঁয়ে থাকা নিহতদের মেয়ে জামাই মো. হানিফ মিয়া শ্বশুরের লাশ শনাক্ত করতে আদাবর থানায় হাজির হন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের মাধ্যমে গ্রামে আমার শ্বশুর বাড়িতে খবর গেছে। আমার বউ লাশ শনাক্ত করতে আমাকে থানায় যেতে বলেছে।’
তিনি আরও জানান, তার শ্যালিকা শ্বশুরের সঙ্গে কাঁচামাল ব্যবসায় সহযোগিতা করত।
যেভাবে কাজ করে এফআইভিএস( ফাইভস) সফটওয়্যার
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, এই সফটওয়্যারটির চালুর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দুই বছরের বেশি সময় লেগেছে। অটো লাইভের মাধ্যমে লাশের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত হয়।
যে ব্যক্তির বা লাশের পরিচয় শনাক্ত করা প্রয়োজন হয়, প্রথমে সফটওয়্যারের মোবাইল ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারের তার দুই হাতের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়। এরপর সংগ্রহ করা ফিঙ্গারপ্রিন্টটি সফটওয়্যারে কনভার্ট করে পিবিআই সদর দফতরে অবস্থিত ‘সেন্ট্রাল অ্যাপ্লিকেশন সার্ভারে’ প্রেরণ করা হয়।
খুব দ্রুতই পিবিআই সদর দপ্তরের ল্যাব থেকে এই ফিঙ্গারপ্রিন্টটি অটো চলে যায় নির্বাচন কমিশনে রক্ষিত ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডাটাবেজে’। সেখান থেকে মুহূর্তেই সার্চের মাধ্যমে খুঁজে বের করে ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয়, ছবি, ঠিকানাসহ সব তথ্যগুলো। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যারই জানিয়ে দেয় যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ হয়েছে। এভাবেই খুব সল্প সময়েই এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে অশনাক্ত বা অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় মেলে। সূত্র : আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।