জুমবাংলা ডেস্ক : সিলেটে ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলের জন্য পর্দা দিয়ে মন্দির ঢেকে দেওয়ার ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবিটি সত্য নয় বলে জানিয়েছে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেটে এমসি কলেজ মাঠে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিনে গত ১১ জানুয়ারি বয়ান করেন ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী। ওই মাহফিলের কারণে নিকটবর্তী গোপাল টিলা শিব মন্দির পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় শীর্ষক একটি দাবিতে কতিপয় ছবি ভারতীয় গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, সিলেটের আলোচিত মাহফিলে ড. মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর বয়ানের কারণে পার্শ্ববর্তী গোপাল টিলা শিব মন্দির কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ওই মন্দির প্রাঙ্গণে সরস্বতী প্রতীমা তৈরি করা হচ্ছে, যা কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং শিশু-কিশোরদের অযাচিত কৌতূহল এড়াতে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার আরও জানায়, এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ফেসবুকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী হাসান আল মাহমুদের অ্যাকাউন্টে সোমবার দুপুরে দেওয়া একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিগুলো সিলেটের গোপাল টিলা মন্দিরের। মূলত সরস্বতীর প্রতিমা তৈরি উপলক্ষে মন্দিরটি প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে কুয়াশায় প্রতিমাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পোস্টে হাসান আল মাহমুদ লেখেন, ওয়াজের ৩ দিন আগ থেকেই প্লাস্টিক টাঙানো হয়েছে, ওয়াজ মাহফিল শেষ হয়ে গেলেও প্লাস্টিকগুলো এখনো সেখানে আছে এবং আরও কয়েকদিন থাকবে।
এ বিষয়ে ওই মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থ মাহমুদকে জানান, আলোচিত দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যা। প্রতিমা তৈরির জন্য কারিগর নিজেই এই প্লাস্টিক টাঙিয়েছেন।
পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হাসান আল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। তখন মাহমুদ ওই মন্দিরের একাধিক ছবি এবং পূজা মণ্ডপ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের একটি ভিডিও বার্তা রিউমর স্ক্যানারকে সরবরাহ করেন। প্রদত্ত ভিডিও বার্তাতেও পূজা মণ্ডপ কমিটির সাধারণ সম্পাদককে একই কথা বলতে শোনা যায়।
গোপাল টিলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থ রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ইন্টারনেটে যে দাবিটি করা হয়েছে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না করেই ভিত্তিহীনভাবে এই কাজটি করা হয়েছে। মূলত, স্থানীয় একজন কারিগর নামমাত্র মজুরিতে সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করে আশেপাশের পূজামণ্ডপগুলোতে সেগুলো বিক্রি করেন। যেহেতু আমাদের মন্দিরে নিরাপত্তা ভালো, তাই আমরা তাকে এখানে প্রতিমা তৈরির জন্য জায়গা দিয়েছি। শীতকালের কুয়াশার কারণে প্রতিমা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং শিশু-কিশোরদের অযাচিত কৌতূহল এড়াতে কারিগর নিজেই মন্দিরের চারপাশ কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাহফিলের মাইকের কারণে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না সেটি জানতে চেয়ে বরং তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। প্রয়োজনে মাইক সরিয়েও দিতে চেয়েছেন তারা। সেখানে এমন দাবি উভয়পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর।
রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গোপাল টিলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার সঙ্গে সিলেট এমসি কলেজ মাঠে আয়োজিত মাহফিলের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং, কুয়াশায় নির্মাণাধীন সরস্বতী প্রতীমা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষার জন্য মন্দির পর্দা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার ঘটনাকে মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলের জন্য মন্দির ঢেকে দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
Get the latest Zoom Bangla News first — Follow us on Google News, Twitter, Facebook, Telegram and subscribe to our YouTube channel.