জুমবাংলা ডেস্ক: আজ ঐতিহাসিক ১১ ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির জন্য একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত যশোরে স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই জনসভায় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন। ওই জনসভায় ওয়াশিংটন পোস্ট, লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
যশোর টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এই মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’ সেদিন তিনি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ যশোরের তৎকালীন ডিসি ওয়ালি উল ইসলাম এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষালকে নির্দেশ দেন, আইনশৃঙ্খলার যেন কোনও অবনতি না হয়।
একই সঙ্গে জনতাকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।’
বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (বিএলএফ) ডেপুটি প্রধান রবিউল আলম ওই সমাবেশে ছিলেন। তিনি জানান, ‘বক্তব্যের এক পর্যায়ে তাজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘স্বাধীন এ দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’
মুক্ত স্বদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এস এইচ সানবার্গ, ওয়াশিংটন পোস্টে’র প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক।
যশোর মুক্ত দিবস: এর আগে ৬ ডিসেম্বর বিকালের মধ্যেই যশোর শহর থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। এদিন বিকালে মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে দখল নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া মহল্লায়ও চলে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল বের হয়। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরি হয় যশোর জেলা। এরপর ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যশোরে আসেন।
১১ ডিসেম্বর জনসভার বিষয়ে কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব কবিরের সঙ্গে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা বেশ উত্তেজিত ছিলাম। সকাল থেকে যশোর টাউন হল মাঠে অবস্থান করতে থাকি। নেতারা বেনাপোল দিয়ে যশোরে ঢুকে। আমরা কয়জন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ নেতাদের সার্কিট হাউসের সামনে থেকে স্বাগত জানিয়ে সভাস্থলে নিয়ে আসি। প্রথমে তাদের ‘ভুল-ভালভাবে’ গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। আমরা তখন নতুন, নিয়ম-কানুন তেমন একটা বুঝি না। তাই, কেউ কিছু মনেও করেননি।”
তিনি আরও বলেন, ‘নেতারা কী কী বলেছিলেন তা স্পষ্ট মনে করতে পারছি না। তবে, নেতারা স্বাধীন বাংলার প্রথম জেলা যশোরে এসে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। নেতারা জনসভায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশে প্রতিহিংসাপরায়ণ না হওয়াসহ কারও ক্ষতি করতে মানা করেছিলেন, প্রশাসনকে সহযোগিতা এবং সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই জনসভায় তিনি ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম, মোহাম্মদ আলী স্বপনসহ বহু সতীর্থ উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।